রবিবার, অক্টোবর ১৩, ২০২৪
রবিবার, অক্টোবর ১৩, ২০২৪
28 C
Dhaka
Homeরাজধানীআগের মতো তৎপর নয় সব থানার কার্যক্রম

আগের মতো তৎপর নয় সব থানার কার্যক্রম

আপডেট: আগস্ট ৩০, ২০২৪ ১২:০৬
প্রকাশ: আগস্ট ৩০, ২০২৪ ১১:৫৯

ধানমন্ডি এলাকা থেকে তিন দিন আগে একজন ব্যবসায়ীর মুঠোফোন চুরি হয়েছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ধানমন্ডি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পুলিশ অবস্থান শনাক্ত করেও মুঠোফোনটি উদ্ধার করতে পারছে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, মুঠোফোনটি সক্রিয় রয়েছে। ফোন করে মুঠোফোনটি থানায় দিয়ে যেতে বলা হয়েছে। কিন্তু ফোন ধরে অপর প্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি হুমকি দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাকে বলেন, সাহস থাকলে এসে ফোন নিয়ে যান। পুলিশ সাহস করে আর মুঠোফোনটি উদ্ধার করতে যায়নি।

শুধু মুঠোফোন চুরির এ ঘটনা নয়, গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটার দিকে আদাবর থানা এলাকার নবোদয় হাউজিংয়ে প্রকাশ্যে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। চাপাতি হাতে একদল ছিনতাইকারী এক বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষার্থীর রিকশা থামিয়ে মুঠোফোন ও টাকা ছিনিয়ে নেয়। আশপাশের লোকজন দাঁড়িয়ে দেখলেও কেউ এগিয়ে আসেননি। ভুক্তভোগী ঝামেলা এড়াতে মামলায় যাননি, জিডি করেছেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, থানার কার্যক্রম এখনো পুরোদমে চালু হয়নি। টহল ও তল্লাশি আগের মতো চলছে না। চুরি-ছিনতাই বেড়ে গেছে। কিন্তু থানায় ছিনতাইয়ের মামলা তেমন হচ্ছে না। চুরি ও হারানোর জিডি হচ্ছে বেশি।

সম্প্রতি একজন মাদক ব্যবসায়ী রাজধানীর একটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) ভিডিও কলে মাদক দেখিয়ে হুমকি দিয়ে বলেন, আগে বহুবার গ্রেপ্তার করেছেন, সাহস থাকলে এবার আসেন, গ্রেপ্তার করেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, থানার কার্যক্রম এখনো পুরোদমে চালু হয়নি। টহল ও তল্লাশি আগের মতো চলছে না। চুরি-ছিনতাই বেড়ে গেছে। কিন্তু থানায় ছিনতাইয়ের মামলা তেমন হচ্ছে না। চুরি ও হারানোর জিডি হচ্ছে বেশি।

কর্মকর্তারা আরও বলেন, পুলিশ সদস্যরা থানার বাইরে গিয়ে কাজ করতে ভয় পাচ্ছেন। আগে এক–দুজন পুলিশ সদস্য পাঠিয়ে আসামি গ্রেপ্তার করা হতো। এখন সাধারণ আসামি ধরতেও দল পাঠাতে হয়।

৫ আগস্ট সরকার পতনের আগে ঢাকার প্রতিটি থানায় গড়ে ৪০ থেকে ৮০টি জিডি ও ৫ থেকে ১০টি মামলা হতো। সেই সংখ্যা এখন অনেক কম। যেসব থানায় হামলা হয়েছিল, এখনো সেসব থানা ভবন মেরামতের কাজ চলছে।

গত বুধবার রাত থেকে গতকাল বিকেল পর্যন্ত ঢাকার বাড্ডা, হাতিরঝিল, রমনা, নিউমার্কেট ও ধানমন্ডি থানা ঘুরে দেখা গেছে, থানাগুলো এখনো আগের মতো লোকজন আসছেন না। ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগে ঢাকার প্রতিটি থানায় গড়ে ৪০ থেকে ৮০টি জিডি ও ৫ থেকে ১০টি মামলা হতো। সেই সংখ্যা এখন অনেক কম। যেসব থানায় হামলা হয়েছিল, এখনো সেসব থানা ভবন মেরামতের কাজ চলছে। কিছু কিছু থানায় এখনো আনসার সদস্য মোতায়েন রয়েছেন।

পাঁচটি থানার অন্তত ১০ জন উপপরিদর্শকের (এসআই) সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনেক কথাই বলেন। প্রকৃতপক্ষে থানার সব কার্যক্রম এখনো চালু হয়নি। পুলিশ আসামি গ্রেপ্তারে বাইরে যেতে ভয় পাচ্ছে।

