রবিবার, নভেম্বর ১৭, ২০২৪
রবিবার, নভেম্বর ১৭, ২০২৪
22 C
Dhaka
Homeরাজনীতিউৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে নবজাগরণে চাঙ্গা হচ্ছে বিএনপি

উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে নবজাগরণে চাঙ্গা হচ্ছে বিএনপি

প্রতিবেদক :জনতা মেইল ডেস্ক
প্রকাশ: আগস্ট ৯, ২০২৪ ৯:৫৭

শেখ হাসিনা সরকারের ভয়াবহ পতনে প্রায় দেড় যুগ পর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। অথচ কিছুদিন আগেও রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশায় ভুগছিলেন তারা। জাতীয় নির্বাচনের আগে আন্দোলন করতে গিয়ে দলটির বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীকে কারাগারে যেতে হয়েছিল।

গত দু-তিন মাসে তাদের বড় অংশই জামিনে মুক্ত হন। তবে কিছুদিনের মধ্যেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হলে আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হন তারা। অনেকে আরেক দফা গ্রেপ্তার হয়ে জেলে যান। রিমান্ডে চরম নির্যাতনের শিকার হন কেউ কেউ। তবে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক বিক্ষোভে এবার সরকারের পতনে আশাবাদী ছিলেন তারা।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। তার পতনের মধ্য দিয়ে বিএনপিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। এরই মধ্যে মুক্তি পেয়েছেন দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দল পরিচালনায় দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান। সব মিলিয়ে হতাশা কাটিয়ে চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন সারা দেশের নেতাকর্মীরা। তাদের পদভারে মুখর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। এতদিন যাদের দেখা যায়নি, এখন তারাও ভিড় করছেন সেখানে। ঢাকায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্ধ থাকা দলীয় কার্যালয়গুলো খোলা হয়েছে। নেতাকর্মীরা নির্বিঘ্নে চলাফেরা করছেন।

গত বুধবার ঢাকার নয়াপল্টনে কোনো ধরনের শর্ত ছাড়াই বাধাহীন সমাবেশ করেছে বিএনপি। যেখানে বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ শীর্ষ নেতারা। দীর্ঘদিন পর দলের শীর্ষ দুই নেতার বক্তব্য শুনতে পেরে নেতাকর্মীরা আবেগাপ্লুত।

ওই সমাবেশে আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে এসে অংশ নিয়ে উল্লাস করেন। নেতাকর্মীদের উচ্ছ্বসিত স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। তাদের চোখে-মুখে ছিল স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্ত বাতাসে বুক ভরে শ্বাস নেওয়ার স্বাদ। তারা বলছেন, বহু বছর পর মুক্ত পরিবেশে স্বাধীনভাবে নিঃশ্বাস নেওয়ার আনন্দ ভাষায় প্রকাশের মতো নয়। কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আরও চাঙ্গা এবং আরও উজ্জীবিত। তবে দীর্ঘদিন পর বিএনপির জন্য মুক্ত পরিবেশ হওয়ায় নানা বঞ্চনা আর দেনা-পাওনার হিসাব মিলাতে গিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল আরও বিস্তার লাভ করতে পারে বলে নেতাকর্মীরা আশঙ্কা করছেন।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল বলেন, ‘আমরা এতদিন ছিলাম শৃঙ্খলাবদ্ধ। ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচার শেখ হাসিনার নির্যাতন-নিপীড়নে দেশের মানুষ বিশেষ করে বিএনপি ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা ছিলেন অতিষ্ঠ। এখন স্বৈরাচার হাসিনার পতনের পর মুক্ত পরিবেশে স্বাধীনভাবে বুক ভরে শ্বাস নিতে পারছি। এর চেয়ে আর আনন্দ কী হতে পারে? তিনি বলেন, গণতন্ত্রের শক্তি হলো মানবাধিকার, যা এতদিন শেখ হাসিনা কেড়ে নিয়েছিলেন। এখন দেশের মানুষ মুক্ত। একটি বাধাহীন পরিবেশে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী হবে। উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সুন্দর নেতৃত্ব তৈরি হবে।’

২০০৬ সালে ক্ষমতা ছাড়ার পর বিএনপির ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন ও ক্র্যাকডাউন শুরু হয়। নির্যাতন এড়াতে দলটির অসংখ্য নেতাকর্মী ছিলেন ফেরারি জীবনে, এমনকি অনেকেই বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। এখন শেখ হাসিনা ও তার সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয়বার স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশে তারা ভয়হীন জীবনে ফিরলেন বলে মনে করছেন। আত্মগোপনে থাকা বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মী রাজধানীতে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেউ কেউ গ্রামের বাড়িতে গিয়ে মা-বাবা কিংবা স্বজনের সঙ্গে স্বাধীনতার আনন্দ ভাগাভাগি করছেন। অনেকেই বন্ধ থাকা মোবাইলও চালু করেছেন।

বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, ‘আমরা সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছি। এখন নতুন পরিবেশে আরও সংঘবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে হবে।’

বিএনপি নেতারা জানান, নির্যাতন সইতে না পেরে বিএনপিসহ মিথ্যা মামলায় কারাগারে থাকার কারণে অনেকেই মা-বাবা এমনকি স্বজনের মুখটিও শেষ পর্যন্ত দেখতে পারেননি। বিদেশে থাকা নেতা কেউ কেউ দেশে ফিরতে শুরু করেছেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দি করা হয়। নির্বাসিত জীবনযাপনে বাধ্য হন তার বড় ছেলে এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কিন্তু ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতন হলে গত ৬ আগস্ট খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ পূর্বক তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তার মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান। হাসিনা সরকারের পতন হওয়ায় তিনি আইনি প্রক্রিয়া শেষে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশ ফিরবেন বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে আমেরিকায় থাকেন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা রাশেদ রহমান। শেখ হাসিনার পতন ও দেশ ছাড়ায় অত্যন্ত খুশি হয়ে মাত্র তিন দিনের মাথায় তিনি বাংলাদেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। গতকাল দেশে ফিরে কথা হয় তার সঙ্গে। রাশেদ রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের মানুষ তথা বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা ছিলেন অজানা আতঙ্কে। এই বুঝি গ্রেপ্তার ও মিথ্যা মামলা হলো। এখন স্বৈরাচার হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে তারা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছেন। এ যেন অন্যরকম অনুভূতি। আগের মতো আর গ্রেপ্তার নির্যাতনের ভয় ছাড়াই তারা স্বাধীনভাবে চলাফেরা ও রাজনীতি করতে পারবেন। ছাত্র-জনতা যে গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়েছে তাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

এ ছাড়া শিগগিরই বিদেশে থাকা বিএনপির অনেক নেতাকর্মী দেশ ফিরবেন। তাদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ভারতের শিলং থেকে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই দেশে ফিরবেন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, জাপান এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে নেতাকর্মীরা দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতি সম্পর্কে নরসিংদী জেলা বিএনপির সদস্য রফিকুল আমিন ভূঁইয়া রুহেল বলেন, ‘ছাত্র-জনতার তুমুল বিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনার পলায়ন এবং আওয়ামী লীগ সরকারের ভয়াবহ পরাজয়ে তারা যারপরনাই খুশি। এখন তারা ভয়হীনভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন। আবারও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সারা দেশের সাংগঠনিকভাবে চাঙ্গা হবেন।’

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় খবর