নির্বাচনোত্তর দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে হাইকমান্ড। এর অংশ হিসেবে রমজানজুড়ে দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার তাগিদ দেওয়া হয়েছিল। একই সঙ্গে দল-মত নির্বিশেষে পুরো জাতি এবং গণতন্ত্রকামী সব দলকেও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি নেতারা। তাদের প্রত্যাশা, এই ঐক্যের মধ্য দিয়েই আগামীর আন্দোলনে তাদের বিজয় অর্জিত হবে।
ঈদুল ফিতরের পর এবার শিগগির যুগপতের শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি চূড়ান্ত করবে বিএনপি। এরপর সংসদ বাতিল করে নতুন নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে সক্রিয় হবে দলটি।
জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, সরকার বিএনপি ও আমাদের দলের নেতাদের নির্বাচনে নিতে কম চেষ্টা করেনি। তবে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকার কারণে তাদের সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। রমজানজুড়ে দেশব্যাপী ইফতার মাহফিলে ঐক্যের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। এখানে বহুবিধ ঐক্যের কথা বলা হয়েছে। দলের অভ্যন্তরীণ ঐক্য যেমন রয়েছে, তেমনি স্বজন-বন্ধু তথা যুগপতের শরিকদের সঙ্গে ঐক্যও রয়েছে। ২৮ অক্টোবরের পর বিএনপির নেতাকর্মীদের এক ভাগ কারাগারে, আরেক ভাগ কারাগারের বাইরে আন্দোলনে এবং অন্য ভাগ সন্তর্পণে আন্দোলন এড়িয়ে তথা আত্মগোপনে ছিলেন। ফলে একটা ভুল বোঝাবুঝির আশঙ্কা থেকেই যায়। কিন্তু আমরা তখন প্রত্যেকেই কোনো না কোনো সমস্যায় ছিলাম। তাই ভুল বোঝাবুঝিটা যাতে বিস্তৃত না হয় এবং আন্দোলনরত শরিক দলগুলোও যাতে আচমকা কোনো বিষয়ে আমাদের সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ না করে, আমরাও যেন কোনোভাবে তাদের দোষারোপের মধ্যে না যাই; সেজন্য বারবার ঐক্যের কথা বলা হয়েছে।
সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে বিএনপিসহ যুগপতের মিত্ররা এক বছরের বেশি সময় ধরে আন্দোলন করলেও চূড়ান্ত সফলতা আসেনি। বরং তাদের বর্জন ও আন্দোলনের মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়ের মধ্য দিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এ ঘটনায় সারা দেশের নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা ভর করে। নেতাকর্মীদের সেই হতাশার বৃত্ত থেকে বের করে আনতে এবং ঝিমিয়ে পড়া সংগঠনকে চাঙ্গা করতে নির্বাচনের পর তিন মাস ধরে নানাভাবে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বিএনপি। যার অংশ হিসেবে রমজানজুড়ে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সারা দেশে পাঁচ শতাধিক ইফতার মাহফিল করে দলটি। এসব ইফতার মাহফিলে কারামুক্ত নেতাকর্মীদের ফুলের মালা পরিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নেতাকর্মীদের উৎসাহিত করতে অনেক ইফতার মাহফিলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যোগ দেন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত সহস্রাধিক পরিবারের পাশেও দাঁড়িয়েছিল দল। রমজানজুড়ে এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নেতাকর্মীদের হতাশ না হয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে—সেই সুরটাই সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছে বিএনপি।
বিএনপির বক্তব্য হচ্ছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপিকে ভাঙতে নানা চেষ্টা করেছে সরকার। বিএনপি থেকে নেতা বাগিয়ে নিয়ে তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম গঠন করার চেষ্টাও করেছে। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি শত প্রলোভন ও চাপ দিয়েও শাহজাহান ওমর ছাড়া বিএনপির হেভিওয়েট কোনো নেতাকে তারা নির্বাচনে নিতে পারেনি। বরং নির্বাচনের পরে ওইসব দল এখন রাজনীতি থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। দলটির মূল্যায়ন, ঐক্যবদ্ধ থাকার কারণেই নির্বাচন ঘিরে বিএনপিকে নিয়ে সরকারের সব পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রাম সামনে রেখে বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি কোথাও কোনো গ্রুপিং থাকলে, সেটা মিটমাট করা এবং বিভিন্ন সময় বহিষ্কৃতদের দলে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন কারণে দীর্ঘদিন ধরে দলে নিষ্ক্রিয় থাকা নেতাদের আবার কীভাবে সক্রিয় করা যায়, সে চিন্তাভাবনাও চলছে। দল পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে ত্যাগী নেতাকর্মীদের সামনে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দল আরও গতিশীল ও ঐক্যবদ্ধ করার অংশ হিসেবে এসব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
বিএনপিতে ঐক্যবদ্ধ থাকার বার্তা প্রসঙ্গে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, বিভিন্ন সময়, বিশেষ করে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপিকে ভাঙার নানা চেষ্টা হয়েছে। নেতাদের বাগিয়ে এনে আরেকটি বিএনপি দাঁড় করানোরও চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু কোনোটাই সফল হয়নি। এর মূল কারণ হচ্ছে আমরা ঐক্যবদ্ধ ছিলাম। আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের কারণে আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে জনগণ ভোট বর্জন করেছে। সে কারণে তারা নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য করতে পারেনি। ৭ জানুয়ারির নির্বাচন ‘প্রহসন ও আমি-ডামির নির্বাচন’ নামে দেশে-বিদেশে সব জায়গায় চিহ্নিত হচ্ছে। এই ঐক্য আমাদের বজায় রাখতে হবে, আরও জোরদার করতে হবে। আমরা আশাবাদী যে, আগামীতে এই ঐক্যের মধ্য দিয়ে আমাদের বিজয় অর্জিত হবে।