বুধবার, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫
বুধবার, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫
27 C
Dhaka
Homeবাংলাদেশবায়ুদূষণে বিপর্যস্ত ঢাকা ছিটানোর পানিও নেই

বায়ুদূষণে বিপর্যস্ত ঢাকা ছিটানোর পানিও নেই

আপডেট: ডিসেম্বর ১৪, ২০২৪ ৩:০২
প্রকাশ: ডিসেম্বর ১৪, ২০২৪ ১১:০৭

ধুলায় আচ্ছন্ন সড়ক। যানবাহন চললেই চারদিকে সমানে উড়ছে ধুলাবালু। আশপাশ দেখে চলাচলই কঠিন। রাজধানীর মেরাদিয়া এলাকায় পথ চলতে ধুলার আস্তরণ পড়ে যাচ্ছে শরীরে। বিবর্ণ হয়ে পড়েছে আশপাশের গাছের পাতাও। ধুলা থেকে বাঁচতে সড়কে নাক চেপে চলছেন অনেকে। পরনের শার্ট নাকে চেপে দৌড়ে সড়ক পার হতে দেখা গেল জুলফিকার আলী নামে এক ব্যক্তিকে। তিনি বলেন, এত ধুলা! দম বন্ধ হয়ে আসে। শ্বাস ফেলার মতো অবস্থা থাকে না। কানের ভেতর চুলকাচ্ছে। কাজের জন্য আসতে হয় এখানে। না হলে আসতাম না।

ডেমরা-রামপুরা সড়ক সংস্কার কাজের ধীরগতির কারণে এমন ভোগান্তি দেড় মাস ধরে। খোলা জায়গায় ফেলে রাখা হয়েছে নির্মাণসামগ্রী। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের বায়ুদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০২২ অনুযায়ী, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাকে নির্মাণস্থলে সব সামগ্রী ঢেকে রাখতে হবে, সেখানে অন্তত দিনে দুইবার পানি বা ধুলাবালু নিয়ন্ত্রণকারী রাসায়নিক ছিটাতে হবে এবং নির্মাণসামগ্রীর পরিবহন ঢেকে চালাতে হবে। আইন থাকলেও প্রয়োগ নেই।

তেজগাঁওয়ের নাখালপাড়া এলাকায় রেললাইন সম্প্রসারণ কাজে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। বাতাস ধুলায় ভরে গেছে। এর মধ্যেই চলাচল করছেন স্থানীয়রা। আব্দুল্লাহপুরে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প এলাকাতেও একই অবস্থা। সাভার থেকে শ্যামলী, মহাখালী থেকে টঙ্গী, মিরপুর থেকে পুরান ঢাকা—পুরো রাজধানী এখন ধুলার রাজ্য। গাড়ি চললেই উড়ছে ধুলা।

সাভারের বাসিন্দা শাহরিয়ার হোসেন নিয়মিত আরিচা মহাসড়ক হয়ে ঢাকায় আসেন। ওই মহাসড়কে সেতু তৈরির কাজ চলছে, বালুর ট্রাকও চলে ওই রাস্তা দিয়ে। ফলে হেমায়েতপুর থেকে গাবতলী পর্যন্ত ব্যাপক ধুলা উড়তে থাকে। তিনি বলেন, আমার শুধু এটুকু পথের জন্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হয়, এর পরও কাশি-হাঁচি হয়। বাসের সবাই কাশতে থাকে। দম বন্ধ হয়ে আসে।এমন অবস্থায় আড়াই কোটি মানুষের এই নগরে এখন বুকভরে শ্বাস নেওয়াই কঠিন। কয়েকদিন ধরে মেগাসিটি ঢাকা বায়ুদূষণে বিশ্বসেরার তকমা লাগাচ্ছে। দুই সিটি করপোরেশন দূষণ রোধে মাঠে নেই। রাস্তায় ছিটানো হচ্ছে না পানি। দূষণে দায়ী যানবাহন কিংবা ইটভাটা চলছে সমানে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারি সংস্থাগুলোর দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই। বায়ুদূষণ নিয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের ভাষ্য, সবাই সমস্যার কারণ জানেন, সমাধানের পথও জানা। তবু সমাধান নেই। বায়ুদূষণের সংকট যে মাত্রায় সংক্রমিত হয়েছে, এখনই রাশ না টানলে বিপর্যয় অনিবার্য।

