শনিবার (২৬ অক্টোবর) বিকেল ৪টায় ঢাকা কলেজের শহীদ আ ন ম নজিব উদ্দিন খান খুররম অডিটরিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলনে এ আলটিমেটাম দেওয়া হয়। পাশাপাশি নিজ নিজ ক্যাম্পাসে তিন দিনের কর্মসূচি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
কর্মসূচিগুলো : রোববার নিজ নিজ ক্যাম্পাসে গ্রাফিতি অঙ্কন, সোমবার সব কলেজে প্রত্যেক বিভাগে গণসংযোগ কর্মসূচি এবং মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থী সাবরিনা সুলতানা বলেন, ২০১৭ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে রাজধানীর সরকারি সাত কলেজকে ঢাবির অধিভুক্ত করা হয়। তবে এ সিদ্ধান্ত ছিল সম্পূর্ণ অপরিকল্পিত। ফলে যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে নিয়ে এ কলেজগুলোকে অধিভুক্ত করা হয়েছিল, সেটা বিগত ৮ বছরেও অর্জন করা সম্ভব হয়নি। এক কথায় শিক্ষার মানের উন্নতির পরিবর্তে ঢাবি প্রশাসনের বৈষম্যমূলক বিভিন্ন নীতি ও প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে শিক্ষার্থীরা শিক্ষার যথাযথ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা এখন সাত কলেজের সমন্বয়ে একটি স্বায়ত্তশাসিত বা স্বতন্ত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি তুলেছেন।
তিনি বলেন, দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে আমরা শিক্ষা উপদেষ্টা, বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কর্তৃপক্ষের কারও থেকেই কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া পাইনি। তাদের এমন নিশ্চুপ অবস্থান আমাদের রাস্তায় নামতে বাধ্য করেছে।
তিনি আরও বলেন, স্বতন্ত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আমরা সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা গত ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকা কলেজে আয়োজিত সাত কলেজের সমস্যার চিত্র তুলে ধরি। নানা সমস্যা তুলে ধরতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি জানিয়েছি। এরপর একই দাবি জানিয়ে ২৫ সেপ্টেম্বরে শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাবি উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমদ খান ও ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এসএমএ ফায়েজকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। একই স্মারকলিপি কলেজগুলোর অধ্যক্ষদেরও দিয়েছি।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের এ শিক্ষার্থী বলেন, এরপর গত ২২ অক্টোবর আমরা সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা রাজধানীর নীলক্ষেত ও সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করি। দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত এ অবরোধ কর্মসূচি চলে। বিকেলে সায়েন্সল্যাব থেকে ৩ দফা দাবি জানিয়ে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয়। সে সঙ্গে সেদিনের মতো কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সাত কলেজের একাডেমিক ও প্রশাসনিক সমস্যা নিরসনে ১৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। কমিটিকে আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে প্রয়োজনীয় সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সাবরিনা বলেন, আমরা শিক্ষার্থীরা প্রাথমিকভাবে এ কমিটি গঠনের উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি। তবে এ কমিটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে কিছুই উল্লেখ নেই। কার্যপরিধিতে সংস্কারের কথা থাকলেও মূলত এখন আর কোনো সংস্কার চাচ্ছি না। আমরা এখন সাত কলেজের সমন্বয়ে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবির আন্দোলনে রয়েছি। এখানে আমাদের দাবির সঙ্গে তাদের কার্যপরিধি সাংঘর্ষিক। তাই আমরা তাদের এ কমিটির লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে বেশ শঙ্কিত। এমন বাস্তবতায় কমিটির মোটিভ আর কমিটিতে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি না থাকায় ১৩ সদস্যের এ কমিটিকে আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। এখানে শিক্ষার্থীদের দাবির কোনো ধরনের প্রতিফলন ঘটেনি।
সাত কলেজ সংস্কারের এ প্রতিনিধি বলেন, আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলে দিতে চাই, অনতিবিলম্বে সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর কমিশন গঠন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় গঠন কাঠামো ভালো বোঝেন, এমন নিরপেক্ষ শিক্ষাবিদ এবং বুদ্ধিজীবীদের বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনে প্রাধান্য দিতে হবে। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং শিক্ষার্থীদের পালস বোঝেন, এমন শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের কমিশনে যুক্ত করতে হবে। শিক্ষার্থী বিমুখ কোনো একপাক্ষিক সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, আমাদের দাবি ও আন্দোলনের যৌক্তিকতা অনুধাবন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা আমাদের শুক্রবার ঢাবিতে ডেকে নেন। সেখানে ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমাদের সাত কলেজ শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র প্রতিনিধিদের সামনে আমরা আমাদের দাবির বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরি। তারা আমাদের অবস্থান বুঝতে পেরে এ আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা জানান। পরবর্তীতে যে কোনো পদক্ষেপে তারা আমাদের সমর্থনের আশ্বাস দেন।
সাবরিনা সুলতানা বলেন, আমরা তাদের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের ১৩ সদস্যের কমিটির বিষয়টি নিয়েও আলোচনা করেছি। এ কমিটির বিষয়ে আমরা আমাদের অবস্থান জানিয়েছি। আমরা তাদের সরকারের সমন্বয়ে ‘সংস্কার’ কমিটির পরিবর্তে ‘বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর কমিশন’ গঠন করতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছি। তাদের কমিশনের কাঠামো সম্পর্কেও জানিয়েছি। এসব দাবি বাস্তবায়নে আমরা তাদের আগামী তিন কার্যদিবস সময়ের কথা বলেছি। এর মধ্য দাবি বাস্তবায়ন না হলে আগামী মঙ্গলবার আমরা আমাদের পরবর্তী করণীয় ঠিক করব।
আরেক সমন্বয়ক সজীব হোসেন বলেন, তিতুমীরের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী সাত কলেজের আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে যৌক্তিক আন্দোলনে রয়েছে। বাকি ৩০ শতাংশ আলাদাভাবে আন্দোলন করছে।
ঢাবি অধিভুক্ত কলেজগুলো হলো- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ এবং সরকারি তিতুমীর কলেজ।