সোমবার, ডিসেম্বর ১, ২০২৫
সোমবার, ডিসেম্বর ১, ২০২৫
28 C
Dhaka

১২ জেলায় ১৯ ভোটকেন্দ্রে আগুন 

0

রাত পোহালেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। এরই মধ্যে ভোট বর্জনে ভোটের দিন ও ভোটের আগেরদিন সারা দেশে হরতাল পালন করছে বিএনপি-জামায়াত। শনিবার ছিল হরতালের প্রথম দিন। এদিন দেশের ১২ জেলায় ১৯টি ভোটকেন্দ্রে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।

শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে শনিবার রাত ৮টা পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, শরীয়তপুর, চট্টগ্রাম, শেরপুর, নেত্রকোনা, পটুয়াখালী, খুলনা ও বরগুনা জেলার নিম্নোক্ত কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে-

টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইল পৌরসভার ১ নম্বর ওয়া‌র্ডের কান্দিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকে‌ন্দ্রে এক‌টি প‌রিত‌্যক্ত ঘ‌রে শনিবার সকাল ৬টায় আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।

শরীয়তপুর

শুক্রবার রাতে নড়িয়া উপজেলায় ঘরিষার ইউনিয়নে চরমোহন সুরেশ্বর প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে আগুন দেয়া হয়েছে।

ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রব খান বলেন, আমরা জানতে পেরে ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছি। তিনটি বেঞ্চ পুড়ে যাওয়া ছাড়া ভোটকেন্দ্রটির কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মাহবুবুল আলম বলেন, ৩৭৮টি কেন্দ্রের মধ্যে একটি কেন্দ্রের জানালার গ্লাস ভেঙে দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়েছে। কেন্দ্রটির তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

সুনামগঞ্জ

জেলার মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের গড়াকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে শুক্রবার গভীর রাতে আগুন দেয়া হয়েছে। মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা অতীশ চাকমা বলেন, খবর পেয়েই পুলিশ নিয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। কারা আগুন দিয়েছে, তা অনুসন্ধান করা হচ্ছে।

ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুল আনাম জানান, সকালে বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী অগ্নিসংযোগের খবর দেন। তখন তারা এসে দেখতে পান বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ওই ভবনের দুটি দরজায় অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। পরে তারা দ্রুত আগুন নিভিয়ে ফেলেন। ভবনটির একটি দরজা পুরোপুরি ও আরেকটি দরজা আংশিক পুড়ে গেছে।

টাঙ্গাইল সদর থানার ওসি মোহাম্মদ লোকমান হোসেন বলেন, স্থানীয়রা আগুন নিভিয়ে ফেলায় তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এ ঘটনায় জড়িতদের আটকের চেষ্টা করা হচ্ছে।

খুলনা

শুক্রবার রাতে ডুমুরিয়া উপজেলার খর্ণিয়া ইউনিয়নের টিপনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র ভেবে এবং রূপসা উপজেলার বাগমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে আগুন দেয়া হয়েছে।

ডুমুরিয়া থানার ওসি সুকান্ত সাহা বলেন, ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ভোটকেন্দ্র নয়। কেন্দ্রে ভেবে সেখানে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে বিদ্যালয়ের লাইব্রেরির একটি কক্ষ পুড়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।“

রূপসা থানার ওসি মোহাম্মদ শওকত কবীর বলেন, বাগমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে আগুন দেয়া হয়। তবে নৈশ প্রহরীর চিৎকারে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা আগুন নিভিয়ে ফেলায় সেখানে তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

ময়মনসিংহ

শনিবার ভোরে গফরগাঁও উপজেলায় গফরগাঁও ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পরশীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এবং সকাল ৯টার দিকে নান্দাইল উপজেলার সিংরইল ইউনিয়নের হরিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

গফরগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, পরশীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস গিয়ে তা নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাটি বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে হয়েছে, নাকি নাশকতা তা তদন্ত করা হচ্ছে। তবে আগুনে তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি, কেন্দ্রে ভোট নেয়ার মত পরিস্থিতি আছে বলে জানান তিনি।