ঢাকা ও আশপাশের এলাকার বায়ুমান (একিউআই) অস্বাস্থ্যকর থেকে ঝুঁকিপূর্ণ দশায় ঘুরপাক খাচ্ছে। ঘরের বাইরে গেলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের অতিপ্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিকদের এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

দিন যত যাচ্ছে, ঢাকার বায়ুদূষণ ততই বাড়ছে। গত নভেম্বরে ঢাকা নগরীতে বায়ুদূষণ ছিল গত আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। নভেম্বরে এক দিন বায়ুর মান ছিল মাঝারি প্রকৃতির, চার দিনের বায়ুর মান ছিল সতর্কতামূলক, ১২ দিনের বায়ুমান ছিল অস্বাস্থ্যকর এবং ১৩ দিনের বায়ুর মান ছিল খুবই অস্বাস্থ্যকর। চলতি ডিসেম্বরেও ঢাকার বায়ুর অবস্থা অনেক নাজুক। গত ১২ দিনে এক দিনও ঢাকার বায়ুর মান ভালো ছিল না। বরং ৫ ডিসেম্বর বায়ুর মান ছিল চলতি বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আইকিউএয়ারের বাতাসের মানসূচকে সেদিন সকাল ৯টার দিকে ঢাকার স্কোর ছিল ৩৪১। ওইদিন টানা প্রায় ৯ ঘণ্টা বাতাসের মান ৩০০-এর বেশি ছিল। গত সোমবারও ভোর ৪টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত টানা প্রায় পাঁচ ঘণ্টা বায়ুর মান ৩০০-এর ওপরে ছিল।

বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে, ঢাকার আশপাশের এলাকায় প্রায় ২০ হাজার ট্রাক বালু, ইট, সিমেন্ট, নির্মাণ এলাকার মাটি, পাইলিংয়ের কাদামাটি, রেডিমিক্স কংক্রিট পরিবহন করে। এসব ট্রাক গাবতলী, আমিনবাজার, মোহাম্মদপুর, বছিলা, আবদুল্লাহপুর, শ্যামপুর, পোস্তগোলা, পাগলা, ডেমরা, সারুলিয়া, কাঁচপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বালু ও অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চলাচল করে। গাবতলীতে সরেজমিন দেখা গেছে, নির্মাণসামগ্রীবাহী ট্রাকের অবাধ চলাচল। বালুবাহী একটি ট্রাক থেকে বালু বাতাসে উড়ছে।

২০২০ সালের জানুয়ারিতে হাইকোর্ট বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে যে ৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছিলেন, তার মধ্যে নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, পানি ছিটানো এবং খোঁড়াখুঁড়ির ক্ষেত্রে দরপত্রের শর্ত মানার বিষয়গুলো ছিল। সেগুলো মানা হয় না। মানাতে তেমন কোনো পদক্ষেপও দেখা যায় না। নির্দেশনা দেওয়ার পর ২০২০ সালের নভেম্বরে আদালত তা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন। চার বছর পেরিয়ে গেলেও মাঝে মাঝে সড়কে পানি ছিটানো ও সভা-সেমিনার ছাড়া আর কোনো কিছু করতে দেখা যায়নি।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ৫ নভেম্বর বায়ুদূষণের উৎস নিয়ন্ত্রণ, বায়ুমান মনিটরিং ব্যবস্থা উন্নত করা এবং আইন প্রয়োগের প্রক্রিয়া শক্তিশালী করতে জাতীয় বায়ুমান ব্যবস্থাপনা কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। মোটরযান মালিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকায় পুরোনো মোটরযান নিষিদ্ধ করতে গত ২৪ অক্টোবর ছয় মাস সময় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ২০২৫ সাল নাগাদ সব সরকারি নির্মাণে পোড়ানো ইটের ব্যবহার বন্ধ করতে এরই মধ্যে সরকারি অফিসে চিঠি দিয়েছে পরিবেশ মন্ত্রণালয়। পরিবেশ ছাড়পত্র না থাকা ৩ হাজার ৪৯১ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ঢাকার বায়ুদূষণ কমাতে সরকার বড় অঙ্কের টাকা খরচ করেও নগরবাসীকে নির্মল বায়ুতে শ্বাস নেওয়ার সুযোগ দিতে পারেনি। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, বায়ুদূষণ রোধে সরকার ২০০০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দুটি প্রকল্পে অন্তত সাড়ে ৬ কোটি মার্কিন ডলার খরচ করেছে, যা বর্তমানে প্রায় ৭২০ কোটি টাকার সমান। এর বাইরে ছোট ছোট কিছু প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। বিশ্বের প্রভাবশালী সাময়িকী ল্যানসেটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এ ধরনের প্রকল্পে প্রায় ২০০ কোটি ডলারের অর্থায়ন পেয়েছে বাংলাদেশ, যা বর্তমান বিনিময় মূল্যে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার সমান। প্রকল্প নেওয়ার আগে বলা হয়েছিল, দেশের বায়ুমান খারাপ। প্রকল্পের মাধ্যমে বায়ুকে নির্মল করা হবে। অথচ বিশ্বের শীর্ষ দূষিত বায়ুর শহরগুলোর তালিকায় ওপরের দিকেই থাকে ঢাকা।

