মঙ্গলবার, জুলাই ১, ২০২৫
মঙ্গলবার, জুলাই ১, ২০২৫
27.5 C
Dhaka
Homeবাংলাদেশডাক্তার নেই, রোগী দেখেন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা

ডাক্তার নেই, রোগী দেখেন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা

প্রকাশ: ডিসেম্বর ৮, ২০২৪ ৩:৪৮

৫১ শতাংশ জমির ওপর গড়ে উঠেছে আধুনিক ও সুসজ্জিত ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র। মা ও শিশুদের চিকিৎসার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা আছে সেখানে। প্রায় ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হয় সরকারি হাসপাতালটি।কিন্তু উদ্বোধনের পর থেকে এখন পর্যন্ত সেখানে নেই কোনো চিকিৎসক। রোগী দেখেন একজন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা। চিকিৎসক ও অন্যান্য জনবল না থাকায় মানসম্পন্ন চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এলাকাবাসী।

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মল্লিকপুর ইউনিয়নের করফা গ্রামে অবস্থিত এ হাসপাতালটি। উপজেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত হাসপাতালটি। এটি উপজেলার একমাত্র মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের আওতাধীন এ হাসপাতাল। ২০২৩ সালের ১৫ অক্টোবর সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ হাসপাতালটি উদ্বোধন করেন।

উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদের পৈত্রিক ভিটায় তার বাবার নামে ওই হাসপাতালের নামকরণ করা হয়েছে ‘অধ্যাপক শেখ মো. রোকন উদ্দিন আহমেদ ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র’। এটি নির্মাণ করতে ব্যয় হয়েছে ৫ কোটি ৬৬ লাখ ৮৯ হাজার ৮৭২ টাকা। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (এইচইডি) তত্ত্বাবধানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ‘প্রোপার্টি ডেভলপমেন্ট লিমিটেড’ এটি বাস্তবায়ন করে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, লোহাগড়া-ইতনা সড়কের পাশে মধুমতী নদীর পাশ ঘেঁষে মনোরম পরিবেশে গড়ে উঠেছে হাসপাতালটি। এখানে আছে দুটি তিনতলা ভবন। এর একটি হাসপাতাল ভবন, আরেকটি ডরমিটরি। হাসপাতাল ভবনে রয়েছে পাঁচ শয্যা করে ১০ শয্যার দুটি ওয়ার্ড ও চারটি কেবিন। আছে আধুনিক অস্ত্রোপচার কক্ষ। সেখানে অন্তঃসত্তা নারীদের সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার করার সব ব্যবস্থা আছে। নরমাল ডেলিভারির ব্যবস্থা আছে আলাদা কক্ষে। চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য সুসজ্জিত কক্ষ রয়েছে। আছে আধুনিক আল্ট্রাসনোগ্রাম যন্ত্র। আছে ফার্মেসি ও স্টোর কক্ষ। রোগীদের অপেক্ষার জন্য রয়েছে বিশ্রামাগার ও ব্রেস্ট ফিডিং কক্ষ। মাল্টিপারপাস মিলনায়তনও আছে। আছে বিদ্যুৎ, সৌর প্যানেল ও আধুনিক জেনারেটর।

হাসপাতালটিতে প্রতিদিনই রোগী আসে। এর মধ্যে নারী রোগীই বেশি। পুরুষ রোগীরাও আসেন সাধারণ চিকিৎসা নিতে। এ তথ্য জানিয়ে কর্মরত পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা রহিমা খাতুন জানালেন, তিনি এবং অফিস সহায়ক মো. নাসিরউদ্দিন শুধু এখানে কর্মরত। আর কোনো কর্মী এখানে নেই। তারা দুজনই অন্য ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে এখানে প্রেষণে (ডেপুটেশন) নিযুক্ত।

রহিমা খাতুন জানালেন, প্রতিদিন গড়ে ৬০-৭০ জন রোগী এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। এর মধ্যে সাধারণ রোগী তথা জ্বর, কাশি, ঠান্ডা নিয়ে আসেন অনেকে। শিশু রোগী ছিল আট জন ও একজন অন্তঃসত্তা নারী।

রহিমা খাতুন বলেন, যেসব রোগী এখানে আসে, তাদের টুকিটাকি চিকিৎসা ও ওষুধ আমিই দেই। বেশি সমস্যা যেসব রোগীর তাদের উপজেলা বা জেলা হাসপাতালে যেতে বলি। রোগীরা জানতে চায় বড় ডাক্তার কবে আসবে?

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ হাসপাতালে পদ আছে ১০টি। এর ২ জন মেডিকেল অফিসার, ১ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব), ১ জন ফার্মাসিস্ট, পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা ৪ জন, ১ জন অফিস সহকারী ও অফিস সহায়ক ১ জন। এর সবগুলো পদ হাসপাতালটি চালু হওয়ার পর থেকেই শূন্য রয়েছে।

ষাটোর্ধ্ব রোকেয়া বেগম মল্লিকপুর থেকে এসেছিলেন ঠান্ডা কাশি ও জ্বরের চিকিৎসা নিতে। তিনি বলেন, বাড়ির কাছে এত বড় হাসপাতাল, তার বোলে ডাক্তার নাই। দেহি এ ওষুধ খাইয়ে জ্বর সারে কি না। গরীব মানুষ টাহা নাই, সেজন্যি নড়াল লোহাগড়া ডাক্তার দেহাতি যাতি পারিনে।চিকিৎসা নিতে এসে এভাবেই হতাশা ব্যক্ত করেন আশালতা (৭০) ও আবু শেখসহ (৯৫) অন্য রোগীরা।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য এমদাদ মল্লিক বলেন, আমাদের ধারণা ছিল এত টাকা ব্যয়ে নির্মিত হাসপাতাল থেকে অনেক ভালো মানের চিকিৎসাসেবা পাবে এলাকাবাসী। চিকিৎসক ও অন্যান্য জনবলের অভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এলাকার মানুষ। তাই দ্রুত চিকিৎসক ও অন্যান্য জনবল নিয়োগ দেওয়া হোক।

লোহাগড়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ বলেন, ‘আধুনিক অবকাঠামো ও উপকরণে সুসজ্জিত এমন হাসপাতাল অনেক উপজেলা সদরেও নেই। এক বছর আগে চালু হয় হাসপাতালটি। এ পর্যন্ত এখানে কোনো চিকিৎসক ও অন্যান্য জনবল পদায়ন করা হয়নি। একজন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা ও একজন অফিস সহায়ক অন্য ইউনিয়ন থেকে এনে কোনো রকম কাজ চালানো হচ্ছে। তাই এত টাকায় নির্মিত হাসপাতাল থেকে এলাকাবাসী সেবা পাচ্ছেন না।’

 

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় খবর