বুধবার, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫
বুধবার, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫
22 C
Dhaka
Homeজাতীয়বাতিলের শীর্ষে রাজনীতিকদের পাসপোর্ট

বাতিলের শীর্ষে রাজনীতিকদের পাসপোর্ট

আপডেট: জানুয়ারি ১০, ২০২৫ ৭:২২
প্রকাশ: জানুয়ারি ১০, ২০২৫ ৪:৪৪

গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর এ পর্যন্ত আট শতাধিক ব্যক্তির পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও পাসপোর্ট বাতিল হওয়াদের তালিকার শীর্ষে আছেন রাজনৈতিক নেতারা। তাদের মধ্যে হাসিনার মন্ত্রিসভার ৩৬ সদস্য, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, উপদেষ্টা এবং সাড়ে তিনশ এমপি রয়েছেন, যাদের কূটনৈতিক পাসপোর্ট (লাল পাসপোর্ট) বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুমের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এ পর্যন্ত পুলিশ, র‌্যাবসহ অন্যান্য সংস্থার ২৪ কর্মকর্তার পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য মিলেছে।

পাসপোর্ট অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, মূলত হাসিনা সরকারের আমলে যারা কূটনৈতিক পাসপোর্ট বহন করতেন, তাদের সেই পাসপোর্টগুলো বাতিল করা হয়েছে। এই তালিকায় ওই সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও উপদেষ্টা ছাড়াও বাতিল হওয়া দ্বাদশ সংসদের চিফ হুইফ, বিরোধীদলীয় নেতা ও উপনেতা, তাদের পোষ্য এবং শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ বেশ কয়েকজন আমলা রয়েছেন।

ওই সূত্রটি জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী যাদের লাল পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে, তারা সাধারণ পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে অধিদপ্তর সেই আবেদন দুটি সংস্থায় তদন্তের জন্য পাঠাবে। তদন্ত প্রতিবেদন ইতিবাচক হলে সাধারণ পাসপোর্ট ইস্যু করা হবে।

সূত্রটি আরও জানায়, আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুম ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ মোট ৯৭ জনের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। তাদের মধ্যে গুম ও হত্যার সঙ্গে জড়িত ২২ জন এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অভিযুক্ত ৭৫ জন রয়েছেন। তাদের ক্ষেত্রে লাল পাসপোর্টের বিপরীতে সাধারণ পাসপোর্টের জন্য আবেদনের সুযোগ থাকছে না। কারণ, তাদের পাসপোর্ট পুরোপুরি বাতিল করা হয়েছে।

পাসপোর্ট অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, লাল পাসপোর্টের বাইরে অনেকের সাধারণ পাসপোর্ট এবং সরকারি পাসপোর্টও বাতিল করা হয়েছে। গুম-খুনে অভিযুক্ত এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলায় জড়িত অনেকের বিষয়ে বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত করছে। তদন্ত শেষ হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের পাসপোর্ট বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তাই পাসপোর্ট বাতিলের প্রক্রিয়াটি থেমে নেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এরই মধ্যে সাবেক স্পিকার ও তার স্বামীসহ কয়েকজন সাধারণ পাসপোর্টের আবেদন করেছেন। তবে যাচাই শেষে সেই আবেদন স্থগিত করা হয়েছে। অন্যদিকে, দুটি তদন্ত সংস্থার ইতিবাচক তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদের একজন স্বতন্ত্র এমপিকে সাধারণ পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে। সাবেক ওই এমপি দেশের একজন বড় ব্যবসায়ী।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, হাসিনা সরকারের সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নামে ইস্যু করা বিশেষ প্রাধিকারভুক্ত লাল পাসপোর্ট বাতিল এবং সংরক্ষিত ডাটা জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া বাতিল পাসপোর্ট ব্যবহার করে তারা যাতে দেশত্যাগ বা তৃতীয় কোনো দেশ ভ্রমণ করতে না পারেন, সে বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নজরদারির নির্দেশনা রয়েছে।

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ৩ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের পাসপোর্ট বাতিল ও অন্য কোনো দেশ ভ্রমণে কড়াকড়ি আরোপের বিষয়ে বলা হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত হওয়ায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ওই সংসদের কূটনৈতিক পাসপোর্টের প্রাধিকারভুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীবর্গ, প্রতিমন্ত্রীবর্গ, উপমন্ত্রী, চিফ হুইপ, সংসদ সদস্য, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, উপনেতা, উপদেষ্টা পদমর্যাদার ব্যক্তিবর্গের অনুকূলে ইস্যুকৃত কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। উক্ত বাতিল পাসপোর্ট ব্যবহার করে যাতে কেউ বাংলাদেশ থেকে বিদেশে বা বিদেশ থেকে তৃতীয় কোনো দেশে ভ্রমণ করতে না পারেন, সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্র জানায়, লাল পাসপোর্টে কড়াকড়ির কারণে হাসিনা সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সদস্য এবং দ্বাদশ সংসদে আওয়ামী লীগের ২২৩ এমপি ছাড়াও সংরক্ষিত আসনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ৪৮ নারী এমপিসহ জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শীর্ষ নেতারাও বিপাকে রয়েছেন।

গুমে জড়িত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২৪ জনের পাসপোর্ট বাতিল: সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গত বছরের ১৮ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে পাসপোর্ট অধিদপ্তর ও পুলিশের বিশেষ শাখায় পাঠানো একটি চিঠিতে বলা হয়, গুম-সংক্রান্ত ‘কমিশন অব ইনকোয়ারি’র অনুরোধ অনুযায়ী কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তার প্রাথমিকভাবে গুমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্তের প্রয়োজনে ওই কর্মকর্তারা যাতে দেশ ছাড়তে না পারেন, সেজন্য ২৪ জন কর্মকর্তার তালিকা দিয়ে তাদের পাসপোর্ট বাতিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওই তালিকায় শেখ হাসিনার আমলে দায়িত্ব পালন করা প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক একাধিক মহাপরিচালক, র্যাবের বিভিন্ন ব্যাটালিয়নে দায়িত্ব পালন করা অধিনায়ক ও সদর দপ্তরের সাবেক কর্মকর্তারা রয়েছেন।

এদিকে, পাসপোর্ট বাতিল করার আগেই ভারতে চলে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশটির সরকার ট্রাভেল ডকুমেন্ট দিয়েছে বলে জানা গেছে, যা ব্যবহার করে তিনি চাইলে বিশ্বের যে কোনো দেশে ভ্রমণ করতে পারবেন। পাসপোর্ট বাতিল হওয়াদের তালিকায় থাকা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি বাহাউদ্দিন নাছিম, সাবেক মন্ত্রী ও দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, সাবেক এমপি শামীম ওসমানসহ অনেকেই এরই মধ্যে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন বলে জানা গেছে।

পুলিশের ইমিগ্রেশন সূত্র জানায়, বিদেশে পলাতকদের মধ্যে অনেকেই ৫ আগস্টের আগে দেশ ছেড়েছেন। কেউ কেউ বৈধ ইমিগ্রেশন পার না হয়ে অবৈধ পথে পালিয়েছেন। তাই পলাতকদের সুনির্দিষ্ট তালিকা নেই। তবে যাদের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে, তারা কেউ বৈধ পথে দেশ ছাড়তে পারেননি।

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় খবর