নান্দাইল থানার ওসি মো. আব্দুল মজিদ বলেন, হরিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে কিভাবে আগুন লেগেছে, তা জানার চেষ্টা চলছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়েছে। কেন্দ্রের তেমন ক্ষয়ক্ষতি না হওয়ায় এখানে ভোট হবে।

হবিগঞ্জ

মধ্যরাতে চুনারুঘাট উপজেলায় লক্ষ্মীপুর বাজার সংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।

চুনারুঘাট থানার ওসি হিল্লোল রায় বলেন, খবর পাওয়ার পর পরই ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখার পাশাপাশি আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে জানা গেছে, আগুন কয়েকটি কক্ষে ছড়িয়েছিল। বেঞ্চসহ অন্যান্য আসবাবপত্র পুড়েছে এতে। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

গাজীপুর

শুক্রবার দিবাগত রাতে গাজীপুর মহানগরের ওয়্যারলেস গেট এলাকায় পূর্ব চান্দনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক ইউনিয়নের বাঁশতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ-আল-আরেফিন বলেন, রাত সোয়া ১টার দিকে দুর্বৃত্তরা গাজীপুর মহানগরের পূর্ব চান্দনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অফিস কক্ষের একটি জানালা দিয়ে ভেতরে থাকা আলমারীতে পেট্রোল ও আগুন ছুড়ে পালিয়ে যায়। আগুন দ্রুত আলমারিতে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে জয়দেবপুর ফায়ার স্টেশন ও গাজীপুর-চৌরাস্তা মডার্ন ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা গিয়ে আগুন নেভান। আগুনে আলমারিতে থাকা বইপত্র ও প্রয়োজনীয় কিছু কাগজপত্র পুড়ে গেছে।

এ ছাড়া রাতের কোনো এক সময় বাঁশতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে আগুন দেয়া হয় বলে কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার ইফতেখার রায়হান জানান।

গাজীপুর-৩ (শ্রীপুর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রুমানা আলী এবং নগরীর উত্তর রাজবাড়ি এলাকায় গাজীপুর-২ আসনের নৌকার প্রার্থী মো. জাহিদ আহসান রাসেলের নির্বাচনি প্রচার কেন্দ্রে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।

শুক্রবার গভীর রাতে কোনো এক সময় শ্রীপুরের মুলাইদ গ্রামের শফিক মোড়ে এবং নগরীর উত্তর রাজবাড়ি পানির ট্যাঙ্কির উত্তর পাশে প্রচার ক্যাম্পে আগুন দেয়া হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।

বরগুনা

শুক্রবার রাত ১১টার দিকে আমতলী উপজেলায় আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নে দুইটি পাশাপাশি ভোটকেন্দ্রে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।

আমতলী থানার ওসি কাজী শাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, স্থানীয়রা দ্রুত আগুন নিভিয়ে ফেলেন। দুইটি কেন্দ্রের তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। খবর শুনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি।

বরগুনার জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহা. রফিকুল ইসলাম বলেন, দুটো কেন্দ্রে আগুন ধরার পর পরই নিভিয়ে ফেলা হয়েছে। কেন্দ্র দুটিতে ভোট গ্রহণে কেনো ধরনের অসুবিধা হবে না।

পটুয়াখালী

পটুয়াখালীতে শুক্রবার দিবাগত ভোরে পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের শেরেবাংলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে একটি কক্ষে আগুন দিয়ে তিন জোড়া বেঞ্চ পুড়িয়ে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। নৈশ প্রহরী প্রথমে দেখে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এরই মধ্যে স্কুলের হলরুমের তিন জোড়া বেঞ্চ আংশিক পুড়ে যায়।

শেরে বাংলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাহিমা মিনি জানান, নৈশ প্রহরীর মাধ্যমে সকালে জানতে পারি আমাদের বিদ্যালয়ের পরীক্ষার হলরুমে কে বা কারা আগুন দিয়েছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে চলে আসি এর পরপর জেলা প্রশাসক স্যার কে জানাই। তাৎক্ষণিক স্যার এসে পরিদর্শন করেন।

