বুধবার (১৯ নভেম্বর) খান ইউনুসের দক্ষিণে কিজান আন-নাজ্জার এলাকায় হামলায় ওই ব্যক্তি নিহত হন। এর আগে, খান ইউনুসের পূর্বে বানি সুহেইলায় ড্রোন হামলায় এক নারী ও তার শিশু সন্তান গুরুতর আহত হয়।
এতে করে যুদ্ধবিরতির পর থেকে ইসরায়েলের প্রায় ৪০০টি লঙ্ঘনের ঘটনায় মোট ২৮০ জন নিহত এবং ৬৫০ জনের বেশি আহত হলেন।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় অর্জিত ১০ অক্টোবরের যুদ্ধবিরতির পর অব্যাহত ইসরায়েলি হামলা বন্ধে তারা ট্রাম্প প্রশাসন, মধ্যস্থতাকারী দেশগুলো ও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
তাদের দাবি, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতির শর্ত ও মানবিক প্রটোকল মানতে বাধ্য করতে হবে।
এর মধ্যেই সোমবার (১৭ নভেম্বর) জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ যুক্তরাষ্ট্রের খসড়া করা একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে—যা ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার অংশ। প্রস্তাবে গাজায় একটি অস্থায়ী প্রশাসন গঠন ও আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী মোতায়েনের কথা বলা হয়েছে, যার লক্ষ্য ফিলিস্তিন রাষ্ট্রগঠনের ‘বিশ্বস্ত রূপরেখা’ তৈরি করা।
১৩-০ ভোটে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়; রাশিয়া ও চীন ভোটদান থেকে বিরত থাকে।
ট্রাম্প বলেন, ‘জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিকভাবে আমার শান্তি পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে এবং ‘বোর্ড অব পিস’ গঠনের পথ খুলে দিয়েছে।’
তিনি সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকেও (এমবিএস) এই বোর্ডে যুক্ত হওয়ার আমন্ত্রণ জানান।
প্রস্তাব অনুযায়ী, এই বোর্ড নিরাপত্তা, জনসেবা এবং পুনর্গঠনের দায়িত্ব পালন করবে এবং এর মেয়াদ চলবে ২০২৭ সালের শেষ পর্যন্ত।
গাজা সিটি থেকে আল জাজিরার হানি মাহমুদ জানান, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের চেয়ে গাজার বাসিন্দারা এখন প্রতিদিনের বেঁচে থাকার লড়াই নিয়েই বেশি চিন্তিত।
হানি মাহমুদ বলেন, ‘মানুষ সকালে ঘুম থেকে উঠে চিন্তা করছে, কীভাবে বাচ্চাদের জন্য পরিষ্কার পানি যোগাড় করবে। পরবর্তী বৃষ্টিতে কোথায় আশ্রয় নেবে—এটাই তাদের ভাবনা।’
গাজার পূর্ব অংশের অনেক এলাকা এখন ‘হলুদ অঞ্চল’—অর্থাৎ সম্পূর্ণ ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণাধীন। এসব এলাকায় ঘরবাড়ি, জীবিকা, বসতি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। সেখানে বাড়িঘর দেখতে গেলে ইসরায়েলি সেনারা গুলি চালাচ্ছে।
মাহমুদ বলেন, ‘মানুষ চায় সহিংসতার অবসান, ক্রসিংগুলো খুলে দেওয়া এবং পর্যাপ্ত খাদ্য ও পানি সরবরাহ।’
যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী প্রতিদিন গাজায় ৬০০ ট্রাক সহায়তা ঢোকার কথা থাকলেও বাস্তবে তা অনেক কম। জাতিসংঘ সতর্ক করেছে—গাজার খাদ্যসংকট এখনো বিপর্যয়কর।
ট্রাম্প দাবি করেছেন, গাজার মানুষ ‘ঘরে ফিরে বেশি নিরাপত্তা পাচ্ছে’—তবে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)-এর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
ফিলিপ লাজারিনি বলেন, ‘গাজার জনগণ রোগ, বাস্তুচ্যুতি ও তীব্র অভাবের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। সহায়তা পর্যাপ্ত নয়, খাদ্যের দাম এত বেশি যে তা মানুষের নাগালের বাইরে।’
ফিলিপ আরও সতর্ক করেন: ‘শীত আসছে—বৃষ্টি, ঠান্ডা আর আশ্রয়ের সংকট গাজার মানুষের কষ্টকে আরও বাড়িয়ে দেবে। টিকে থাকতে হলে ক্রসিংগুলো খুলতে হবে।’


