শনিবার (২৪ আগস্ট) দেশের সম্প্রচার মাধ্যমের সাংবাদিকদের সংগঠন বিজেসির দপ্তর বিভাগ থেকে এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে।
বিজেসি বিবৃতিতে বলেছে, বিগত শাসনামলে নিপীড়নমূলক আইন ও কর্তৃত্ববাদী আচরণ, মালিকানার ধরন ইত্যাদি নানা কারণে টেলিভিশন সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্ত ও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ছাত্র-জনতার সাম্প্রতিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্র তৈরির আশা জেগেছে।
অপরদিকে সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনা পুরোনো উদ্বেগকে নতুন করে হাজির করেছে। অভ্যুত্থানের সময় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বহু সাংবাদিক হতাহত হয়েছেন। অথচ বিজয়ের পর থেকে সর্বশেষ ১৯ আগস্ট পর্যন্ত বেশ কয়েকটি টেলিভিশন ভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। অনেক সাংবাদিক আক্রান্ত হয়েছেন, মিডিয়া হাউস দখলের জেরে চাকরি হারাতে হয়েছে অনেককে।
তাছাড়াও নানারকম মনগড়া তালিকা করে সাংবাদিকদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ রকম পরিস্থিতি সাংবাদিক সমাজের মধ্যে একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেছে, যা বর্তমান সরকারের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার অঙ্গীকারকে চ্যালেঞ্জ করছে।
বিজেসির বিবৃতিতে আরও বলা হয়, একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদ ও বিশেষ প্রতিনিধি ফারজানা রূপাকে সম্প্রতি আটক করার পর তাদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের এবং রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আটকের দিন দায়ের করা মামলার এজাহারে তাদের নাম ছিল না। অসংখ্য ‘অজ্ঞাত আসামির’ মধ্যে তাদের নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এই দুজন সাংবাদিকতার অপব্যবহার বা কোনো দুর্নীতি করে থাকলে তার বিচার হতে পারে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, অপছন্দের কাউকে ফাঁসাতে গত শাসনামলে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত মানবাধিকারবিরোধী হয়রানিমূলক ব্যবস্থার প্রয়োগ এখনো অব্যাহত রয়েছে।
এছাড়াও আদালত প্রাঙ্গণে তারা শারীরিক আক্রমণেরও শিকার হয়েছেন। রিমান্ড শুনানির সময় তাদের পক্ষের আইনজীবীকে হেনস্তা এবং এজলাস কক্ষে একাত্তর টিভির রিপোর্টার ইশতিয়াক ইমনকে মারধর করা হয়।
এদিকে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে গুলিতে শিক্ষার্থী নাঈম হাওলাদার নিহতের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় শেখ হাসিনাসহ একাধিক সাবেক মন্ত্রী-এমপি, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতা, পুলিশ ও র্যাব কর্মকর্তার সঙ্গে সাতজন সাংবাদিককেও আসামি করা হয়েছে।
সাংবাদিকদের সংগঠন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার বিবৃতির সর্বশেষে জানায়, বর্তমান পরিস্থিতির অবসান ঘটিয়ে সাংবাদিকের নিরাপত্তা ও কাজের উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
এক যুগ ধরে ঝুলে থাকা সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার দ্রুত বিচারের দাবি উল্লেখ করে সংগঠনটি বিবৃতিতে বলে, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের ব্যাপারে আইনি সহযোগিতা পেতে পারে তা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছে সংগঠনটি।