চট্টগ্রাম

শনিবার ভোরে বন্দর থানার দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর ধুপপুল এলাকার নিশ্চিন্তাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আগুন দেয়া হয়।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (বন্দর) শাকিলা সোলতানা বলেন, ভোরে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে আগুন লাগে। শিক্ষার্থীদের বই বিতরণের পর কিছু অবশিষ্ট ছিল। তার মধ্যে ৭০টার মত বই পুড়েছে। এতে কেন্দ্রের কোনো সমস্যা হবে না।

শেরপুর

শনিবার সকালে সদর উপজেলার বাজিতখিলা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্র মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তবে অগ্নিকাণ্ডের কারণ এখনও জানা যায়নি। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, ভোরে সদর উপজেলার বাজিতখিলা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্র মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্টোররুমে আগুন জ্বলতে দেখেন স্থানীয়রা। পরে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে একটি ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে বিদ্যালয়ের স্টোররুমে থাকা কয়েকটি বেঞ্চ পুড়ে গেছে।

নেত্রকোনা

নেত্রকোনা-৩ (আটপাড়া-কেন্দুয়া) আসনের কেন্দুয়া উপজেলায় চারটি ভোটকেন্দ্রে শুক্রবার দিবাগত রাত একটার দিকে চারটি পৃথক স্থানে এ ঘটনা ঘটে। এতে এক বিদ্যালয়ের একটি দরজা আংশিক পুড়ে গেছে। এ ছাড়া কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

যে চারটি কেন্দ্রে আগুন দেয়া হয়েছে, সেগুলো হলো সান্দিকোনা ইউনিয়নের ডাউকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুরচাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাঘবেড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নওপাড়া ইউনিয়নের দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। তবে কেন্দুয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা সেলিম মিঞা তিনটি কেন্দ্রে আগুন দেয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন।

 

মগবাজার ও ‍মুগদায় ককটেল বিস্ফোরণ

0

রাজধানীর মগবাজার ও মুগদায় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার (৬ জানুয়ারি) রাত পৌনে দশটার দিকে পৃথক এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

মুগদা ঝিলপাড় ওয়েসিস স্কুল ভোট কেন্দ্রের সামনে রাত সাড়ে ৯টায় বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যায়। এছাড়া মগবাজার মোড়ে ২টি ককটেল বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে।

মুগদা থানার অফিসার ইনচার্জ তারিকুজ্জামান বলেন, ‘এখনো এ ধরনের খবর আমার জানা নেই। তবে এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখবো।’

এদিকে প্রায় একই সময়ে মগবাজার মোড়ে ৩টি ককটেল বিস্ফোরিত হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, পরপর ২টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। এতে আশপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে এ ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের আগ মুহূর্তে বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলগুলোর হরতালসহ আন্দোলন কর্মসূচির মধ্যে রাজধানীতে এই ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটল।

এর আগে শুক্রবার গোপীবাগে চলন্ত ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় অন্তত ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও শুক্রবার সন্ধা থেকে সারাদেশে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থাপিত ভোটকেন্দ্র, যানবাহন ও অন্যান্য একাধিক স্থাপনায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

ভোট দিতে পারবেন না মাহি-ডলি

0

রাত পোহালেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। ভোটের মাঠে বেশ কয়েকজন তারকা প্রার্থী হয়েছেন। তবে প্রার্থী হয়েও ভোট দিতে পারবেন না চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি ও কণ্ঠশিল্পী ডলি সায়ন্তনী।

মাহিয়া মাহি প্রথমবারের মতো লড়ছেন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী তিনি। তার প্রতীক ট্রাক।

রাজশাহীর প্রার্থী হলেও মাহি রাজধানীর উত্তরার ভোটার। তবে নিজে প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচনী এলাকায় থাকতে হচ্ছে তাকে। এ কারণেই নিজের ভোট দেয়া হচ্ছে না মাহিয়া মাহির।

অন্যদিকে, পাবনা-২ (বেড়া-সুজানগর) আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) থেকে নির্বাচন করছেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ডলি সায়ন্তনী। এই গায়িকার প্রতীক নোঙর। তিনিও প্রথমবার নির্বাচনে লড়ছেন।

জানা গেছে, রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকার ভোটার ডলি সায়ন্তনী। তবে পাবনায় থাকায় ভোট দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

পলাশবাড়ীতে নৌকার প্রার্থীর বাসভবনে হামলা, প্রাইভেটকার ভাঙচুর

0

গাইবান্ধা-৩ (পলাশবাড়ী-সাদুল্লাপুর) আসনের নৌকার মনোনীত প্রার্থী আইনজীবী উম্মে কুলসুম স্মৃতির বাসভবনে হামলা হয়েছে।

শনিবার (৬ জানুয়ারি) বিকেলে পলাশবাড়ী পৌর শহরের কালীবাড়ি বাজারের বাসভবনে এ ঘটনা ঘটে।

এ সময় বাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ বাড়ির সামনের সড়কে থাকা সংসদ সদস্যর ছোট ভাই আমিনুল ইসলাম পাপুলের একটি প্রাইভেট কার ভাঙচুর করা হয়।

এ ব্যাপারে আইনজীবী উম্মে কুলসুম স্মৃতি বলেন, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তাঁর বাসায় আকস্মিক হামলা চালায় বিএনপি-জামায়াতের নেতা–কর্মীরা। তাঁরা ভবনে ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ বাসার সামনের সড়কে থাকা সাংসদের ছোট ভাই আমিনুল ইসলাম পাপুলের প্রাইভেটকার ভাঙচুর করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

প্রত্যক্ষদর্শী জামালপুর গ্রামের সুজন মিয়া জানান, হামলাকারী ৫০-৬০ জনের অধিকাংশরাই ছিল মাস্ক-হেলমেট পড়া।

এ ব্যাপারে পলাশবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরজু মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিতসহ গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

নাশকতার ব্যাপারে গোপন তথ্য ছিল, র‍্যাব

0
নিজস্ব প্রতিবেদক | জনতা মেইল
নিজস্ব প্রতিবেদক | জনতা মেইল

গোপীবাগে ট্রেনে অগ্নিসংযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাবে র‍্যাবের মহাপরিচালক খুরশীদ হোসেন এ কথা বলেন। সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আজ শনিবার রাজধানীর মিরপুর কলেজে ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেন র‍্যাবের মহাপরিচালক। পরে সার্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থা বিষয়ে জানাতে কলেজ মাঠে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, গতকাল ট্রেনে বড় ধরনের নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। আজ শনিবার থেকে বিএনপির ৪৮ ঘণ্টার হরতাল শুরু হয়েছে। এই পরিস্থিতির মধ্যে আপনি মনে করেন যে ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন?
জবাবে র‍্যাব মহাপরিচালক বলেন, ‘আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল যে এ ধরনের নাশকতা হতে পারে। কিন্তু কোথায় নাশকতা ঘটানো হবে, তা নিশ্চিত করে জানা কঠিন ছিল। নাশকতার জন্য বিএনপি-জামায়াত ভোট বর্জন করলেও মানুষ নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন। সে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। গতকাল রাতে ট্রেনে কারা আগুন লাগিয়েছে, সে বিষয়ে এখনই মন্তব্য করা যাবে না। এ বিষয়ে তদন্ত ও অনুসন্ধান চলছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গতকাল (শুক্রবার) তিনজনকে আটক করেছি। তাদের কাছে পেট্রোল বোমা পাওয়া গেছে ২৮টি, ককটেল পাওয়া গেছে ৩০টি। তাদের আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে র‍্যাবের মহাপরিচালক বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন করার অন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয় করে র‍্যাব পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। সবাই যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন, সে জন্য র‍্যাব প্রস্তুত রয়েছে। ইতিমধ্যে সারা দেশে র‍্যাবের সব ইউনিট স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে টহল শুরু করেছে, সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রেখেছে। গুজব প্রতিরোধে সাইবার জগতে নজর রাখছে র‍্যাব। র‍্যাবের সুইপিং দল, ডগ স্কোয়াড, বোমা উদ্ধার ও নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট কাজ করছে। বিশেষ প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য র‍্যাবের হেলিকপ্টার প্রস্তুত রয়েছে। টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্পন্ন করতে প্রস্তুত রয়েছে।
র‍্যাবের মহাপরিচালক বলেন, র‍্যাব বিশেষ ধরনের নতুন ডিভাইস চালু করেছে। নির্বাচনের দিন এক এলাকার মানুষ অন্য এলাকায় গেলে ওই যন্ত্র তাঁকে শনাক্ত করবে।

র‍্যাব তৎপর থাকবে, যাতে এক এলাকার মানুষ অন্য এলাকায় ভোট দিতে বা নাশকতা ঘটাতে না পারে। যৌক্তিক কোনো কারণ ছাড়া এক এলাকার মানুষ অন্য এলাকায় যেতে পারবেন না। নির্বাচন কমিশনের অনুমোদন নেওয়া ব্যক্তিরাই শুধু মোটরসাইকেল চালাতে পারবেন। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতসহ কিছু দল নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। মানুষের ব্যক্তিগত অধিকার রয়েছে ভোট দেওয়া কিংবা না দেওয়া। কিন্তু তাঁরা যদি ভোট দিতে বাধা বা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন, সেটা হবে সম্পূর্ণ বেআইনি ও অসাংবিধানিক। যাঁরা এই বেআইনি কাজ করবেন, তাঁদের কঠোর হস্তে দমন করবে।

র‍্যাবের মহাপরিচালক বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে গত নির্বাচনের পর ক্যাপিটল বিল্ডিং হামলা হয়েছে, ভারতেও নির্বাচনের সময় বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে সহিংসতা হয়, লোক মারাও যায়।

২০১৪ ও ২০১৮ সালের তুলনায় এবার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভালো বলে উল্লেখ করেন র‍্যাবের মহাপরিচালক। তিনি গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার জন্য সাংবাদিকদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।

র‍্যাবপ্রধান খুরশীদ হোসেন বলেন, র‍্যাব নির্বাচনে তিনটি পর্যায়ে (ফেজ) দায়িত্ব পালন করছে। নির্বাচন–পূর্ববর্তী পর্যায় আজ শেষ হচ্ছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে আগামীকাল ভোটকেন্দ্র ও কেন্দ্রসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; নিরাপদে ভোট দিয়ে মানুষ যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে পারেন, সে ব্যবস্থা করা। তৃতীয় পর্যায় হলো নির্বাচন–পরবর্তী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা। অনেক সময় বিজয়ী ও পরাজিত প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, সহিংসতা হয়। এসব বিষয় মাথায় রেখে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে র‍্যাব।

‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ ট্রেনে আগুন: নিহত ৪

0

রাজধানীর গোপীবাগে ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৪ জন নিহত হয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের ৭টি ইউনিটের চেষ্টায় রাত ১০টা ২০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) রাত ৯টার দিকে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা মহানগর পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার ইকবাল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে তাদের পরিচয় জানা যায়নি।’

ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার রাকিবুল হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ট্রেনটি চলন্ত অবস্থায় ছিল। ট্রেনের চারটি বগি পুড়ে গেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সাতটি ইউনিট।’

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ট্রেনটির ‌’চ’ বগির একটি সিটে প্রথমে আগুন লাগে। প্রাথমিক পর্যায়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন যাত্রীরা। পরে আগুন ছড়িয়ে পড়লে যাত্রীরা প্রত্যক্ষদর্শীদের সহায়তায় নিচে নেমে আসেন। তবে এ সময় অনেক যাত্রী ভেতর থেকে বের হতে পারেননি বলে শঙ্কা রয়েছে। বের হতে না পারাদের মধ্যে একজনকে বগিতে আগুনে দগ্ধ হতে দেখা যায়। তবে ভেতরে কত লোক আছে সেটা জানা যায়নি।

রাজশাহী ও ফেনীর তিনটি ভোটকেন্দ্রে আগুন

0

রাজশাহীতে দুটি ভোটকেন্দ্রে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এর মধ্যে বাঘা উপজেলায় একটি ও অপরটি বাগমারা উপজেলায়।  বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) রাতের কোন একসময় এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

অপরদিকে, ফেনীর সোনাগাজীতে একটি ভোটকেন্দ্রে পেট্টোল ঢেলে আগুন দেয়া হয়েছে।  আজ শুক্রবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলার চরদরবেশ ইউনিয়নের চরসাহাভিকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, আগুনে বাঘা উপজেলার আড়ানী ইউনিয়নের জিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষের ১৫টি চেয়ার, টেবিল, আলমারিসহ আসবাবপত্র পুড়ে গেছে। এছাড়া বাগমারা উপজেলার গনিপুর ইউনিয়নের গনিপুর আক্কেলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কিছু বইপত্র ও আসবাবপত্র পুড়ে গেছে।

অপরদিকে, সোনাগাজীতে ভোটকেন্দ্রে আগুন লাগার খবরে তাৎক্ষণিক ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ ঘটনায় স্কুলের শিক্ষক মিলনায়তনের কক্ষের আলমিরায় থাকা ডকুমেন্ট, চেয়ার, টেবিল পুড়ে যায়।

ডেঙ্গুতে আরও এক জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৭৫

0

সারাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭৫ জন।

বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ৭৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকাতে ২৭ জন এবং সারা দেশে (ঢাকা সিটি ব্যতীত) ৪৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে মোট ১৫৩ ডেঙ্গুরোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ৪২ জন এবং সারা দেশের (ঢাকায় ব্যতীত) বিভিন্ন হাসপাতালে থেকে ১১১ জন ছাড়পত্র পেয়েছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত একজন ঢাকার সিটির হাসপাতালে মারা যান। চলতি বছরের এ যাবৎ মোট তিনজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ২৯০ জন। এর মধ্যে ঢাকাতে ৯৮ জন ও সারা দেশে (ঢাকা সিটি ব্যতীত) ১৯২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে এ পর্যন্ত ৫৩২ ডেঙ্গুরোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ১৫৬ জন এবং সারা দেশের (ঢাকা সিটি ব্যতীত) বিভিন্ন হাসপাতাল ৩৭৬ জন ছাড়পত্র পেয়েছেন।

বর্তমানে সারা দেশে মোট ৪৮৩ ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন। ঢাকায় ২৪৪ জন এবং সারা দেশে (ঢাকা সিটি ব্যতীত) ২৩৯ রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট এক হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়, পাশাপাশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন মোট তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন।

স্মার্ট সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ চাইঃ প্রধানমন্ত্রী

0
অনালাইন ডেস্ক । জনতা মেইল
অনালাইন ডেস্ক । জনতা মেইল

সংসদ নির্বাচনে দলীয় ইশতেহার নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভী রহমানসহ ২২ নেতাকর্মীকে, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া, আওয়ামী লীগ নেতা আহসানউল্লাহ মাস্টার, মঞ্জুরুল ইমাম, মমতাজ উদ্দিনসহ দলের ২১ হাজার নেতাকর্মীকে স্মরণ করেন। 

১৯৭৬ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত বাংলাদেশের অবৈধ সরকারগুলো দীর্ঘ ১৬ বছরে মাথাপিছু আয় মাত্র ৫ ডলার বাড়ায়। জাতির পিতার আমলে প্রবৃদ্ধি ৯ শতাংশ অতিক্রম করে। কিন্তু ‘৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর থেমে যায় বাংলাদেশের সব উন্নয়ন অগ্রগতি।’ 

দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘৭৫-এর পরবর্তী অবৈধ সরকারগুলোর জনবিচ্ছিন্নতা, লুটপাট ও দর্শনবিহীন রাষ্ট্র পরিচালনা বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাহীন রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ পরিচিতি পেয়েছিল বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস এবং ভিক্ষুক-দরিদ্র-হাড্ডিসার মানুষের দেশ হিসেবে। তখন দেশে দারিদ্রের হার ছিল প্রায় ৫৫ শতাংশ। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আমরা দারিদ্র্য বিমোচনে বেশ কিছু যুগান্তকারী উদ্যোগ নেই। আমরা পার্বত্য শা‌ন্তিচুক্তি করে পাহাড়ে শা‌ন্তি প্রতিষ্ঠা করি। দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য বিভিন্ন ভাতা চালু, তাদের জন্য বিশেষ কর্মসূচি যেমন-আশ্রয়ণ প্রকল্প, ঘরে ফেরা, কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের মতো কর্মসূচি দারিদ্র্য বিমোচন এবং প্রান্তিক মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখে। কৃষক ও কৃষি-বান্ধব নীতি গ্রহণের ফলে দেশ দ্রুত খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। পাশাপাশি আমরা বিভিন্ন খাতে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী নীতিমালা নেই, যার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়েছে অর্থনীতিতে।’

