আল কোরআনের মহান আল্লাহ বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন ঘটনার বর্ণনা করেছেন। মুসলমানদের পূর্বকার বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন ঘটনাও জানিয়ে দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে এমন একটি ঘটনা রয়েছে যেটিকে স্বয়ং আল্লাহ বিজয় বলে ঘোষণা করেছেন।
ঘটনাটি ষষ্ঠ হিজরির। এ বছর এক হাজার ৪০০ জন সাহাবিকে নিয়ে ওমরা পালনের জন্য মক্কার দিকে অগ্রসর হন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। কিন্তু হুদাইবিয়া নামক স্থানে কুরাইশরা তাদের বাধা দেয়।এরপর দুপক্ষে আলোচনা শুরু হয়। কুরাইশদের পক্ষ থেকে আসে সুহাইল বিন আমর। সেখানে যে চুক্তি হয়, সেটিই ঐতিহাসিক হুদাইবিয়ার সন্ধি নামে পরিচিত। চুক্তিতে বলা হয়, দুপক্ষ দশ বছর নিজেদের মধ্যে কোনো যুদ্ধে জড়াবে না। শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে জীবনযাপন করবে। চুক্তি অনুযায়ী কাবা শরিফ জিয়ারত না করে রাসুল (সা.) ও তার সাহাবিদের মদিনায় ফিরে আসতে হয়।
চুক্তির পর কুরাইশরা মুসলমানদের সঙ্গে ওঠাবসা এবং ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করার সময় মুসলমানদের সততা ও চারিত্রিক পবিত্রতা লক্ষ্য করে।
সুরা ফাতহের ২৯ নম্বর আয়াতে সাহাবিদের কয়েকটি গুণের উল্লেখ রয়েছে। এসব গুণের কথা তাওরাত ও ইঞ্জিলেও আছে। গুণগুলো হলো : ১. তারা কাফেরদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর, ২. নিজের সম্প্রদায়ের প্রতি সহমর্মী, ৩. রুকু-সিজদায় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে নিয়োজিত, ৪. তাদের চেহারায় সিজদার চিহ্ন দীপ্তিমান, ৫. তাদের দৃষ্টান্ত মাটি থেকে নির্গত কিশলয়ের মতো যা হৃষ্টপুষ্ট হয়ে কাণ্ডের ওপর দৃঢ়ভাবে উঠে দাঁড়িয়ে কৃষকের জন্য আনন্দের কারণ হয়।কাবা শরিফ জিয়ারত না করাসহ চুক্তির কয়েকটি ধারায় আপাতদৃষ্টিতে মুসলমানদের দুর্বল বলে মনে হয়। কিন্তু আল্লাহ একে ফাতহুম মুবিন বা সুস্পষ্ট বিজয় বলে ঘোষণা দেন। এই বক্তব্য কিছু মুসলমানের তখন বোধগম্য হয়নি। কারণ ঘটনাটি ঘটেছিল ষষ্ঠ হিজরিতে। আল আল্লাহ মুসলমানদের বিজয় দান করেছিলেন অষ্টম হিজরিতে।
অর্থাৎ পরবর্তী পরিস্থিতি প্রমাণ করে প্রকৃতপক্ষেই চুক্তিটি ছিল সুস্পষ্ট বিজয়। হুদাইবিয়ার সময় মুসলমানর সংখ্যা ছিল ১,৪০০। এর মাত্র দুবছর পরই অষ্টম হিজরিতে মক্কাবিজয়ের সময় রাসুল (সা.)-এর নেতৃত্বাধীন বাহিনীতে মুজাহিদের সংখ্যা হয় দশ হাজার। শান্তিচুক্তির ফলে এ বিপ্লব সাধিত হয়েছিল।