শনিবার, নভেম্বর ১৬, ২০২৪
শনিবার, নভেম্বর ১৬, ২০২৪
28 C
Dhaka
Homeবাংলাদেশকাস্টমসের অগোচরে পণ্য খালাস

কাস্টমসের অগোচরে পণ্য খালাস

প্রকাশ: জুলাই ১, ২০২৪ ৯:৫৮

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অটোমেটেড সিস্টেম ফর কাস্টমস ডাটা (অ্যাসাইকুডা) সফটওয়্যারে একের পর এক জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে। এর মাধ্যমে গত ছয় মাসে শতাধিক অবৈধ পণ্য চালান খালাস হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের প্রাথমিক তদন্তে একটি বিদেশি ব্র্যান্ডের সিগারেটের চালান ধরা পড়লেও আর কোনো চালানের তথ্য কারও কাছে নেই। শুধু মে মাসেই চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের এক কর্মকর্তার অজ্ঞাতে তার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে অ্যাসাইকুডা সফটওয়্যারে ৪০ থেকে ৪৫ বার লগইন হয়েছে। এমনকি তিনি দেশের বাইরে থাকা অবস্থায়ও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। রহস্যজনক এই লগইনের মাধ্যমে এক মাসেই কাস্টমসের অগোচরে অর্ধশতাধিক পণ্য চালান বেরিয়ে গেছে বলে আশঙ্কা করছেন শুল্ক কর্মকর্তারা।

তবে এই ধরনের ঘটনা নতুন কিছু নয়। এর আগেও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আইডি পাসওয়ার্ড হ্যাক করে শতকোটি টাকার মদের চালান খালাস হয়েছে। যদিও পরে র‌্যাবের সহায়তায় আটক করা হয়েছে। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে একটি বিদেশি ‘মন্ড’ ব্র্যান্ডের এক কনটেইনার সিগারেটের চালান আটক করা হয়। এই পণ্য চালানের তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে আসছে ভয়াবহ জালিয়াতির তথ্য। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপকমিশনার মোহাম্মদ জাকারিয়ার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে অ্যাসাইকুডা সফটওয়্যারে প্রবেশ করে এন্ট্রি দেওয়া হয়েছে। অথচ জাকারিয়ার ফোনে কোনো ধরনের ওটিপি আসেনি। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের প্রাথমিক তদন্তে বিষয়টি উঠে এসেছে। তদন্ত প্রতিবেদনে বরিশালের ভান্ডারিয়া থেকে একটি মোবাইল ফোনের আইপি থেকে অ্যাসাইকুডায় প্রবেশ করা হয়েছে বলেও উঠে এসেছে। কিন্তু এনবিআরের নির্ধারিত কিছু ল্যাপটপ বা কম্পিউটার ছাড়া আইডি লগইন করার সিস্টেম নেই। তবুও এই সফটওয়্যারে প্রবেশ করে বড় ধরনের জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে।

জানা গেছ, শুধু মে মাসে এই উপকমিশনারের আইডি ব্যবহার করে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ বার লগইন করা হয়েছে। অথচ এই কর্মকর্তা ওই মাসে বেশ কিছুদিন দেশের বাইরে ছিলেন। আর এনবিআরের আইটি টিমের সহযোগিতায় প্রমাণ মিলেছে তার ফোনে কোনো ওটিপি যায়নি। নির্ধারিত কম্পিউটার ছাড়া অ্যাসাইকুডা সফটওয়্যারে প্রবেশ করতে না পারার কথা থাকলেও অসাধু একটি চক্র জালিয়াতির মাধ্যমে পণ্য খালাস করে নিয়ে যাচ্ছে। তবে ওই চক্রের কোনো হদিস পাচ্ছে না কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এতে এনবিআরের অ্যাসাইকুডার নিরাপত্তা বড় ধরনের প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে একটি বিদেশি সিগারেটের পণ্য চালান আমরা আটক করি গত বৃহস্পতিবার। পরে প্রাথমিক তদন্তে একজন উপকমিশনারের আইডি হ্যাক করে কাজটি করা হয়েছে বলে জানা যায়। বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক প্রতিবেদন আমরা এনবিআরে পাঠিয়েছি। আরও জোরদার তদন্ত চলছে।’

সূত্র জানায়, মূলত অ্যাসাইকুডার দুর্বলতার কারণেই বারবার ভয়াবহ জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে। বেশ কয়েকবার এমন ঘটনা চিহ্নিত হলেও প্রতিবারই নামমাত্র কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে এনবিআর। এ কারণে অসাধু চক্র ফের সক্রিয় হচ্ছে। একজন কর্মকর্তা বিদেশে থাকা অবস্থায় তার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে লগইন করা হলেও অ্যাসাইকুডার দায়িত্বপ্রাপ্তরা তা অস্বীকার করে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

অ্যাসাইকুডা সফটওয়্যারের দ্বিতীয় সচিব হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন এনবিআরের শুল্ক ক্যাডারের কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান। পরে তাকে পদোন্নতি দিয়ে এই শাখার প্রথম সচিব করা হয়। তিনি জনতা মেইলের কাছে দাবি করেন, অ্যাসাইকুডায় এন্ট্রি হলে মোবাইলে ওটিপি যাবেই। এর আগেও বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠলে আমরা চেক করে দেখেছি, তা সঠিক নয়। মোবাইল নম্বরে ওটিপি যাবেই।’

তবে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপকমিশনারের আইডিতে লগইন হলেও তার মোবাইলে কোনো ওটিপি যায়নি। তদন্ত কমিটি এর প্রমাণও পেয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে এনবিআরের সিস্টেম ম্যানেজার জাহিদুর রহমানকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। পরে বিষয়টি উল্লেখ করে খুদেবার্তা পাঠালেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস সূত্রে জানা গেছে, এর আগে তৎকালীন অতিরিক্ত কমিশনার বর্তমানে কমিশনার আবু নূর রাশেদের আইডি ও পাসওয়ার্ড হ্যাক করে শতকোটি টাকার অবৈধ মদের চালান খালাস হয়েছিল। তার ব্যক্তিগত কম্পিউটার থেকেই এটি হয়েছিল। পরে রাব ও শুল্ক গোয়েন্দার সহায়তায় নারায়ণগঞ্জ থেকে ওই চালান আটক করা হয়। ওই ঘটনায় অ্যাসাইকুডা সওফটওয়্যারের সিকিউরিটি নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন ওঠে—যার তদন্ত এখনো চলছে। এরই মধ্যে ভান্ডারিয়া থেকে অ্যাসাইকুডায় এন্ট্রি দিয়ে পণ্য খালাস হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কর্মকর্তার ফোনে কোনো ওটিপি যাচ্ছে না।

সূত্র জানায়, একই আইডি ব্যবহার করে মোংলা কাস্টম হাউসে একটি প্রতিষ্ঠানের নামে পণ্য খালাস হয়েছে বলেও প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া গত ছয় মাসে শতাধিক পণ্য চালান খালাস হয়েছে বলেও আশঙ্কা শুল্ক কর্মকর্তাদের। এতে শতকোটি টাকার রাজস্ব হারানোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে—এমন পণ্য বিনাবাধায় খালাস হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন শুল্ক কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের শুল্ক নীতি ও আইসিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য মো. মাসুদ সাদিক জনতা মেইলকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে দ্রুত একটি প্রতিবেদন পাঠাতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসকে বলা হয়েছে। ওই প্রতিবেদন পাওয়া গেলে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারব।’

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় খবর