গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার জন্য উন্মুখ থাকতেন। ১৫ আগস্ট থেকে শুরু করে সব সভা-মিছিলে তাঁর সরব উপস্থিতি ছিল। আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে তোলা ছবি এখনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে অবস্থা বুঝে উপজেলা বিএনপির কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ বাগিয়ে নেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
পদ পাওয়ার পর চুপ থাকলেও গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চাঁদাবাজি ও দখল বাণিজ্যে দুরন্ত হয়ে ওঠেন। অবৈধ বাণিজ্যে নিজের মতের সঙ্গে মিল না হলেই দলবলসহ চালান হামলা। তিনি মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান মিঠু (৫০)। তাঁর বিরুদ্ধে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, উপজেলা প্রশাসন ও সিংগাইর থানায় একাধিক অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগীসহ স্থানীয়দের কাছ থেকে মিঠুর বিরুদ্ধে এন্তার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সিংগাইরে কথিত আছে, আওয়ামী লীগের দোসর ও বিএনপি নেতা মিঠু চাঁদার নাম নিলেই তাঁকে দিতে হয় পাঁচ লাখ টাকা। ইটভাটা থেকে শুরু থেকে জমি দখল বাণিজ্যও চলছে হরদম। এসব কাজে আছে তাঁর নিজস্ব দলবল।
মিঠুর ঘনিষ্ঠরাই বলছেন, মিঠু গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগের জেলা ও উপজেলা নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ থেকে নিজের আখের গুছিয়েছেন। আবার একই ব্যক্তি দল বদল করে কিভাবে বহাল তবিয়তে রয়েছেন।
মিঠুর হামলার শিকার ভুক্তভোগী অন্তর খান (২৫) জানান, গত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও জাতীয় শহীদ দিবস উদযাপন উপলক্ষে কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাকর্মীর সঙ্গে একটি অনুষ্ঠানে গেলে মাহবুবুর রহমান মিঠু তাঁর ওপর অতর্কিত হামলা চালান। তখন মিঠুর হাতে রামদা-লাঠিসোঁটা ছিল। মিঠুর নেতৃত্বে আরো লোকজন হামলায় অংশ নেয়।
অন্তর বলেন, ‘আমার মাথায় একাধিক কোপ দিয়েছে এবং মারধর করেছে। এ সময় আমাদের গাড়িগুলো ভেঙে ফেলে। আমি, ফজল নামের একজন মুরব্বি, রুবেলসহ তাদের হামলায় তখন বেশ গুরুতর আহত হই। এখনো পুরোপুরি সুস্থ হইনি।’
তিনি আরো বলেন, ‘সে (মিঠু) আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে রাজনীতি করেছে। আওয়ামী লীগের সিংগাইর উপজেলার সাধারণ সম্পাদক, সাবেক এমপি মমতাজের সঙ্গে সভা-মিছিল ও বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে। আওয়ামী লীগের পদও মিঠু পেতে যাচ্ছিল, যখন দেখল বিএনপি একটু ভালো অবস্থানে যাচ্ছে, তখন বিএনপিতে চলে আসে। এ ছাড়া বর্তমানে শুনেছি, সিংগাইরে কোনো কিছুতে তার নাম নিলে দিতে হয় পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা।’
আরেক ভুক্তভোগী আহত মো. রুবেল (২৯) বলেন, ‘মিঠু ও তার ডান হাত নামে খ্যাত ঝংকার নামের একজনসহ দলবল নিয়ে সরাসরি উপস্থিত থেকে আমাদের ওপর হামলা চালায়। আমরা এখনো বিচার পাইনি।’
সিংগাইর থানা বিএনপির এক নেতা বলেন, ‘মিঠুর নামে অভিযোগের শেষ নাই। সে চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ নানা জোরজুলুম করে বিএনপির অনেক দুর্নাম করছে। সিংগাইরবাসী ও স্বচ্ছ রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা এই ধরনের চাঁদাবাজ থেকে রেহাই পেতে চায়। আমি ৩৫ বছর ধরে রাজনীতি করি। কেউ আমার নামে তো কোনো অভিযোগ দেয় না।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মিঠুর বহু ছবি, চাঁদাবাজিসহ সব অপকর্মের ফিরিস্তি দলের উচ্চ পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। এখনো কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিএনপির নেতাকর্মী-সমর্থকসহ সাধারণ মানুষের স্বার্থে মিঠুর বিরুদ্ধে কঠিন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপরমহলে আমার আবেদন থাকবে।’
এদিকে সিংগাইর পৌর শাখা বিএনপির এক নেতা বলেন, ‘আমরা মিঠুর মতো চাঁদাবাজ, ধান্ধাবাজ দলের দুর্নামকারীদের চাই না। তাঁদের জন্য দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। তারেক রহমান যেভাবে চাচ্ছেন উনার নির্দেশনা মতে আমরা সে ধরনের স্বচ্ছ লোক চাই।’
অভিযোগগুলো অস্বীকার করে দেওয়ান মাহবুবুর রহমান মিঠু বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ঘটনার সত্যতা নেই। আর আমি আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী কি না এখন আমার ‘পদ’ দেখে বোঝেন না। সামনা-সামনি আসেন বিস্তারিত আলাপ করি, তখন বুঝবেন।’
সূত্র: কালের কণ্ঠ