নর্দান ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও
বিভাগীয় প্রধান ডা. আসমা তাসনীম খান জানান যে, আক্রান্ত ব্যক্তির সরাসরি সংস্পর্শ কিংবা তার ব্যবহৃত জামা-কাপড়, বিছানা ও তোয়ালের মাধ্যমে এই জীবাণু দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
বিশেষ করে হোস্টেল, মাদ্রাসা, বস্তি এলাকা বা ঘনবসতিপূর্ণ পরিবেশে যেখানে অনেকে একসঙ্গে বসবাস করেন, সেখানে এই রোগ মহামারি আকারে ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে।
স্ক্যাবিসের প্রধান উপসর্গ হলো সারা শরীরে তীব্র চুলকানি, যা বিশেষ করে রাতে অনেক গুণ বেড়ে যায়। শরীরের নির্দিষ্ট কিছু স্থানে যেমন আঙুলের ফাঁকে, কবজি, কনুই, বগল, নাভি ও গোপনাঙ্গে ছোট ছোট ফুসকুড়ি বা র্যাশ দেখা দেয়। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না করালে এটি মারাত্মক ঘায়ে পরিণত হতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে কিডনির জটিলতা সৃষ্টি করার ঝুঁকি তৈরি করে।
এছাড়া যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বা যারা দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী, তাদের ক্ষেত্রে ‘নরওয়েজিয়ান স্ক্যাবিস’ বা ‘ক্রাস্টেড স্ক্যাবিস’ হতে পারে, যাতে চামড়া পুরু হয়ে স্তর জমে যায়।
এই রোগের চিকিৎসায় সাধারণত পারমিথ্রিন, প্রোটামিটেন বা সালফার ক্রিম ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়।
ডা. আসমা তাসনীম বলেন, বাংলাদেশে পারমিথ্রিন ক্রিম সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় যা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গলা থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত পুরো শরীরে মেখে ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা রাখতে হয়। সাত দিন পর এই প্রক্রিয়াটি পুনরায় অনুসরণ করতে হয়। ক্ষেত্রবিশেষে আইভারমেকটিন নামক মুখে খাওয়ার ওষুধও দেওয়া হতে পারে, তবে শিশু ও গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ সেবন করা নিষিদ্ধ।
চিকিৎসার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো রোগীর ব্যবহৃত কাপড় ও বিছানার চাদর গরম পানিতে ফুটিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করা এবং ব্যবহারের আগে ভালোভাবে ইস্ত্রি বা আয়রন করে নেওয়া। প্রতিরোধ নিশ্চিত করতে হলে আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্র আলাদা রাখা এবং পরিবারের কেউ সংক্রমিত হলে দ্রুত সবার একত্রে চিকিৎসা গ্রহণ করা জরুরি।
নিয়মিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা এবং আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলাই এই কষ্টদায়ক চর্মরোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রধান উপায়।


