নারী বিশ্বকাপে ভারতের ফাইনাল জয়ের উল্লাসে যখন গোটা মাঠ মেতে উঠেছে আনন্দে, তখন ক্যামেরায় ধরা পড়ল সম্পূর্ণ ভিন্ন এক চিত্র। দক্ষিণ আফ্রিকার ডাগআউটে বসে আছেন লরা উলভার্ট—চুপচাপ, নিশ্চল, দৃষ্টিতে
গভীর শূন্যতা। মাঠের উচ্ছ্বাসের বিপরীতে তার মুখে কেবলই হারের কষ্ট। ফুটেছে উঠেছে টানা তিনটি ফাইনাল হারের বিষণ্নতার ছাপ।
অথচ হতে পারতো ঠিক এর বিপরীতটাও। এমন দিনে উলভার্টই হতে পারতেন সবচেয়ে বেশি উচ্ছ্বসিত। কারণ টুর্নামেন্টে জুড়ে অনবদ্য পারফরম্যান্স করে গেছেন তিনি। হেসেছে তার ব্যাট, ২২ গজে প্রতিপক্ষের বোলারদের শাসন করে রানের পাহাড় গড়েছেন। সেমি-ফাইনালে খেলেছেন অবিশ্বাস্য এক ইনিংস, ফাইনালেও প্রোটিয়াদের হয়ে একাই লড়েছেন শেষ পর্যন্ত। যত সময় তিনি উইকেটে ছিলেন, তত সময় দক্ষিণ আফ্রিকার আসাও বেঁচে ছিল। কিন্তু ভাগ্য যেন বারবার মুখ ফিরিয়ে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকার এই অধিনায়কের দিক থেকে।
টানা তিন বছর, তিনটি বিশ্বকাপে হার। দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এবার হারলেন ওয়ানডে বিশ্বকাপেও। ছুঁয়ে দেখা হলো না স্বপ্নের ট্রফিটা। অথচ প্রতিবারই দলের সেরা পারফরমার উলভার্ট।
২০২৩ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে করেছিলেন ২৩০ রান। দেশের মাটিতে সেবার ফাইনালে হেরেছিল অস্ট্রেলিয়ার কাছে। এরপর ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে করেন ২২৩ রান। এবারও তিনি ছিলেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে আবারও রানার্স আপ হয় দক্ষিণ আফ্রিকা।
সদ্য সমাপ্ত নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে তো আরও উজ্জ্বল ছিলেন প্রোটিয়া অধিনায়ক উলভার্ট। দুটি সেঞ্চুরি আর তিনটি হাফসেঞ্চুরিতে ৯ ম্যাচে করেছেন ৫৭১ রান। নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপের এক আসরে যা সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান। পেছনে ফেলেছেন অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি অ্যালিসা হিলির করা ২০২২ সালের ৫০৯ রানের ইনিংসকে।
সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৪৩ বলে ১৬৯ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলে দলকে ফাইনালে তুলেছিলেন উলভার্ট। শিরোপার লড়াইয়ের সেই মঞ্চেও খেলেছেন ৯৮ বলে ১০১ রানের ইনিংস। কিন্তু সামগ্রিকভাবে দলের ব্যর্থতায় ট্রফি ছুঁয়ে দেখতে পারলেন না তিনি। হিলির মতো সেঞ্চুরি করেও শিরোপা জয়ের আনন্দ পেলেন না উলভার্ট।
উলভার্টের বয়সটা এখনো বেশি নয়, সবে ২৬ বছর। এরই মধ্যে মাত্র ১১৯ ওয়ানডেতে ছাড়িয়েছেন পাঁচ হাজার রানের মাইলফলক। ৫০.৬৯ গড়ে ১১ সেঞ্চুরি আর ৩৮ হাফসেঞ্চুরিকে করেছেন ৫ হাজার ২২২ রান। সর্বোচ্চ ১৮৪ রানে অপরাজিত থেকেছেন। ইতোমধ্যে নিজেকে নিয়ে গিয়েছেন কিংবদন্তিদের কাতারে।
তবে সব কীর্তির পরও মনের কোণে একটা আক্ষেপ রয়েই যায়—ফাইনালের মঞ্চে বারবার হার। হয়তো একদিন এই কষ্ট জয় করে উলভার্টের হাতেও উঠবে কাঙ্ক্ষিত ট্রফি। কিন্তু আপাতত, ফাইনালের সঙ্গে তিনিও হেরে গেলেন আবারও।


