ইন্দোনেশিয়ার বালির আদলে কক্সবাজারকে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এরই অংশ হিসেবে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের গেটওয়ে হিসেবে সমুদ্র-শহরের বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা হচ্ছে। কিন্তু বিদেশিদের জন্য আলাদা ব্যবস্থাপনা না থাকায় লক্ষ্য পূরণ করতে পারবে না বিমানবন্দরটি। এমনটি জানিয়ে অংশীজনরা বলছেন, বিগত সরকারের ভুল নীতি থেকে বেরিয়ে দরকার সমন্বিত পদক্ষেপ। পাশাপাশি বিদেশিদের জন্য আলাদা জোন করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
বিশ্ব পর্যটনের অন্যতম আকর্ষণীয় স্পট ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপ। প্রকৃতির সঙ্গে মিলিয়ে তৈরি করা হয়েছে দারুণ সব অ্যামিউজমেন্ট পার্ক। বালির আদলে সমুদ্র-শহর কক্সবাজারকে গড়ে তুলতে চায় বাংলাদেশ।
প্রকল্পটি ঘিরে নানা অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও এরই মধ্যে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের গেটওয়ের নির্মাণযজ্ঞ শেষের দিকে। তবে কেন আসবে কক্সবাজারে বিদেশি পর্যটক? সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা না থাকার প্রেক্ষাপটে সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন- শুধু কি সাগর দেখতেই অর্থ খরচ করতে আসবেন বিদেশিরা?
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক মো. কামরুল ইসলাম বলেন, কক্সবাজারে শুধু বিমানবন্দর বা হোটেল-মোটেল থাকলেও এটি একটি ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশন হয়ে গেছে, বলার সুযোগ নেই।
বিগত সরকার অংশীজনদের সঙ্গে কোনো আলোচনা-পর্যালোচনা ছাড়াই এককেন্দ্রিক এয়ারপোর্ট উন্নয়ন প্রকল্প নিয়েছে বলেও অভিযোগ পর্যটন সংশ্লিষ্টদের। পর্যটন বিশেষজ্ঞ তৌফিক রহমান বলেন, যারা বাংলাদেশে বিদেশিদের পছন্দ-অপছন্দের বিষয়গুলো জানে, তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয়নি।
কক্সবাজারে কোন ধরনের পর্যটক আসবে, বিদেশিদের জন্য আলাদা জোন তৈরি, বালুকাময় সৈকত কীভাবে সাজানো হবে, সেসব গবেষণায় আধুনিকতা, সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ও টেকসই ব্যবস্থাপনায় জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোয়েব-উর-রহমান বলেন, পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সাবেক পরিচালক নাফিস ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব হলে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত শুধু বালি নয়, পৃথিবীর যে কোনো সৈকতের চেয়ে সুন্দর হবে।
ট্যুরিজম বোর্ড কক্সবাজারের উন্নয়নে মাস্টার প্ল্যান করলেও নতুন করে ডিজাইনিংয়ে হাত দিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), জানান পর্যটন বোর্ড সিইও। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের বলেন, পুরো এলাকাটি পর্যটকদের যাতায়াতের জন্য সুন্দরভাবে তৈরি করতে পরিকল্পনা মাস্টার প্ল্যানে রাখা হয়েছে। এরমধ্যেই কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কাজ শুরু করেছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, কক্সবাজারকে যতটা বহুমুখী অর্থনৈতিক কারবারে সংযোগ করা যাবে, ততই দেশের অর্থনীতিতে যোগ হবে বিদেশি মুদ্রা, পরিবর্তন আসবে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে।