শনিবার, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৫
শনিবার, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৫
27 C
Dhaka
Homeআইন আদালতকবরে ও জেলখানায় সঙ্গে কেউ যায় না, কলিমুল্লাহকে বিচারক

কবরে ও জেলখানায় সঙ্গে কেউ যায় না, কলিমুল্লাহকে বিচারক

প্রকাশ: আগস্ট ৭, ২০২৫ ৯:১১

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত এ আদেশ দেন।

এর আগে, এদিন বিকেলে কলিমুল্লাহকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর শুনানি শুরু হলে তার আইনজীবী শাহনাজ আক্তার বলেন, কলিমুল্লাহ নিয়মবহির্ভূতভাবে কোনো কাজ করেননি। বয়স্ক বিবেচনায় যেকোনো শর্তে জামিন দিলে তিনি পলাতক হবেন না।

শুনানির এক পর্যায়ে বিচারক কলিমুল্লাহকে জিজ্ঞাসা করেন, আপনি কোন সালে ভিসি হয়েছেন? জবাবে তিনি বলেন, তৎকালীন সরকার আমাকে ২০১৭ সালে ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেয়।

বিচারক বলেন, আপনি তো ফুল টাইম ঢাকায় থাকতেন। আপনি ১৩৫২ দিনের মধ্যে ১১১৫ দিন ঢাকায় থেকেছেন। তখন তিনি বলেন, দিপু মনি অন্যায় আবদার করতেন। এটা মেনে না নেওয়ায় আমার বিরুদ্ধে অপবাদ দিয়েছেন। আমি ১৭-১৮ ঘণ্টা কাজ করেছি। তার বিরুদ্ধে আমি প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করেছিলাম। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে দিপু মনি এগুলো ছড়িয়েছেন।

তখন বিচারক বলেন, আপনি ও আপনার মা একই নিয়োগ বোর্ডে ছিলেন? তিনি বলেন, আমার মা মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ডিজি ছিলেন। এ জন্য সরকার নিয়োগ বোর্ডে সদস্য করেন। বিচারক বলেন, আপনি কি ভিসি, বিভাগীয় প্রধান ও ডিন ছিলেন? কলিমুল্লাহ বলেন, আমিই প্রথম নই। আমার আগের ভিসির ধারাবাহিকতায় রক্ষায় এসব দায়িত্বে ছিলাম। বিশেষ পরিস্থিতিতে এ দায়িত্বে থাকতে হয়েছে।

বিচারক জানতে চান, চার বছরে উন্নয়ন খাতে কোনো টাকা পেয়েছেন? কলিমুল্লাহ বলেন, আমার আগের ভিসি নুর নবীর সময় ৯৯ কোটি টাকার কাজ চলমান ছিল। আমি দায়িত্ব নিয়ে কাজ চলমান রেখেছি। একইসঙ্গে চাকরি বাণিজ্য বন্ধ করেছিলাম।

তখন দুদকের আইনজীবী দেলোয়ার জাহান রুমি বলেন, তিনি ঢাকায় থাকতেন। টক শো করতেন নিয়মিত। তিনি কিভাবে ১৭-১৮ ঘণ্টা কাজ করেন? কলিমুল্লাহ বলেন, আমি রাতের বেলা টক শো করতাম। তখন বিচারক জানতে চান, তার বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা আছে কি না? তখন দুদক জানায়, অন্য কোনো মামলা নেই। তখন বিচারক আসামির উদ্দেশে বলেন, আপনার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আছে, সেটা তদন্ত হলে পুরাটা বেরিয়ে আসবে। তখন কলিমুল্লাহ বলেন, আমি কোনো চিঠিপত্র পাইনি। আমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ডাকা হয়নি। সকালে বাসায় থেকে আমাকে পুলিশ নিয়ে আসছে। এক পোশাকে একাই চলে এসেছি।

বিচারক বলেন, কবরে-জেলখানায় একাই যেতে হবে। দুনিয়া থেকে যখন যাবেন সঙ্গে কেউ যাবেন না। কবরে সঙ্গে কেউ যায় না, জেলেও সঙ্গে কেউ যায় না। যারা দুর্নীতি করে তারা কবরেও একা, জেলখানায় একা যাবে। আপনি কী করেছেন তা আলিমুল গায়েব জানেন, আপনিও জানেন। কিছুদিন পর দুদক জানবে। আপনাকে জেলখানায় যেতে হবে। আপনি কারাবিধি অনুযায়ী সুবিধা পাবেন। কোনো ওষুধপত্র প্রয়োজন হলে আপনাকে দেওয়া হবে।

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে কলিমুল্লাহসহ পাঁচজনকে আসামি করে গত ১৮ জুন দুর্নীতির মামলা দায়ের করা হয়।

মামলায় অন্য আসামিরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক উপাচার্য এ কে এম নূর-উন-নবী, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, ঠিকাদার মো. আ. সালাম বাচ্চু এবং এম এম হাবিবুর রহমান।

মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশ, অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ, ক্ষমতার অপব্যবহার করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদিত ডিপিপি উপেক্ষা করে নকশা পরিবর্তন করেন। তারা ৩০ কোটি টাকা মূল্যের বেশি চুক্তি মন্ত্রণালয় বা বিভাগের অনুমোদন ছাড়া করেন। ঠিকাদারের রানিং বিল থেকে কেটে নেওয়া নিরাপত্তা জামানতকে এফডিআর হিসেবে ব্যাংকে জমা রাখা এবং সেই এফডিআর ঠিকাদারকে লোন দেওয়ার জন্য নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট অনুমোদন তথা গ্যারান্টার হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সরকারের চার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।

ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তিতে অগ্রিম অর্থ দেওয়ার কোনো আইন না থাকা সত্ত্বেও অগ্রিম বিল দেন এবং অগ্রিম দেওয়া বিল সমন্বয়ের আগেই বিলের বিপরীতে প্রদত্ত ব্যাংক গ্যারান্টিগুলো অবমুক্ত করা হয়। প্রথম পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের দেওয়া ড্রইং বা ডিজাইন না মেনে সরকারি খাতে ক্রয়পদ্ধতির বিধিবহির্ভূতভাবে দ্বিতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হয়। অস্বাভাবিক হারে মূল্য দাখিল বা ফ্রন্ট লোডিং থাকা সত্ত্বেও পিপিআর ২০০৮-এর বিধান অনুযায়ী দরপত্র মূল্যায়ন না করার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

এরপর রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সকালে ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে দুদকের আবেদনের পরিক্ষেপ্রেতে কলিমুল্লাহসহ পাঁচজনের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।

 

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় খবর