গেল এক দশকে বিশ্বের ভূরাজনীতি পাল্টেছে অবিশ্বাস্য গতিতে। দীর্ঘদিনের নিরপেক্ষ নীতি ত্যাগ করে সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দিয়েছে ফিনল্যান্ড ও সুইডেন। এর মধ্যেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন সামরিক নীতি গ্রহণ করেছে আরেক মার্কিন মিত্র। মূলত আর্কটিক মহাসাগরে রুশ উত্থান ঠেকাতে নতুন এই নিরাপত্তা নীতিমালা নিয়ে এসেছে উত্তর আমেরিকার দেশ কানাডা।
একই সঙ্গে চীনের প্রভাব ঠোকানোর কৌশলও প্রণয়ন করেছে তারা। ফলে মনে করা হচ্ছে, আগামী বিশ্ব নতুন এক রাজনৈতিক ও সামরিক সমীকরণের মুখোমুখি হতে চলছে।
আল-জাজিরায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আর্কটিক মহাসাগরকে কেন্দ্র করে নিজেদের নতুন নিরাপত্তা নীতিমালা প্রকাশ করেছে মার্কিন সীমান্তবর্তী দেশ কানাডা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নিজ ভূখণ্ডের পরিবর্তন এবং ক্রমবর্ধমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার প্রেক্ষিতে এই পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে অটোয়া। এতে রাশিয়া ও চীনের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলোর কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়।
কানাডার প্রকাশিত নিরাপত্তা নীতিমালায় বলা হয়, আর্কটিক মহাসাগর ও উত্তর আমেরিকান আকাশসীমায় রুশ বাহিনীর ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি কানাডার নিরাপত্তাকে হুমকিতে ফেলছে। এছাড়াও আর্কটিক মহাসাগরকে কেন্দ্র করে চীনের সামরিক ও বাণিজ্যিক পরিকল্পনাও দেশটিকে নতুন হুমকিতে ফেলছে।দীর্ঘদিন ধরেই আর্কটিক মহাসাগরকে সামরিক কার্যক্রম থেকে দূরে রাখতে অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছিল কানাডা। তবে চীন ও রাশিয়ার পদক্ষেপের কারণে অঞ্চলটি আর চিন্তামুক্ত নয় বলে মন্তব্য অটোয়ার।
আর্কটিকে নিজেদের সামরিক ও কূটনৈতিক উপস্থিতি বাড়ানোর পরিকল্পনা অনুসারে যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা ও ডেনমার্কের অধীনে থাকা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল গ্রিনল্যান্ডের নুউকে দূতাবাস স্থাপন করবে কানাডা। এই সময়ে অটোয়া বিউফোর্ট সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তি এবং ডেনমার্ক এবং কানাডার মধ্যে ছোট জনবসতিহীন দ্বীপ হ্যান্স নিয়ে একটি সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করতে চাইছে।
পাশাপাশি আর্কটিক মহাসাগরকে কেন্দ্র করে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গেও সহযোগিতামূলক কার্যক্রম বাড়াতে চাইছে কানাডা। এতে নজরদারি ও সামরিক কার্যক্রমও অন্তর্ভুক্ত থাকবে বলে জানানো হয়।
আর্কটিকে সামরিক পদক্ষেপের অংশ হিসেবে টহল জাহাজ, নৌবাহিনীর ডেস্ট্রয়ার, আইসব্রেকার এবং সাবমেরিন মোতয়েন করতে পারে কানাডা। এছাড়াও অঞ্চলটিতে নিরাপত্তা বজায় রাখতে নিয়মিত জঙ্গিবিমান ও ড্রোন উড্ডয়ন করবে অটোয়া। কানাডার এমন পদক্ষেপের পাশে থাকবে ওয়াশিংটন বলে মনে করা হচ্ছে। এরই মধ্যে অঞ্চলটিতে মেরিটাইম সেন্সর ও নজরদারির জন্য কানাডার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়াও ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোও আর্কটিকে নিজেদের সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়ে তুলছে।