আজ মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।
ডা. জাহিদ বলেন, গত ২৭ নভেম্বর থেকে বেগম খালেদা জিয়া সিসিউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এভারকেয়ার হাসপাতালে বেগম খালেদা জিয়াকে ডাক্তাররা যে চিকিৎসা দিচ্ছিন, তিনি তা গ্রহণ করতে পারছেন।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত এ চিকিৎসক বলেন, বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য বিভিন্ন জায়গায় দেখার প্রেক্ষিতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সার্বক্ষণিকভাবে ওনার চিকিৎসার তদারকি করছেন। চিকিৎসার বিষয়ে তিনি দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সঙ্গে আমাদের মাধ্যমে যোগাযোগ করছেন।
ডা. জাহিদ হোসেন আরও বলেন, সারা পৃথিবীর মানুষের দোয়ার কারণে এ যাত্রায় বেগম খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে আমরা আশা করি।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত এ চিকিৎসক বলেন, আমার আপনাদের (সাংবাদিকদের) মাধ্যমে আহ্বান জানাব, আপনারা কোনো ধরনের গুজবে কান দিবেন না। দলের পক্ষ থেকে, পরিবারের পক্ষ থেকে নির্ধারণ করা আছে- কীভাবে আমরা আপনাতে তথ্য দিবো। কাজেই আপনারা ধৈর্য ধরুন। দীর্ঘ ছয় বছর যাবৎ আপনারা যেভাবে আমাদের পাশে ছিলেন, আশা করছি সেভাবে আগামীতেও আমাদের সহযোগিতা করবেন।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও আপনাদেরকে ধৈর্য্য ধারণ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন বলে জানান ডা. জাহিদ হোসেন।
এদিকে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সহায়তার জন্য চীনের পাঁচ সদস্যের একটি মেডিকেল টিম এভারকেয়ার হাসপাতালে এসেছে গতকাল সোমবার (১ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে। হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, বিদেশি চিকিৎসকেরা বর্তমানে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা তদারকিতে থাকা দেশি ও বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। মেডিকেল বোর্ড মনে করছে খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থার প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত বিশেষজ্ঞ মতামতের প্রয়োজন আছে।
এর আগে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশি ও বিদেশি চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে হাসপাতাল এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এভারকেয়ার হাসপাতালের প্রবেশ পথ এবং আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য জানাতে সোমবার বিএনপির পক্ষ থেকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে দেশবাসীর কাছে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া চাওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, বেগম খালেদা জিয়াকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ (ভিআইপি) ঘোষণা করেছে সরকার। একইসঙ্গে তিনি নিরাপত্তার জন্য বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) পাবেন। সোমবার (১ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার যেকোনো প্রয়োজনে ভারত সহায়তা করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন তিনি। সোমবার রাতে নরেন্দ্র মোদি এক্সে এক পোস্টে এসব কথা বলেছেন। পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে পেরে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তিনি অনেক বছর ধরে বাংলাদেশের জনগণের জন্য অবদান রেখেছেন। তাঁর দ্রুত আরোগ্য লাভের জন্য আমাদের আন্তরিক প্রার্থনা ও শুভকামনা রইল। আমরা যেভাবে পারি, আমাদের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সকল ধরনের সহায়তা দেওয়ার জন্য ভারত প্রস্তুত রয়েছে।’
গত রোববার (২৩ নভেম্বর) থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি আছেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ফুসফুসে ইনফেকশন ধরা পড়ায় তার অবস্থা সংকটময় বলে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়। এরপর বৃহস্পতিবার থেকে খালেদা জিয়াকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নিয়ে চিকিৎসকরা নিবিড়ভাবে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন।
এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত একটি মেডিকেল বোর্ডের অধীনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে। এই বোর্ডে তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমান, যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাজ্যের লন্ডন ক্লিনিকের চিকিৎসকরাও রয়েছেন।
লন্ডন থেকে বেগম জিয়ার জ্যেষ্ঠ ছেলে তারেক রহমান সর্বক্ষণ মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগে সমন্বয় করছেন।