ছাত্র আন্দোলনের সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্র–জনতার সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে অনেক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। সরকার পতনের আগে-পরে তিন দিন পুলিশের বেশ কিছু স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর সারা দেশে পুলিশি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ সদস্যরা থানায় আসতে সাহস পাননি। স্থাপনা পাহারা দেওয়ার জন্য আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়।

সরকার পতনের পর ঢাকার যে কয়টি থানায় হামলা হয়েছিল, তার একটি ঢাকার বাড্ডা থানা। গত বুধবার রাতে ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত সরেজমিন থেকে এ সময়ের মধ্যে তিনটি জিডি হতে দেখা গেছে। সারা দিনে জিডি হয়েছে ৪৫টি।
৯ আগস্ট রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় সীমিত পরিসরে কার্যক্রম শুরু হয়। পরে পর্যায়ক্রমে সারা দেশের সব থানায় (৬৩৯টি) কার্যক্রম চালু হলেও পুলিশ আগের মতো তৎপর নয়।

সরকার পতনের পর ঢাকার যে কয়টি থানায় হামলা হয়েছিল, তার একটি ঢাকার বাড্ডা থানা। গত বুধবার রাতে ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত সরেজমিন থেকে এ সময়ের মধ্যে তিনটি জিডি হতে দেখা গেছে। সারা দিনে জিডি হয়েছে ৪৫টি। মামলা হয়েছে মাত্র একটি। ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, থানার সেবা কার্যক্রম পুরোদমে চালু হয়েছে। যেহেতু বাড্ডা থানায় হামলা হয়েছিল, তাই অনেকের মধ্যে এখনো ভয় কাজ করছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, কোনো কোনো পুলিশ সদস্য এতটাই ভয় পেয়েছেন যে রাতে ঘুমাতে পারেন না। অনেকে থানার বাইরে অভিযানে যেতে চাইছেন না।

এত বড় একটি ঘটনার পর পুলিশ সদস্যদের মধ্যে কিছুটা ভয় কাজ করছে। সবাই মিলে এই ভয় কাটিয়ে উঠতে কাজ করতে হবে। ইতিমধ্যে থানাগুলোয় পুলিশি কার্যক্রম অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে।

ঢাকার নিউমার্কেটে দুই দোকানের দুই বিক্রয়কর্মীর মধ্যে মারামারি হয়। মো. শাহরিয়ার নামের এক বিক্রয়কর্মীর হামলায় আনোয়ার হোসেন নামের একটি কর্মী গুরুতর আহত হন। গত বুধবার রাতে নিউমার্কেট থানায় মামলা করেন আনোয়ার। গতকাল বেলা তিনটার দিকে আবার থানায় যান তিন। থানায় দাঁড়িয়ে কথা হয় আনোয়ারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মামলা করেছি। আসামি প্রকাশ্যে দোকানে কাজ করছেন। কিন্তু পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করছে না।’

আনোয়ারের এ অভিযোগ নিয়ে কথা হয় নিউমার্কেট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল বাশারের সঙ্গে। তিনি বলেন, বুধবার রাতে ওই ভুক্তভোগী একটি অভিযোগ করেছিলেন। পরে সেটা যাচাই-বাচাই করে মামলা হিসেবে নেওয়া হয়েছে। পুলিশ আসামি গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে।

ঢাকার হাতিরঝিল থানায় কোনো হামলা হয়নি। তাই থানার কার্যক্রম চালাতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। গতকাল দুপুরে হাতিরঝিল থানায় গিয়ে দেখা যায়, অন্তত ১০ জন বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে থানায় এসেছেন। কেউ এসেছেন জিডি নিয়ে, কেউ এসেছেন মামলা করতে। একজন নারী এসেছেন ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করতে।

একাধিক ভুক্তভোগী বলেন, পুলিশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় চুরি-ছিনতাই বেড়ে গেছে। জিডি ও মামলা নেওয়ার পাশাপাশি বাইরে টহল জোরদারের দাবি জানান তাঁরা।

হাতিরঝিল থানার ওসি সাইফুল ইসলাম অবশ্য দাবি করেন, তাঁর থানা পুরোদমে চালু হয়েছে। জিডি ও মামলার বাইরে আসামি ধরতে বাইরে অভিযানও করছেন তাঁরা।

ডিএমপি কমিশনার মো. মাইনুল হাসান গতকাল রাতে বলেন, এত বড় একটি ঘটনার পর পুলিশ সদস্যদের মধ্যে কিছুটা ভয় কাজ করছে। সবাই মিলে এই ভয় কাটিয়ে উঠতে কাজ করতে হবে। ইতিমধ্যে থানাগুলোয় পুলিশি কার্যক্রম অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে। সবার চেষ্টায় সবকিছু দ্রুতই স্বাভাবিক হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় খবর