ঢাকার আমেরিকান দূতাবাস থেকে পাওয়া ২০১৬ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত রাজধানীর ৯ বছরের বায়ুমান সূচকের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করেছে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। সংস্থাটি বলছে, ৯ বছরের হিসাবে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির বায়ু সবচেয়ে বেশি অস্বাস্থ্যকর থাকে।

ক্যাপসের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকারি সংস্থাগুলো, বিশেষ করে পরিবেশ অধিদপ্তরের সক্ষমতা এখনো তৈরি হয়নি। সতর্কবার্তা দিতে বছরের পর বছর অধিদপ্তরকে বোঝানো হলেও গত মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো মন্ত্রণালয় থেকে এ বার্তা দেওয়া হয়েছে। শুধু সতর্কবার্তা দিতে যে সংস্থার এক যুগ লেগেছে, তারা বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে মোটেও প্রস্তুত নয়।

তিনি বলেন, নির্মাণকাজ, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, ইটভাটা, শিল্পকলকারখানা থেকে দূষণ হচ্ছে। এগুলো স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীন। পরিবেশ অধিদপ্তর এই মন্ত্রণালয়গুলোকে সমন্বয় করতে পারত। তারা এই কাজটি করতে এখন পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে। দূষণের পেছনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ভূমিকা অনেক বেশি। ঢাকা শহরে এখন স্থানীয় উৎসগুলো থেকে বায়ুদূষণ সবচেয়ে হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের অনুমোদন নিয়েই রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, নির্মাণকাজ করা হচ্ছে। রাতে নগরের রাস্তাঘাট ঝাড়ু দেওয়ায় দূষণ হচ্ছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিক না থাকায় বর্জ্য পোড়ানো হচ্ছে। সিটি করপোরেশন এগুলো তদারকিও করতে পারছে না। যে কারণে ঢাকার বায়ুদূষণের জন্য এক-তৃতীয়াংশ দায় সিটি করপোরেশনের।

ধরিত্রী রক্ষায় আমরার (ধরা) সদস্য সচিব শরীফ জামিল বলেন, বছরের বেশিরভাগ সময়জুড়ে বায়ুদূষণে বিশ্বের প্রথম পাঁচটি স্থানের মধ্যে থাকছে বাংলাদেশ। এটি নতুন নয়। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে খসড়া নির্মল বায়ু আইনকে পাশ কাটিয়ে একটি অধ্যাদেশ প্রণয়নের মাধ্যমে সমন্বিত পদক্ষেপের সব সম্ভাবনা আগেই হিমঘরে পাঠিয়েছে গত সরকার। তারা কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র, জাহাজভাঙা শিল্পসহ যেসব শিল্প দূষণ ছড়ায়, সেগুলো বাড়িয়েছে। তিনি বলেন, বায়ুদূষণের জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা ও রোডম্যাপ থাকা দরকার। একটি শক্তিশালী নির্মল বায়ু আইন করে তা জনস্বার্থে নির্মোহভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর ৮০ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে, বায়ুদূষণের কারণে সবচেয়ে বেশি বিষণ্নতায় ভুগছেন ৬৫ বছর কিংবা তার চেয়ে বেশি বয়সীরা। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, বাংলাদেশে ২০১৯ সালে বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় ৭৮ থেকে ৮৮ হাজার মানুষ মারা গেছে।

