আগামী তিন ধাপের নির্বাচনে ভোটার বাড়ানোই লক্ষ্য ক্ষমতাসীনদের। সে জন্য মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের স্বজনদের ভোট থেকে সরানোর যে কঠোর অবস্থান নিয়েছিল দলটি, সেই অবস্থান থেকে সরে আসছে তারা।
তবে কম ভোট নিয়ে একধরনের অস্বস্তি থাকলেও শেষ পর্যন্ত উপজেলার প্রথম ধাপের এই নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু হওয়ার বিষয়টি সামনে আনছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। তাঁরা বলছেন, বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া সংঘাত ও অনিয়মের কোনো অভিযোগ নেই; কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। প্রথম ধাপের ভোট অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ায় এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে ভোটারদের ওপর। ফলে সামনের ধাপগুলোর নির্বাচনে ভোটারদের আগ্রহ বাড়বে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন।
প্রথম ধাপের ভোটের পর আওয়ামী লীগ মনে করছে, মন্ত্রী-সংসদ সদস্যের স্বজনেরা সরে গেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং ভোটের হার কমে যাবে। এই বিবেচনায় এখন স্বজনদের প্রশ্নে কঠোর অবস্থান থেকে সরে এসেছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা বলেন, বিএনপিসহ বিরোধী দল ভোটে না থাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা কমে গেছে। বিষয়টি তাঁদের দলের ভেতরে আলোচনায় রয়েছে। তাঁরা মনে করেন, ভোটারদের অনীহার পেছনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকার বিষয়টি অন্যতম একটি কারণ।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে ভোট করলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা আরও বেশি প্রচার চালাতেন। ভোটারের দ্বারে দ্বারে বেশি যেতেন। বিএনপি নেই বলে কিছুটা গা ছাড়া ভাব আছে।
একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন, বিরোধী দলবিহীন নির্বাচনে ভোটাররা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন—এ ধরনের একটা ধারণা তৈরি করেছে বিএনপি। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা নেই—এটাও প্রমাণ করতে চাইছে বিরোধী দল। সে জন্য উপজেলার দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর দিকে নজর দেবে ক্ষমতাসীন দলটি।
উপজেলা ভোটের পরের ধাপগুলোতে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের স্বজনদের বসিয়ে দেওয়ার বিষয়ে দল থেকে আর চাপাচাপি করা হবে না; বরং ভোট বাড়াতে সব প্রার্থী যাতে প্রচারের সুযোগ পান, সে বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হবে।
২০০৯ সালের পর অনুষ্ঠিত সর্বশেষ তিনটি উপজেলা নির্বাচনে ভোটের হার ধারাবাহিকভাবে কমেছে। তবে এবার ভোটের হার সবচেয়ে নিচে নেমেছে। বুধবার অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপের নির্বাচনে ১৩৯টি উপজেলার মধ্যে ৮১টিতেই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন নির্বাচনী এলাকার মোট ভোটারের ২০ শতাংশের কম ভোট পেয়ে।
নির্বাচন কমিশনের হিসাবে, উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে ভোট পড়েছে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ। এবার দেশের প্রায় ৪৫০টি উপজেলায় চার পর্বে ভোট হচ্ছে। দ্বিতীয় পর্বের ভোট হবে ২১ মে। ২৯ মে হবে তৃতীয় পর্বের ভোট। শেষ ধাপের ভোট হবে ৫ জুন।
আওয়ামী লীগ নেতাদের মূল্যায়ন হচ্ছে, বিএনপি যেহেতু আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটে নেই, সে ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই নির্বাচিত হবেন। দলীয় প্রতীক বরাদ্দ করা হয়নি, সে কারণে এখানে দলের পরাজয়ের কোনো বিষয় নেই। যেই জিতুক, দলের লোকই জিতবে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের স্বজনদের ভোট থেকে সরে যাওয়ার বিষয়ে শুরুতে দল সিদ্ধান্ত নেয়। মন্ত্রী-সংসদ সদস্যরা দলের নির্দেশনা না মানলে সাংগঠনিক শাস্তির হুমকি দেওয়া হয়েছিল। যদিও স্বজনেরা ভোট থেকে সরে দাঁড়াননি।
প্রথম ধাপের ভোটের পর আওয়ামী লীগ মনে করছে, মন্ত্রী-সংসদ সদস্যের স্বজনেরা সরে গেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং ভোটের হার কমে যাবে। এই বিবেচনায় এখন স্বজনদের প্রশ্নে কঠোর অবস্থান থেকে সরে এসেছে আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা জানান, মূলত বিএনপির বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী ভোটে অংশ নেবেন বলে ধারণা করা হয়েছিল। সেটা না হওয়ায় পরে কৌশল বদলাতে হচ্ছে। উপজেলা ভোটের পরের ধাপগুলোতে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের স্বজনদের বসিয়ে দেওয়ার বিষয়ে দল থেকে আর চাপাচাপি করা হবে না; বরং ভোট বাড়াতে সব প্রার্থী যাতে প্রচারের সুযোগ পান, সে বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হবে।
তবে আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, উপজেলা ভোটের প্রথম ধাপে দলের কেন্দ্র থেকে প্রচার কার্যক্রমে জোর দেওয়া হয়নি। কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ মিলে যৌথভাবে কোনো কার্যক্রমও নেয়নি। উপজেলা ভোটের সামনের ধাপগুলোতে এই প্রচার কার্যক্রম জোরদার করার কথা বলছেন দলের নেতারা।
গতকাল শুক্রবার রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক যৌথ সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এই নির্বাচনে সংঘাত-প্রাণহানি না হওয়াকে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সাফল্য হিসেবে আখ্যা দেন।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, তাঁদের মূল লক্ষ্য ছিল সংঘাত-প্রাণহানি যাতে না হয়। সেটা সম্ভব হয়েছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, উপজেলা ভোটের প্রথম পর্ব দেখে পরবর্তী পর্বগুলোতে ভোটার আরও বাড়বে। তাঁদের যুক্তি হচ্ছে, বুধবার ১৩৯টি উপজেলায় প্রথম ধাপের যে ভোট হয়েছে, স্থানীয় সরকার পর্যায়ে সাম্প্রতিককালে এতটা সুষ্ঠু ভোট হয়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন কাউকে সুবিধা দেয়নি। ফলে প্রকৃত জনপ্রিয় ব্যক্তিরাই জয়ী হয়েছেন। এ ছাড়া প্রথম ধাপে কোনো প্রাণহানি না হওয়ায় ভোটাররা পরবর্তী ধাপগুলোতে আশ্বস্ত হবেন।
আওয়ামী লীগ নেতাদের মূল্যায়ন হচ্ছে, বিএনপি যেহেতু আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটে নেই, সে ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই নির্বাচিত হবেন। দলীয় প্রতীক বরাদ্দ করা হয়নি, সে কারণে এখানে দলের পরাজয়ের কোনো বিষয় নেই। যেই জিতুক, দলের লোকই জিতবে। সুতরাং সুষ্ঠু ভোট হলে তৃণমূলে শৃঙ্খলা থাকবে। পাশাপাশি ভোট নিয়েও কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবে না। এ জন্য সামনের ধাপের ভোটে সংঘাত যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করা এবং ভোটারের উপস্থিতি বাড়াতে সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে আওয়ামী লীগের।