জাতীয় পার্টিতে (জাপা) চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করেছেন দলটির ঢাকা মহানগর উত্তরের ১০টি থানার ছয় শতাধিক নেতাকর্মী। একই সঙ্গে নতুন করেইঙ্গিত দেয়া হয়েছে জাতীয় পার্টি ব্রাকেটবন্দি করার।
বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এই গণপদত্যাগের ঘোষণা দেন জাপার ঢাকা মহানগর উত্তরের সদ্য বহিষ্কৃত আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম সেন্টু।
অনুষ্ঠান শুরুর আগে একে একে স্বাক্ষর করে পদত্যাগ করছেন তারা। এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করছেন কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম পাঠান। এতে আরও যোগ দেন বহিষ্কৃত প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, বহিষ্কৃত ভাইস চেয়ারম্যান সিলেট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াহ হিয়া চৌধুরী, রিসার্চ অ্যাণ্ড ডেভেলপমেন্ট কমিটির সদস্য শাহীন আরা সুলতানা রিমাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম পাঠন বলেন, অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আপনারা নিশ্চয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন পূর্বাপর জাতীয় পার্টির পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত আছেন। জাতীয় পার্টিতে বর্তমানে যিনি চেয়ারম্যান পদে অধষ্ঠিত আছেন-সেই জিএম কাদের এক বছর আগে থেকেই বলে আসছেন, জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচন করবে। একইভাবে তিনি বক্তৃতা বিবৃতি এবং মিডিয়ায় কথা বলে এসেছেন। সরকারের বিরুদ্ধে গরম গরম কথা বলে নিজেকে বিরোধী নেতা হিসেবে জাহির করার চেষ্টাও করেছেন। আমরাও তার প্রতি আস্থাশীল হয়ে উঠেছিলাম। কিন্তু নির্বাচনের আগে আমরা বুঝতে পারলাম তিনি গোপনে সরকারের সাথে আঁতাত করে নিজের স্বার্থরক্ষার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত পার্টির চেয়ারম্যান এবং মহাসচিব ৩০০ আসন থেকে প্রার্থী মনোনীত করার পর মাত্র ২৬টি আসনে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ছাড় পাবার বিনিময়ে গোটা পার্টিকেই বিক্রি করে দিয়েছেন। ফলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির চরম ভরাডুবি হয়েছে। আর সমঝোতা করে চেয়ারম্যান ও মহাসচিবসহ মাত্র ১১ জন প্রার্থী নির্বাচনে এমপি হয়ে এসেছেন।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় পার্টির নিবেদিত প্রাণ নেতাকর্মী ও সমর্থকরা চেয়ারম্যান এবং মহাসচিবের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান পার্টির তৃণমূল পর্যায় থেকে পার্টিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবার জন্য চেয়ারম্যান এবং মহাসচিবের পদত্যাগের দাবি ওঠে। পার্টির এই দুরবস্থার মধ্যেও চেয়ারম্যান সেচ্ছাচারিতার নিকৃষ্ট উদাহরণ সৃষ্টি করে পার্টির নিবেদিত প্রাণ নেতাদের একের পর এক অব্যাহতি দিয়ে চলেছেন। তিনি পল্লীবন্ধু এরশাদের নাম নিশানা মুছে দেওয়ার হীন চক্রান্ত করে যাচ্ছেন। চেয়ারম্যান জিএম কাদের পার্টির নেতাকর্মীদের প্রতিবাদের ভাষা বুঝতে না পেরে প্রতিহিংসাবশত পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ। প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায়, প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং ঢাকা মহানগর উত্তরের সংগ্রামী আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম সেন্টু এবং ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহিয়া চৌধুরীকে পার্টি থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। এছাড়াও কয়েকজন নেতাকে মৌখিকভাবে অব্যাহতির কথা জানিয়ে দিয়েছেন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আপনারা জানেন বিগত সময়ে সারাদেশে করোনা মহামারির সময় আমাদের ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক সফিকুল ইসলাম সেন্টুর নেতৃত্ব ঢাকা মহানগরের ২৫টি থানা ও ৫৪টি ওয়ার্ড সম্মেলন সম্পূর্ণ করতে সক্ষম হয়েছি। আর সেই ত্যাগি নেতাকে কোনো রকম কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান না করে সরাসরি অব্যাহতি দিয়েছেন। যাহা শিষ্টাচার বহির্ভূত। এই অবস্থায় আমরা এরশাদ প্রেমিক নেতাকর্মীরা জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন তার বিপর্যন্ত সংগঠনে অবস্থান করে প্রাণপ্রিয় নেতা পল্লীবন্ধু এরশাদের প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টির ধ্বংস দেখতে চাই না। তাই আমরা জিএম কাদেরের সংগঠন থেকে আজ গণপদত্যাগের ঘোষণা করছি। একই সাথে আপনাদের কাছে এই অঙ্গীকারও করে রাখছি-অল্প সময়ের ব্যবধানে আমরা পল্লীবন্ধু-এরশাদের চেতনা প্রেরণা ও নীতি আর্দশ বাস্থবায়নের জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকবো। সত্যের পথে আমাদের বিজয় সু-নিশ্চিত। ইনশাআল্লাহ!