স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. রোবেদ আমিন গতকাল শুক্রবার বলেন, ‘আবহাওয়ার দিকে আমাদের সতর্ক নজর আছে। হিটস্ট্রোকের মতো জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হতে পারে। সে জন্য জাতীয় নির্দেশিকার (গাইডলাইন) খসড়া তৈরি করেছি আমরা। ২২-২৩ এপ্রিল থেকে সারা দেশের চিকিৎসকদের এই নির্দেশিকা ব্যবহারের ওপর অর্থাৎ হিটস্ট্রোকের রোগী চিকিৎসার প্রশিক্ষণ শুরু হবে।’
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশের প্রকৃতি ও মানুষ। গ্রীষ্মে বাংলাদেশে প্রচণ্ড গরমের দিনের সংখ্যা বাড়ছে। যদি কোনো এলাকার তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি এবং বাতাসের আর্দ্রতা ৭০ থেকে ৯০ শতাংশের মধ্যে থাকে, তা হলে দিনটি কষ্টের দিন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৯৬১ সালের দিকে বছরে এ রকম সাতটি দিনের মুখোমুখি হতেন বাংলাদেশের মানুষ। এখন সেই কষ্টের দিনের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২০ থেকে ২১।
অধিক তাপমাত্রা জনস্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের ওপর প্রভাব হঠাৎই পড়ে। তাপমাত্রা ৩৫-৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছানোর আগেই সতর্ক হওয়া উচিত। অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেন, ‘মানুষ ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রায় কিছু সময় পার করলেই তার শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে, হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। এটি জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি।’
আবহাওয়ার দিকে আমাদের সতর্ক নজর আছে। হিটস্ট্রোকের মতো জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হতে পারে। সে জন্য জাতীয় নির্দেশিকার (গাইডলাইন) খসড়া তৈরি করেছি আমরা। ২২-২৩ এপ্রিল থেকে সারা দেশের চিকিৎসকদের এই নির্দেশিকা ব্যবহারের ওপর অর্থাৎ হিটস্ট্রোকের রোগী চিকিৎসার প্রশিক্ষণ শুরু হবে।’
অধ্যাপক মো. রোবেদ আমিন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
প্রচণ্ড গরমে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয় মানুষ। মানুষ হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যায়। কেউ কেউ মনে করেন স্ট্রোক করেছে, অর্থাৎ ধারণা করা হয়, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে বা রক্তনালিতে রক্ত জমাট বেঁধে অজ্ঞান হয়ে গেছে। এ কারণে বলা হয় হিটস্ট্রোক। বাস্তবতা হচ্ছে, গরম আবহাওয়ার কারণে শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বেড়ে যায়। শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে শরীর থেকে পানি বের হয়ে যায়। ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে লবণজাতীয় পদার্থ বের হয়ে যায়। শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। মানুষ অজ্ঞান হয়, খিঁচুনি দেখা দেয়। পরিস্থিতির বেশি অবনতি ঘটলে কিডনি ও ফুসফুসের ক্ষতি হয়, মানুষ মারাও যেতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর ৭২ ঘণ্টার জন্য ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি করেছে। এর অর্থ তিন দিন তীব্র গরমের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে যেতে হবে। এই সময় সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকবেন যাঁরা খোলা আকাশের নিচে জীবিকা নির্বাহ করেন: কৃষক, দিনমজুর, রিকশাওয়ালা। আর ঝুঁকি বয়স্কদের, বিশেষ করে যেসব বয়স্ক ব্যক্তি অন্য কোনো রোগে ভুগছেন। শিশুদেরও এই তালিকায় রাখার কথা বলেছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশের প্রকৃতি ও মানুষ। গ্রীষ্মে বাংলাদেশে প্রচণ্ড গরমের দিনের সংখ্যা বাড়ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি থেকে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের হিটস্ট্রোকের রোগীদের চিকিৎসার প্রশিক্ষণ শুরু হবে দু-এক দিনের মধ্যে। তবে এ ব্যাপারে জনসচেতনতাও বাড়ানো দরকার বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, এই সময় ঢিলেঢালা সুতির পোশাক পরতে হবে, বিনা কারণে রোদে বের হওয়ার দরকার নেই, নিয়মিত পানি পান করতে হবে। কেউ অজ্ঞান হয়ে গেলে তাঁকে হাসপাতালে নিতে হবে। শরীরের তাপ কমানোর জন্য শরীরে ঠান্ডা পানি ঢালতে হবে, প্রয়োজনে বরফ ব্যবহার করতে হবে।
এই গরম আবহাওয়ার মধ্যে কিছু কিছু এলাকায় হাসপাতালে শিশু রোগী বেড়েছে। ৫০০ শয্যার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী ভর্তি ছিল ১ হাজার ৩০৫ জন। এর মধ্যে শিশু ওয়ার্ডের ৪৮ শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি ছিল ১১৬ জন। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ডায়রিয়া নিয়ে ৬৪ শিশু ভর্তি ছিল।
শিশু স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবিদ হোসেন মোল্লা বলেন, শিশুদের স্কুল সকালের পালায় (মর্নিং সিফট) করতে হবে, স্কুলে বাইরের কর্মকাণ্ড সীমিত করতে হবে। শিশুদের হালকা পোশাকে স্কুলে পাঠাতে হবে। যে বয়সেরই শিশু হোক না কেন, তাকে পানি বা তরলজাতীয় পদার্থ বেশি করে পান করাতে হবে।