২০০১ সালের ১৫ জুলাই আওয়ামী লীগ সরকার শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশ যখন আর্থিক স্থবিরতা কাটিয়ে আর্থসামাজিক উন্নয়নের মহাসড়কে অভিযাত্রা শুরু করে, ঠিক তখনই ২০০১ সালে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিএনপি-জামাত আবার ক্ষমতায় আসে। রাষ্ট্রীয় ছত্রছায়ায় শুরু হয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন। ২১ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়। শুধু রাজনৈতিক কারণে বহু চলমান উন্নয়ন প্রকল্প স্থগিত করে দেওয়া হয়। “হাওয়া ভবন” খুলে অবাধে চলতে থাকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুঃশাসন।’ 

তিনি বলেন, ‘২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে গ্রেনেড হামলা করে ২২ নেতাকর্মীকে হত্যা এবং ৫০০ জনের বেশি মানুষকে আহত করে। জেলায় জেলায় বোমা হামলা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি, সেশনজট, ছাত্রছাত্রীদের অনিশ্চিত জীবন ছিল বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময়কার সাধারণ চালচিত্র। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, অস্ত্র চোরাকারবারি, মানি লন্ডারিং, ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ, হাওয়া ভবনের দ্বৈত শাসনে জনজীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছিল। মেয়াদ শেষে ২০০৬ সালে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নির্বাচন দেওয়ার কথা থাকলেও বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে নানা ছলচাতুরির আশ্রয় নিতে থাকে। নির্বাচনে কারচুপির উদ্দেশ্যে ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটারসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন এবং আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন গঠন করে। তাদের এসব কর্মকাণ্ড বাংলাদেশকে অন্ধকারের পথে ধাবিত করে। যার ফলে দেশে জরুরি অবস্থা জারি হয়। সামরিক বাহিনী অন্তরালে থেকে ক্ষমতা দখল করে। ইয়াজুদ্দীন, ফখরুদ্দীন, মইনুদ্দীনের এই সরকার জনগণের অধিকার হরণ করে তাদের ওপর স্টিমরোলার চালানো শুরু করে। প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোকে ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নেয়। আমাকে ও আমার দলের বহু নেতাকর্মীসহ অন্যান্য দলের নেতাকর্মীদের বন্দি করা হয়। ভিন্ন দল গঠন করার চেষ্টা করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেয়।’ 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে সচেতন দেশবাসী ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ায়। জনগণের আন্দোলনের মুখে তারা নবম সংসদ নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। তবে নির্বাচন সংস্কারের যে দাবি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট উপস্থাপন করেছিল, সেগুলো থেকে তারা কিছু বিষয় কার্যকর করে। যেমন-ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন, ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার লিস্ট বাতিল এবং স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ব্যবহার।’ 

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৫ বছর আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশের মধ্যে বিরাট ব্যবধান। মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটেছে। মানুষ আজ স্বপ্ন দেখে উন্নত জীবনের। স্বপ্ন দেখে সুন্দরভাবে বাঁচার।’

এরপর তিনি ২০০৬ সালে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের শেষ বছরে বাংলাদেশের অর্থ-সামাজিক অবস্থার সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০০৯-২০২৩ সাল পর্যন্ত অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরেন।

তিনি জানান, প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ, মাথাপিছু আয় ৫ গুণ বৃদ্ধি। বাজেটের আকার ১২ গুণ বৃদ্ধি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ১৩ গুণ বৃদ্ধি। জিডিপির আকার ১২ গুণ বৃদ্ধি। বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ ৩৬ গুণ বৃদ্ধি। রপ্তানি আয় ৫ গুণ বৃদ্ধি। বার্ষিক রেমিটেন্স ৬ গুণ বৃদ্ধি। বৈদেশিক বিনিয়োগ এফডিআই ৫ গুণ বৃদ্ধি। একজন কৃষি-শ্রমিকের ক্রয় ক্ষমতা ৩ গুণ বৃদ্ধি। শ্রমিকদের মজুরি ৯ গুণ বৃদ্ধি। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৬ গুণ বৃদ্ধি। রপ্তানি আয় ৫ গুণ বৃদ্ধি। দারিদ্র্য হার ৪১ দশমিক ৫১ শতাংশ থেকে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে হ্রাস। অতি দারিদ্র্য হার ৫ গুণ কমেছে।  

