নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশ সদস্যরা এখনো চিন্তিত; তাই থানায় যোগ দিতে সাহস পাচ্ছেন না।পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, মাঠপর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরে না আসা পর্যন্ত তাঁদের কর্মস্থলে আনা একটা চ্যালেঞ্জ। এমতাবস্থায় রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য এলাকার থানাগুলো শিগগির পুরোদমে চালু করা যাচ্ছে না।
অবশ্য ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) নতুন কমিশনার মো. মাইনুল হাসান যত দ্রুত সম্ভব থানায় বসে কাজ শুরু করার জন্য পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন। অন্তত চেয়ার–টেবিল বসিয়ে দ্রুত মানুষকে সেবা দেওয়া শুরু করতে বলেছেন তিনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার এক সমন্বয় সভায় এ নির্দেশ দেন কমিশনার। ডিএমপির প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ সভায় ঢাকার থানাগুলোর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), অপরাধ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) ও ডিএমপি সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা মতামত তুলে ধরেন। তাতে কর্মকর্তারা বলেন, হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর রাজধানীর থানাগুলোর এখন যে অবস্থা, তাতে কার্যক্রম চালু করতে সময় লাগবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও ব্যাপক প্রাণহানির জেরে ঢাকাসহ সারা দেশে বেশ কিছু থানায় হামলা ও অগ্নিসংযোগ হয়েছে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন এমন একাধিক কর্মকর্তা বলেন, অনেক থানার সবকিছু পুড়ে গেছে। থানায় বসে কাজ করার মতো কোনো অবস্থা নেই। মামলার নথিবদ্ধ করার কম্পিউটার, পুলিশ সদস্যদের যানবাহন, অস্ত্র ও রসদ সামগ্রী, চেয়ার ও টেবিলসহ যা যা ক্ষতি হয়েছে, তার তালিকা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও ব্যাপক প্রাণহানির জেরে ঢাকাসহ সারা দেশে বেশ কিছু থানায় হামলা ও অগ্নিসংযোগ হয়েছে। বিশেষ করে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পুলিশ সদর দপ্তরসহ বেশ কিছু থানা ও পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর হয়। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় অনেক থানা ভবনে। অস্ত্র ও মালামাল লুটের ঘটনাও ঘটেছে। অনেক পুলিশ সদস্য হতাহত হন। এরপর সারা দেশের থানাগুলো পুলিশশূন্য হয়ে পড়ে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়। ফলে পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলা হয়। শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পরপর পুলিশের শীর্ষ পর্যায় থেকে মাঠপর্যায়ের সদস্যরা অনেকটা আত্মগোপনে চলে যান। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় পুলিশ সদর দপ্তর, ডিএমপি কার্যালয়সহ বিভিন্ন কার্যালয়ে কর্মকর্তারা আসতে শুরু করেছেন।
নতুন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম গত বুধবার সব পুলিশ সদস্যকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেন। গতকাল ২৪ ঘণ্টা শেষ হলেও ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ থানায়ই পুলিশ সদস্যদের দেখা যায়নি। থানাগুলো পাহারার দায়িত্ব পালন করছেন আনসার সদস্যরা।
পুলিশ সদস্যরা কর্মস্থলে আসার পথে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন বলে যেসব কথা প্রচার করা হচ্ছে, সেগুলোর সত্যতা পাওয়া যায়নি। গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
এদিকে কর্মস্থলে যোগ দিতে আসা পুলিশ সদস্যদের সহযোগিতা করার জন্য রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও ছাত্রছাত্রীসহ আপামর জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। গতকাল সকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এক খুদে বার্তায় এই আহ্বান জানানো হয়। এতে আরও বলা হয়, পুলিশ সদস্যরা কর্মস্থলে আসার পথে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন বলে যেসব কথা প্রচার করা হচ্ছে, সেগুলোর সত্যতা পাওয়া যায়নি। গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বাড্ডা ও উত্তরা পূর্ব থানায়ও আনসার সদস্য ছাড়া আর কাউকে পাওয়া যায়নি। এর আগের দিন বুধবারও রাজধানীর ভাটারা, বাড্ডা, হাতিরঝিল, শাহবাগ, নিউমার্কেট, ধানমন্ডি ও উত্তরা পূর্ব—এই সাত থানা ঘুরে কোনো পুলিশ সদস্য দেখা যায়নি।
‘দয়া করে সবাই রাষ্ট্রীয় সম্পদ বা স্থাপনায় হামলা বা লুটপাট করা থেকে বিরত থাকি। এসব জনগণেরই সম্পত্তি। যাঁরা এসব করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।’ সাদা কাগজে এই কথাগুলো লিখে হাতিরঝিল থানার মূল ফটকে টাঙিয়ে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
তবে মিন্টো রোডে ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কার্যালয়ে গতকাল অনেক পুলিশ সদস্য এসেছেন। ডিবি কার্যালয়ের মূল ফটকে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। সেখানে রাখা নিবন্ধন খাতায় নাম লিখে ভেতরে প্রবেশ করতে হচ্ছে কর্মকর্তা ও সদস্যদের। সেই খাতার তালিকা অনুযায়ী গতকাল বেলা ২টা পর্যন্ত প্রায় ৯০ জন কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সদস্য ডিবি কার্যালয়ে এসেছেন।
ডিবির একজন অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) বলেন, ডিবি কার্যালয়ের ভেতরে সব তছনছ হয়ে আছে।
বিভিন্ন থানা থেকে পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র, গুলি ও অন্যান্য সরঞ্জাম নিকটস্থ র্যাব কার্যালয়ে ফেরত দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। গতকাল র্যাবের সদর দপ্তর থেকে এক খুদে বার্তায় বলা হয়, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন থানা, ফাঁড়ি ও পুলিশ লাইনস থেকে লুট বা হারানো অস্ত্র ও গোলাবারুদ স্বেচ্ছায় নিকটস্থ র্যাব কার্যালয়ে ফেরত দেওয়ার অনুরোধ করা যাচ্ছে।