বুধবার, ডিসেম্বর ৩, ২০২৫
বুধবার, ডিসেম্বর ৩, ২০২৫
23 C
Dhaka
Homeস্বাস্থ্যএইডস চিকিৎসায় নতুন এক চিকিৎসা পদ্ধতিতে আশার আলো

এইডস চিকিৎসায় নতুন এক চিকিৎসা পদ্ধতিতে আশার আলো

প্রকাশ: ডিসেম্বর ৩, ২০২৫ ৭:৫৫

একবার এইডস হলে এ থেকে পুরোপুরি সেরে ওঠার কোনো চিকিৎসা এখনও পর্যন্ত চিকিৎসকদের কাছে নেই। তবে নতুন এক চিকিৎসা পদ্ধতিতে এ মারণ রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দেখা যাচ্ছে আশার আলো। 

এইডস একেবারে সেরে যাবে, এ কথা বলার সময় এখনও আসেনি। তবে শরীরে মারণ রোগ নিয়ে ওষুধ নাখেয়েও সুস্থ আছেন ৭ জন রোগী। এইডস হলে যে নির্দিষ্ট থেরাপি নিতে হয়, এই মুহূর্তে তাও নিতে হচ্ছে না তাদের। এটা সম্ভব হয়েছে এক বিশেষ ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতির কারণে।

যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষকেরা এইডসের চিকিৎসায় নতুন এক থেরাপি নিয়ে গবেষণা করছেন। পরিচিত কিছু ওষুধের বদলে তারা মূলত ‘কম্বিনেশন থেরাপি’ শুরু করেছেন।

গবেষকেরা জানিয়েছেন, এইডসে আক্রান্ত দশ জনকে নিয়ে পরীক্ষা চলছে। তাদের প্রতিষেধক, ইমিউন-অ্যাকটিভ ওষুধ ও ‘ব্রডলি নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডি’ (বিএনএবিএস) নির্দিষ্ট ডোজে দেওয়া হয়েছে। তবে কী ধরনের ওষুধ ও অ্যান্টিবডি ব্যবহার করা হয়েছে, তার নাম এখনও জানাননি গবেষকেরা।

তারা বলেছেন, এই ‘কম্বিনেশন থেরাপি’-র পরে দেখা গেছে, রোগীদের আর কোনো ওষুধ খেতে হয়নি। যাদের অবস্থা সঙ্কটজনক ছিল, তাদের আলাদা করে আর কোনো থেরাপি নিতেও হয়নি। এভাবে ১৮ মাস অতিক্রান্ত হয়েছে এবং ওষুধ ছাড়াই সুস্থ রয়েছেন রোগীরা।

এইডসে আক্রান্ত হলে মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। আর সেই কারণেই অন্যান্য জীবাণুঘটিত রোগ খুব সহজেই শরীরে বাসা বাঁধে। এর মধ্যে টিউবার কিউলোসিস বা যক্ষ্মা, বিভিন্ন ছত্রাকঘটিত রোগ, যেমন ক্রিপ্টোকক্কাস, ক্যানডিডা অন্যতম। একই সঙ্গে স্নায়ুঘটিত কিছু রোগ এবং বিশেষ ধরনের কিছু টিউমারও দেখা দিতে থাকে রোগীর শরীরে।

এইচআইভি সংক্রমণ মূলত তিনটি ধাপে হয়। প্রথম ধাপ, অ্যাকিউট স্টেজ বা অ্যাকিউট রেট্রোভাইরাল সিনড্রোম; যা সংক্রমণের ৩ থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে হয় এবং নিজে থেকেই ২-৪ সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায়। এতে সাধারণত, জ্বর বা সর্দি-কাশির মতো সমস্যা দেখা যায়।

দ্বিতীয় ধাপ, ক্লিনিক্যাল ল্যাটেন্সি বা ক্রনিক স্টেজ। এই স্টেজে সাধারণত সংক্রমণের কোনো লক্ষণ সে ভাবে শরীরে প্রকাশ পায় না।

তৃতীয় এবং শেষ ধাপ হলো এইডস। এই পর্যায়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভেঙে পড়ে। সেই সময় শরীরে নানা সংক্রমণ ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। একই সঙ্গে প্রাণঘাতী নানা লক্ষণ প্রকাশ পায়। এইচআইভির যে চিকিৎসা বর্তমানে রয়েছে, তার নাম অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল থেরাপি (এআরটি)। এর মাধ্যমে রোগীকে অনেক দিন বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব।

তবে গবেষকেরা জানাচ্ছেন, নতুন চিকিৎসাটি করার পরে দেখা গেছে, এআরটি করার আর প্রয়োজন পড়েনি। এটি ছাড়াই এক বছরের ওপর সুস্থ আছেন রোগীরা। নতুন চিকিৎসা যদি সকলের ক্ষেত্রেই কার্যকরী হয়, তা হলে এইডস নির্মূল করার লক্ষ্যে আরও কিছুটা অগ্রসর হওয়া যাবে বলেই আশা রাখা হচ্ছে।

সময়ের ঘড়ি টিকটিক করে ২০০৫ সাল শেষ করে ২০২৫ সাল পার হতে চলেছে। এ সময়ের মধ্যে যে ৬০ লাখ লোকের চিকিৎসার প্রয়োজন। তাদের মাত্র ৪ লাখ লোকের চিকিৎসা চলছে। সূত্র বলছে, এন্টিরেট্রো ভাইরাল ওষুধ এইচআইভির চূড়ান্ত চিকিৎসা নয়। ওষুধ প্রতিরোধ ক্ষমতা, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এবং উপযুক্ত বিতরণ পদ্ধতি খুঁজে বের করা এখনো উদ্বেগের বিষয় রয়ে গেছে। যেমন এগুলো রয়ে গেছে শিল্পোন্নত বিশ্বে। তবে বিনা চিকিৎসায় ৫০ লাখের বেশি মানুষ শিগগিরই মারা যাবে, অকালে বেদনাদায়কভাবে এবং তাদের পরিবার, সমাজ ও বিশ্বব্যাপী মানব উন্নয়নের জন্য চড়া মূল্য দিয়ে।

 

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় খবর