জাপানে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। নতুন বছরের প্রথম দিনে দেশটিতে আঘাত হানা শক্তিশালী এই ভূমিকম্পে নিহত মানুষের সংখ্যা ৫৫ জনে পৌঁছেছে বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।
এছাড়া নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বুধবার (৩ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সোমবারের শক্তিশালী ভূমিকম্পের জেরে জাপানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫৫ জনে পৌঁছেছে। উদ্ধারকারীরা বেঁচে যাওয়াদের সন্ধানে বুধবারও মরিয়া হয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছেন।
গত সোমবার জাপানের ইশিকাওয়া অঞ্চলটি ছিল ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল, যার ফলে সমুদ্রে বড় বড় ঢেউয়ের সৃষ্টি হয় এবং বহু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্থানীয় সময় ৪টা ১০ মিনিটে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। ভূমিকম্পটি হোনশু দ্বীপের নোটো প্রদেশে আঘাত করলে সেখানকার কর্মকর্তারা উপকূলীয় এলাকার লোকজনকে উঁচু জায়গায় সরে যাওয়ার আহ্বান জানান।
এই ভূমিকম্পে সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও অজানা, তবে বেশ কয়েকটি শহরে বহু ভবন ধসে পড়েছে এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে বেশ কিছু মানুষ আটকাও পড়েছেন।
এএফপি বলছে, ইশিকাওয়া অঞ্চলের নোটো প্রদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে। সেখানে শত শত বিল্ডিং আগুনে পুড়ে গেছে এবং ঘরবাড়ি মাটিতে মিশে গেছে। আঞ্চলিক সরকার মঙ্গলবার রাতে জানিয়েছে, ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ৫৫ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে এবং আরও ২২ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।
তবে আফটারশক এবং খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে ধ্বংসস্তূপে অনুসন্ধান চালিয়ে যাওয়ায় নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে উদ্ধারকারীরা। ৩১ হাজার ৮০০ জনেরও বেশি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন বলেও জানিয়েছে তারা।
জাপানের আবহাওয়া সংস্থা (জেএমএ) নোটো এলাকায় ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে। এই পরিস্থিতিতে সেখানে উদ্ধার অভিযান আরও জোরদার করা হয়েছে।
অন্যদিকে উপকূলীয় শহর সুজুর মেয়র মাসুহিরো ইজুমিয়া বলেছেন, ‘সেখানকার প্রায় কোনও বাড়িই আর দাঁড়িয়ে নেই’। তিনি বলেন, ‘শহরের প্রায় ৯০ শতাংশ বাড়ি সম্পূর্ণ বা প্রায় সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে… পরিস্থিতি সত্যিই বিপর্যয়কর।’
শিকা শহরের আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা এক নারী টিভি আশাহিকে বলেছেন, আফটারশকের কারণে তিনি ‘ঘুমাতে পারছেন না’। তিনি বলেন, ‘আমি ভয় পাচ্ছি। কারণ আমরা জানি না যে পরবর্তী ভূমিকম্প কখন আঘাত হানবে।’
এদিকে ইশিকাওয়া প্রিফেকচারে প্রায় ৩৪ হাজার পরিবার এখনও বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছে বলে স্থানীয় ইউটিলিটি সেবাদাতা সংস্থা জানিয়েছে। অনেক শহরে পানি সরবরাহও বন্ধ হয়ে গেছে।
প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে কয়েক হাজার লোক আটকে থাকার পরে শিনকানসেন বুলেট ট্রেন এবং মহাসড়কগুলো পুনরায় চালু করা হয়েছে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, জাপানের হোনশু দ্বীপের ইশিকাওয়া প্রিফেকচারে আঘাত হানা ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৭.৫।
তবে জাপানি কর্তৃপক্ষ এই কম্পনকে ৭.৬ মাত্রার বলে অভিহিত করেছে। দেশটি বলেছে, গত সোমবার থেকে জাপানে ২১০টিরও বেশি ভূমিকম্প হয়েছে।
উল্লেখ্য, জাপান প্রতি বছর শত শত ভূমিকম্পের সম্মুখীন হয়ে থাকে এবং দেশটির জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই এতে কোনও ক্ষতির শিকার হয় না। তবে ২০১৮ সাল থেকে নোটো উপদ্বীপ অঞ্চলে ভূমিকম্পের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে গত বছর জাপান সরকারের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।