মঙ্গলবার বিকেল ৪টার পর কড়া নিরাপত্তায় দুটি মাইক্রোবাসে করে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননকে আদালত চত্বরে আনা হয়।
আদালত চত্বরে উপস্থিত বিএনপি–জামায়াত সমর্থক অন্তত এক শ আইনজীবী এই দুই নেতার শাস্তির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে তাঁদের বহনকারী মাইক্রোবাসের ওপর ডিম নিক্ষেপ করা হয়। পরে তাঁদের নেওয়া হয় ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের হাজতখানায়।
এক ঘণ্টা পর বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য হাসানুল হক ইনুকে প্রথমে হাজতখানা থেকে বের করেন। এরপর বের করা হয় রাশেদ খান মেননকে। দুজনের মাথায় ছিল পুলিশের হেলমেট। আর শরীরে পরানো হয় বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট। যখন তাঁদের দুজনকে আদালতের প্রধান ফটকের সামনে আনা হয়, তখন তাঁদের লক্ষ্য করে ডিম ছোড়া হয়। একপর্যায়ে একজন জুতাও ছুড়ে মারেন।
হাসানুল হক ইনু ও রাশেদ খান মেননকে সিঁড়ি দিয়ে যখন দ্বিতীয় তলায় আদালত কক্ষে ওঠানো হচ্ছিল, তখন আইনজীবীদের কেউ কেউ মারধরের চেষ্টা করেন।
আদালতকক্ষে নেওয়ার পর তাঁদের রাখা হয় আসামির কাঠগড়ায়। এ সময় রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনুকে বিমর্ষ অবস্থায় দেখা যায়। তখন আদালতকক্ষে উপস্থিত বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা তাঁদের শাস্তির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। তখন তুমুল হট্টগোল আর হইচই হয়। এরপর আদালতকক্ষে প্রবেশ করেন বিচারক।
তখন রাষ্ট্রপক্ষে পুলিশের একজন পরিদর্শক কেন তাঁদের হত্যা মামলায় রিমান্ডে নেওয়া দরকার, তার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। এ সময় বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা হাসানুল হক ইনু ও রাশেদ খান মেননের শাস্তির দাবিতে ফের স্লোগান দিতে থাকেন। তুমুল হট্টগোলের সময় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতা ওমর ফারুক ফারুকী অন্য আইনজীবীদের হট্টগোল থামাতে বলেন। এরপর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে ওমর ফারুক ফারুকী তাঁদের দুজনকে রিমান্ডে নেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। একপর্যায়ে তিনি তাঁদের অতীত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বক্তব্য দেন। ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের দোসর হলেন হাসানুল হক ইনু ও রাশেদ খান মেনন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনা সরকার নির্বিচারে মানুষ খুন করেছে। গণভবনে হাসানুল হক ইনু ও রাশেদ খান মেনন শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
শুনানির এ পর্যায়ে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা আরও উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তখন কেউ কেউ হাসানুল হক ইনু ও রাশেদ খান মেননকে উদ্দেশ করে কটূক্তি করেন। একপর্যায়ে বিএনপি–জামায়াত সমর্থক আইনজীবীদের মধ্যেই দুই পক্ষে হাতাহাতিও হয়। প্রায় ৪৫ মিনিট শুনানির পুরোটা সময় আদালতকক্ষে বিশৃঙ্খল পরিবেশ দেখে বিচারক একপর্যায়ে বলেন, আদালতকক্ষ থেকে আাসমিদের নির্বিঘ্নে যেন হাজতখানায় নেওয়া হয়। পরে আদালত নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী আবদুল ওয়াদুদ হত্যা মামলায় হাসানুল হক ইনুর সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আর আদাবর থানায় করা পোশাককর্মী রুবেল হত্যা মামলায় রাশেদ খান মেননের ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ সময় আইনজীবীরা তাঁদের শাস্তির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন।
তখন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী উপস্থিত আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, কেউ যেন বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি না করেন। এরপর হাসানুল হক ইনু ও রাশেদ খান মেননকে আদালতকক্ষ থেকে বারান্দায় আনা হয়। তখন সেখানে উপস্থিত আইনজীবীদের কেউ কেউ তাঁদের মারধরের চেষ্টা করেন। তাঁদের যখন আদালতের সামনে আনা হয়, তখনও কেউ কেউ তাঁদের দিকে তেড়ে আসেন মারধর করতে। পরে দ্রুত তাঁদের হাজতখানায় নেওয়া হয়।
এ সময় আদালতে প্রবেশের প্রধান ফটকের বাইরে কিছু ব্যক্তি হাসানুল হক ইনু ও রাশেদ খান মেননের শাস্তি চেয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। এরপর প্রিজন ভ্যানে করে তাঁদের আদালত থেকে নেওয়া হয়।