সোমবার, নভেম্বর ৩, ২০২৫
সোমবার, নভেম্বর ৩, ২০২৫
25 C
Dhaka
Homeধর্মতেলাপিয়া কি জান্নাতি মাছ ,কি বলছেন বিশেষজ্ঞ আলেম

তেলাপিয়া কি জান্নাতি মাছ ,কি বলছেন বিশেষজ্ঞ আলেম

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৫ ১:৪৭

মাছ বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। নদীমাতৃক এ দেশে ভাত-মাছ ছাড়া বাঙালির পেট ভরে না বললেই চলে। মাছের কথা সামনে আসতেই আমাদের দেশের প্রচলিত একটি ধারণা সামনে আসে,

‘তেলাপিয়া জান্নাতি মাছ।’ এমনকি অনেক ধর্মীয় বক্তাকেও এ ধরনের কথা প্রচার করতে দেখা যায়। তারা বলেন, ‘নীল ও ফোরাত জান্নাতি নদী এবং এই দুটি নদীতে তেলাপিয়া মাছ বেশি পাওয়া যায়—এ থেকে বোঝা যায় তেলাপিয়া জান্নাতি মাছ।’

মালেক ইবনে সা’সাআ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) জান্নাতে ৪টি নদী দেখেছেন। এর মধ্যে দুটি ছিল প্রকাশ্য ও দুটি অপ্রকাশ্য, সবগুলোই সিদরাতুল মুনতাহার গোড়া থেকে প্রবাহিত। নবীজি (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, এগুলো কোন নদী? জিবরাইল (আ.) বললেন, অপ্রকাশ্য নদী দুটি তো জান্নাতের নদী আর প্রকাশ্যগুলো হলো নীল ও ফোরাত। (মুসলিম : ৩০৫)

আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন, সাইহান, জাইহান, নীল ও ফোরাত জান্নাতের নদী। (মুসলিম : ৭০৫৩)

ইমাম নববী (রহ.) এই হাদিসগুলোর ব্যাখ্যায় বলেন, সাইহান, জাইহান, নীল, ফোরাত জান্নাতি নদী হওয়ার অর্থ হলো—নদীগুলোর উৎপত্তিস্থল জান্নাতে। তারপর আল্লাহ তায়ালা যেদিকে ও যেখানে ইচ্ছা করেছেন নদীগুলো প্রবাহিত হয়েছে। আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় দুটি নদী পৃথিবীতেও প্রবাহিত হয়েছে। (শরহু মুসলিম লিনননবী : ২/২২৫)

বিশেষজ্ঞ আলেমরা বলছেন, উল্লিখিত হাদিসের আলোকে নীল ও ফোরাতকে জান্নাতি নদী বলা যেতে পারে। কিন্তু তেলাপিয়া জান্নাতি মাছ এরকম কোনো তথ্য নবীজি (সা.) থেকে বর্ণিত কোনো হাদিসে পাওয়া যায় না। কোনো সাহাবির বক্তব্যেও এ রকম কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। শুধু নীল বা ফোরাতে বেশি পাওয়া যাওয়ার ভিত্তিতে তেলাপিয়া বা অন্যকোনো মাছকে জান্নাতি মাছ বলার সুযোগ নেই।

প্রখ্যাত ইসলামি স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহর ভাষ্য মতে, আমাদের দেশে বেশকিছু ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত আছে, এর মাঝে একটি ধারণা হলো তেলাপিয়া জান্নাতি মাছ। অনেক বক্তাগণ ওয়াজের ময়দানে কিংবা ইউটিউব-ফেসবুকেও এমনটা বলে বেড়ান। এসব কথাবার্তা ঠ্কি নয়। ‘তেলাপিয়া জান্নাতি মাছ’ এই কথাটি নিতান্তই মানুষের মনগড়া ও বানোয়াট কথা।

মরুর বুকে জন্ম নেওয়া আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও মাছ খেতেন এবং পছন্দ করতেন। জন্মভূমি মক্কা মরুভূমি ও পাহাড়ঘেরা হলেও আরবের চারপাশে রয়েছে বিশাল সমুদ্র। সেখান থেকেই মাছ এসেছে আরবদের খাদ্যতালিকায়। সাহাবায়ে কেরামদের জীবনী আর হাদিসে মাছের প্রসঙ্গ স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ঘটনা হলো ‘আম্বার মাছ’-এর কাহিনি, যে মাছের বরকতে একসময় ক্ষুধার্ত তিনশত সাহাবি পেট ভরেছিলেন এবং পরে সেই মাছ থেকে খেয়েছিলেন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও।

হাদিসের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ বোখারিতে এসেছে, জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, ‘আমরা জাইশুল খাবাতের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। আবু উবাইদাকে (রা.) আমাদের সেনাপতি নিযুক্ত করা হয়। পথে আমরা ভীষণ ক্ষুধার্ত হয়ে পড়ি। তখন সমুদ্র আমাদের জন্য একটি মরা মাছ তীরে নিক্ষেপ করে দিল। এত বড় মাছ আমরা আর কখনো দেখিনি, একে আম্বার মাছ বলা হয়। এ মাছটি থেকে আমরা অর্ধ মাস আহার করলাম। একবার আবু উবাইদা (রা.) মাছটির হাড়গুলোর একটি হাড় তুলে ধরলেন আর সওয়ারির পিঠে চড়ে একজন হাড়টির নিচ দিয়ে অতিক্রম করল।’

ইবনে জুরায়েজ বলেন, আবু জুবায়ের (রহ.) আমাকে জানিয়েছেন, তিনি জাবির (রা.) থেকে শুনেছেন, ওই সময় আবু উবাইদা (রা.) বলেছেন, তোমরা মাছটি আহার করো। এরপর আমরা মদিনায় ফিরে এলে নবীজিকে (সা.) বিষয়টি অবগত করি। তিনি বলেন, খাও। এটি তোমাদের জন্য রিজিক, আল্লাহ তায়ালা পাঠিয়ে দিয়েছেন। আর তোমাদের কাছে কিছু অবশিষ্ট থাকলে আমাদেরও খাওয়াও। মাছটির কিছু অংশ নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এনে দেওয়া হয়। তিনি তা খেলেন।’

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় খবর