মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে বাজছে যুদ্ধের দামামা। গাজায় ইসরায়েলি হামলার এক বছর পূর্ণ হয়েছে। এ ছাড়া লেবাননেও ইসরায়েলি হামলায় অকাতরে প্রাণ হারাচ্ছে একের পর এক বেসামরিক নাগরিকরা। এরইমধ্যে সামরিক সক্ষমতা আরও বাড়াচ্ছে ইসরায়েল। অত্যাধুনিক মার্কিন যুদ্ধবিমান কিনছে দেশটি।বৃহস্পতিবার (০৭ নভেম্বর) আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ২৫টি অত্যাধুনিক এফ-১৫ মার্কিন যুদ্ধবিমান কিনতে চলেছে। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তিও স্বাক্ষর হয়েছে। এসব বিমানের জন্য পাঁচ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার অর্থ ব্যয় করবে তারা।
এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে,প্রতিরক্ষা মন্ত্রণায় গত বুধবার (০৬ নভেম্বর) পরবর্তী প্রজন্মের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কেনার জন্য একটি বিশাল চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এ চুক্তির অধীনে আমেরিকান কোম্পানি বোয়িং দ্বারা নির্মিত ২৫টি উন্নত যুদ্ধবিমান ক্রয় করা হবে।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মার্কিন সহায়তা তহবিল থেকে এজন্য প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান দেওয়া হবে। এ ছাড়া এতে ভবিষ্যতে আরও অতিরিক্ত ২৫টি বিমান কেনার একটি বিকল্প রাখা হয়েছে।
এফ-১৫ যুদ্ধবিমানের দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৪৫ মিটান এবং প্রস্থ ১৩ দশমিক ০৫ মিটার ও উচ্চতা ৫ দশমকি ৬৪ মিটার। দুই আসনবিশিষ্ট এ বিমানের খালি অবস্থায় ওজন ১৪ হাজার ৫০০ কেজি আর সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা ৩৭ হাজার কেজি। অত্যাধুনিক এ বিমানটি ২২ ফুট লম্বা পর্যন্ত হাইপারসনিক অস্ত্র ছুড়তে পারে।
মার্কিন মিত্র দেশগুলো এ বিমানের একচেটিয়া ব্যবহারকারী দেশ। ফলে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যাও সীমিত। ইসরায়েলের কাছে এ ধরনের বিমান রয়েছে। এ ছাড়া জাপান ও সৌদি আরবের বহরেও এ ধরনের বিমান দেখা যায়।
এদিকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় এক বছরের বেশি সময় ধরে হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। দেশটির অব্যাহত এ হামলায় সৃষ্ট ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করতে অন্তত ১৫ বছর সময় লাগবে। এজন্য প্রতিদিন ১০০টি লরি ব্যবহার করতে হবে।
জাতিসংঘের হিসাবমতে, গাজায় ভবন ধসে এ পর্যন্ত ৪২ মিলিয়ন টনেরও বেশি ধ্বংসস্তূপ জমা হয়েছে। এ ধ্বংসস্তূপগুলো যদি একসঙ্গে এক জায়গায় রাখা যায়, তাহলে তা মিশরের ১১টি গ্রেট পিরামিডের সমান হবে। এ ধ্বংসস্তূপ সরাতে ব্যয় হবে ৫০০ থেকে ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি)।
ইউএন এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রামের হিসাব অনুসারে, গাজায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৭টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা অঞ্চলটির মোট ভবনের অর্ধেকের বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের মধ্যে এক-চতুর্থাংশ পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এ ছাড়া এক-দশমাংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এক-তৃতীয়াংশ বেশ খানিকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ভবনের ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ফেলার জন্য ২৫০ থেকে ৫০০ হেক্টর জমির প্রয়োজন পড়বে
গাজাভিত্তিক জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘অবকাঠামোর যে পরিমাণ ক্ষতি করা হয়েছে, তা পাগলামির পর্যায়ে পড়ে… দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে একটি ভবনও নেই যেখানে ইসরায়েল হামলা চালায়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত অর্থেই এ অঞ্চলের ভৌগোলিক চিত্র পরিবর্তিত হয়ে গেছে। যেখানে আগে পাহাড় ছিল না, এখন সেখানে পাহাড় হয়ে গেছে। দুই হাজার পাউন্ডের বোমাগুলো আক্ষরিক অর্থেই এ অঞ্চলের মানচিত্র বদলে দিয়েছে।’