সুন্দরগঞ্জের তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পূর্ব পাশের গ্রামগুলোসহ তিস্তার দুই পাড়ের বিস্তৃত এলাকা বৃষ্টি ও বন্যার জলে থইথই করছে। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। মাঝখানে থাকা বাড়ি ও পাড়াগুলো যেন দ্বীপের মতো ভাসছে। বানের জলে ডুবে গেছে কৃষকের ৩৩৫ হেক্টর পাট, ৭৭০ হেক্টর আউশ, ৬৯ হেক্টর শাকসবজি ও ১২৪ হেক্টরের আমন বীজতলা।
পথঘাট ডুবে যাতায়াতের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে বানভাসিদের। ভরসা একমাত্র নৌকা কিংবা ভেলা। কোথাও হাঁটুপানি, কোথাওবা কোমরপানি, আবার কোথাওবা বুক পানি থাকায় রান্না করারও উপায় নেই অনেকের। কখনো একবেলা আহার জুটলেও জুটছে না আরেক বেলা। অনেককেই শুকনো খাবার খেয়েই কাটিয়ে দিতে হচ্ছে দিনরাত। টিউবওয়েলগুলো পানিতে ডুবে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। পরিবার-পরিজন ও হাঁস, মুরগি এবং গবাদিপশু নিয়ে মহাবিপদে পড়েছেন বানভাসিরা।
সর্বনাশা তিস্তা ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে হরিপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের ৪৫০টি পরিবারের বসতবাড়ির সঙ্গে দুটি স্কুল। বাড়িঘর হারিয়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন অন্তত ২ হাজার মানুষ। আর পানিবন্দি হয়েছেন ৯টি ইউনিয়নের ৫৫টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ। এদের মধ্যে কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছেন অন্যের উঁচু বাড়ি কিংবা নিকটস্থ স্কুলগুলোতে। জিনিসপত্র সরাতে পারেননি বলে কেউ কেউ রয়েছেন পানিবন্দি বাড়িতেই।
ভুক্তভোগী বাসিন্দা নিলুফা জানান, জনপ্রতিনিধিরা যদি একটু খোঁজখবর নিতেন তাহলে হয়তো তাদের দুঃখ-দুর্দশা অনেকটা লাঘব হতো।
ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়ায় হরিপুর বিএস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন কয়েকটি পরিবার। দুদিন আগে সেটিও ভেঙে নিয়ে যাওয়ায় এখন স্কুলের সেই ভাঙা মেঝেতে রাতে পলিথিন টানিয়ে থাকেন তারা। ভাঙনের পর এখন আশ্রয়হীন হওয়ায় আশ্রয় চাইছেন তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে।
বন্যায় ২ হাজার পরিবার পানিবন্দি জানিয়ে বেলকা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ বলেন, বন্যার্তদের জন্য এখন পর্যন্ত মাত্র দেড় টন চাল বরাদ্দ পেয়েছি। সামান্য এই চাল কয়জনকে দেওয়া যাবে?
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক বলেন, সকাল ৬টায় ফুলছড়ি পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পানি বিপৎসীমার ৮৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
১৫টি ইউনিয়নের ৫ হাজার পরিবারের প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলামআ বলেন, বন্যায় ১১টি স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত এবং দুটি স্কুলসহ ৪৫০টি পরিবারের বাড়িঘর তিস্তারগর্ভে বিলীন হয়েছে। এরইমধ্যে ২৯ টন জিআর চাল ও ৪শ শুকনো খাবার প্যাকেট বরাদ্দ পেয়েছি। এর মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ১শ শুকনো খাবার প্যাকেট ও ১১ টন চাল এবং তা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।