গবেষণাও বলছে সে কথা। অনেক গবেষণাতেই দেখা গিয়েছে, নিয়মিত কফি খেয়ে অনেকের ওজন কমেছে—এমন উদাহরণ প্রচুর। তবে, এটি কি সবার ক্ষেত্রেই সমানভাবে কার্যকর? ধরা যাক, আপনার ওজন ৮০ কেজি। আপনি প্রতিদিন কফি খেতে শুরু করলেন। তাহলে কি ১৫ দিনের মধ্যে পাঁচ কেজি ওজন কমে যাবে? উত্তরটা নির্ভর করে—কফি কীভাবে খাচ্ছেন তার উপর। চলুন জেনে নেওয়া যাক, কফি যেভাবে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
ওজন কমানোর মূল চাবিকাঠি হচ্ছে শরীরের বিপাকক্রিয়া। কফিতে থাকা ক্যাফিন ও ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড বিপাক হার বাড়াতে সাহায্য করে। এ কারণেই অনেক ওজন কমানোর ওষুধেও এ উপাদানগুলো থাকে। ক্যাফিন বিপাক হার বাড়ায়, আর ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড খাবার থেকে শর্করার শোষণ কমিয়ে দেয়।
শরীরের ফ্যাট সেল জমা চর্বি ভাঙতে সাহায্য করে কফি। ক্যাফিন ফ্যাট টিস্যু থেকে ফ্যাটি অ্যাসিড মুক্ত করতে পারে, যা শরীরচর্চার সময় শক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
কফি খেলে কিছু সময়ের জন্য ক্ষুধা কমে যায়, ফলে অপ্রয়োজনীয় খাওয়া-দাওয়া কমে। এতে শরীরে কম ক্যালোরি প্রবেশ করে, যা ওজন কমাতে সহায়ক।
ওজন কমাতে হলে কফি অবশ্যই চিনি ছাড়া খেতে হবে। প্রয়োজনে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস যোগ করা যেতে পারে, যা বিপাক হার আরও বাড়াতে সহায়ক।
খাঁটি ডার্ক চকলেট কফিতে মেশালে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ বাড়ে, যা চর্বি ঝরানোর প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে।
শরীরচর্চার আগে কফি খেলে তা দ্রুত মেদ ঝরাতে সাহায্য করবে। কিছু গবেষণা এমনও বলা হয়েছে, খাওয়ার আগে কফি খেলেও শরীরে ক্যালোরি কম যায়।
কফি খেয়ে মেদ ঝরানো কখনোই ওজন কমানোর দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয়। তার কারণ, কফি খাওয়ার অভ্যাস একবার তৈরি হলে তা আর ওজন কমানোর কাজ আগের মতো করে না। কফির প্রভাব শরীর ধীরে ধীরে মানিয়ে নিতে শুরু করে। তাই কফির অভ্যাস যদি তৈরি করতে না চান, তবে দুই সপ্তাহ টানা কফি খাওয়ার পরে দুই সপ্তাহ কফি খাওয়া বন্ধ রাখুন। তারপরে আবার দুই সপ্তাহ কফি খান।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা খুব বেশি মোটা নন, কফি খেয়ে তাদের ওজন ঝরেছে দ্রুত। যাদের অতিরিক্ত স্থূলত্বের সমস্যা রয়েছে, তাদের উপর কফির প্রভাব কিছুটা কম। প্রথম ক্ষেত্রে ২৯ শতাংশ দ্রুত ওজন ঝরেছে। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ।
কফি খেলে ফ্যাট টিস্যু থেকে যে ফ্যাটি অ্যাসিড নির্গত হয়, তা রক্তে থেকে যায়। কফি খাওয়ার পাশাপাশি শরীরচর্চা করলে তবেই ওই ফ্যাটি অ্যাসিডের প্রভাব এড়ানো সম্ভব।
প্রাথমিকভাবে খানিকটা ওজন ঝরানোর জন্য কফিকে কাজে লাগানো যেতেই পারে। কারণ, ওজন কমানোর জন্য কিছুটা প্রণোদনা দরকার। চেষ্টার ফল চোখে না দেখলে এগিয়ে যাওয়া মুশকিল হয় অনেকের কাছেই। তবে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে শুধু কফির উপর ভরসা করা ঠিক নয়। তার সঙ্গে জীবনযাপনের ধরনেও স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন আনা জরুরি।