বায়ুদূষণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুসহ সব বয়সী মানুষের অ্যাজমা, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন ধরনের শ্বাসতন্ত্রের রোগ পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। দুই মাস আগেও শ্যামলীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট টিবি হাসপাতালের আউটডোরে দিনে গড়ে ২০০ থেকে ৩০০ রোগী চিকিৎসা নিতেন। এখন তা বেড়ে ৫০০ হয়েছে। ইনডোরে বর্তমানে ভর্তি আছেন ১০০ রোগী, অন্যান্য সময় যা অনেক কম থাকে। শ্যামলীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট টিবি হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার বলেন, সিজন পরিবর্তন, বায়ুদূষণ বেড়ে যাওয়ায় এখন হাঁচি-কাশি ও অ্যাজমার রোগী অনেক বেড়ে গেছে।

বায়ুদূষণের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, বায়ুদূষণে তিন ধরনের ক্ষতি হয়—তাৎক্ষণিক, মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি। তাৎক্ষণিক ক্ষতির মধ্যে আছে শ্বাসতন্ত্রীয় রোগগুলো। হাঁচি, কাশি, হাঁপানি—এসব রোগ যাদের আছে, সেগুলো বেড়ে যায়। অ্যালার্জি বেড়ে যায়। ফাঙ্গাল ইনফেকশন জাতীয় রোগগুলো বাড়ে। ফুসফুসের প্রদাহ বাড়ে, নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা বাড়ে। মধ্যমেয়াদে এই অসুখগুলো বাড়তে বাড়তে ফুসফুসের সম্প্রসারণ ও প্রসারণ ক্ষমতা কমে যায়। বায়ুদূষণের মূল কারণ যে ক্ষুদ্রকণা, সেগুলো ফুসফুসের রন্ধ্রগুলো ছোট করে দেয়। পাশাপাশি রক্তে মিশে লিভার ও কিডনি অকার্যকর করে। দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার প্রধান শঙ্কা হচ্ছে ফুসফুসের ক্যান্সার।

জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ুমান ব্যবস্থাপনা শাখার পরিচালক মো. জিয়াউল হক বলেন, সিটি করপোরেশন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে চিঠি দিয়ে অবহিত করছেন তারা। মূল কাজ তো শুধু একটা মন্ত্রণালয়ের নয়, অনেক মন্ত্রণালয় এখানে যুক্ত আছে। সমন্বয়ের কাজ করার জন্য পরিবেশ উপদেষ্টা চেষ্টা করছেন। সংশ্লিষ্ট অন্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাদের ডিও লেটার দিয়েছেন তিনি।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম বলেন, বায়ুদূষণ রোধে আমরা পানি ছিটাচ্ছি। দূষণের উৎসগুলো কমানোর চেষ্টা করছি। দীর্ঘমেয়াদে বায়ুদূষণ কমাতে পদক্ষেপ নিচ্ছে সিটি করপোরেশন। একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে, সেই কমিটিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খায়রুল বাকের বলেন, আমাদের ৫ হাজার লিটারের চারটি এবং ৭ হাজার লিটারের পাঁচটি পানি ছিটানোর গাড়ি আছে। কিন্তু পানির স্বল্পতার কারণে প্রয়োজন অনুযায়ী ছিটানো সম্ভব হচ্ছে না। ওয়াসা প্রতিদিন যথেষ্ট পানি সরবরাহ করে না, আর খাল বা নদীর দূষিত পানি ব্যবহার করা যায় না।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে একটি টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা আগামী বর্ষাকাল পর্যন্ত কাজ করবে। এ ছাড়া কিছু এলাকা ‘নো ব্রিকফিল্ড জোন’ ঘোষণা করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বায়ুদূষণ রাতারাতি সমাধান সম্ভব নয়; তাই জনগণকে মাস্ক ব্যবহারে উৎসাহিত করা হচ্ছে। তিনি জানান, আগামী ছয় মাসের মধ্যে পুরোনো গাড়ি অপসারণ করা হবে এবং রাজধানীতে খোলা ট্রাক প্রবেশ ঠেকাতে পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

 

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় খবর