এছাড়া, সুপেয় পানি ৫৫ শতাংশ থেকে ৯৮ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি। স্যানিটারি ল্যাট্রিন ৪৩ দশমিক ২৮ শতাংশ থেকে ৯৭ দশমিক ৩২ শতাংশ বৃদ্ধি। শিশু মৃত্যুহার হাজারে ৮৪ থেকে কমে ২১ জন। মাতৃ মৃত্যুহার প্রতি লাখে ৩৬০ জন থেকে কমে ১৫৬ জন। মানুষের গড় আয়ু হয়েছে ৭২ দশমিক ৮ বছর। 

বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৮ গুণ বেড়েছে। বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগের হার ২৮ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ বৃদ্ধি। সাক্ষরতার হার ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি। কারিগরি শিক্ষা ২২ গুণ বৃদ্ধি। দানাদার শস্য উৎপাদন ৪ গুণ বৃদ্ধি হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। ঢাকায় মেট্রোরেল চালু করেছি, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে, পাতাল রেলের কার্যক্রম উদ্বোধন করেছি। রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করেছি। উদ্বোধন করা হয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল। চট্টগ্রামে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম পাতাল সড়কপথ ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ নির্মাণ করেছি। কক্সবাজারে দৃষ্টিনন্দন রেলস্টেশন স্থাপন করে ঢাকা-কক্সবাজার রেলরুট চালু করেছি। ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ উৎক্ষেপণ করা হয়েছে।’  

তিনি বলেন, ‘অর্থনীতির যে কোনো সূচকে বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০০৯ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়ে উৎকর্ষতা সাধন হয়েছে। ২০০৯ সালে জিডিপির পরিমাণ ছিল মাত্র ১০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২৩ সালে জিডিপির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ৪৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যায়। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মোট ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ৭ গুণের বেশি বৃদ্ধি পায়।  ২০০৯ সালের জুন পর্যন্ত ২২ হাজার কোটি টাকার মন্দ ঋণ ছিল, যা মোট ঋণের ১০ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস শেষে ছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকার মন্দ ঋণ, যা মোট প্রদত্ত ঋণের ৯ দশমিক ৯ শতাংশ।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা সমালোচনা করেন, দুঃখের বিষয় যে তারা সঠিক তথ্যটা জাতির সামনে তুলে ধরেন না। দেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা তাদের চরিত্র। মনে হয়, বাংলাদেশের জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নতি দেখলে তারা বিমর্ষ হয়ে পড়ে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আজকে আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাইতে হাজির হয়েছি। এই উন্নয়নকে টেকসই করা, আপনাদের জীবন মান উন্নত করা, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত স্মার্ট সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ চাই।’

৬, ৭, ৮ জানুয়ারী হরতাল ডেকেছে বিএনপি

0
নিজস্ব প্রতিবেদক | জনতা মেইল
নিজস্ব প্রতিবেদক | জনতা মেইল

আগামী শনিবার (৬ জানুয়ারি) সকাল ৬টা থেকে ৮ জানুয়ারি সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টার হরতাল পালন করবে বিএনপি ও তার শরিক দল গুলো। এর মধ্যে রোববার (৭ জানুয়ারি) জাতীয় নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে।

এ ছাড়া হরতালের আগে আগামীকাল শুক্রবার মিছিল ও গণসংযোগ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি।

গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পরদিন ২৯ অক্টোবর সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছিল বিএনপি। এরপর আরও কয়েক দফা হরতাল পালন করেছে তারা।

সরকারবিরোধী চলমান আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় হরতালের পাশাপাশি ২৮ অক্টোবরের পর থেকে বেশ কয়েক দফায় দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচিও পালন করেছে বিএনপি। বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচন এবং নেতা-কর্মীদের মুক্তি ও হয়রানি বন্ধের দাবিতে এসব কর্মসূচি পালন করেছে দলটি। বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বিভিন্ন দল ও জোটও পৃথকভাবে হরতাল-অবরোধ পালন করে আসছে। গত কিছুদিন ধরে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো ভোট বর্জনের আহবান জানিয়ে গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করে আসছে।