ওজন কমানোর কথা ভাবলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে কঠিন ডায়েট চার্ট, ঘণ্টার পর ঘণ্টা জিমে ঘাম
ঝরানো কিংবা পছন্দের খাবার ত্যাগের এক বিভীষিকাময় ছবি।
কিন্তু পুষ্টিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের মতে, জীবনযাত্রায় খুব সামান্য কিছু পরিবর্তন আনলে কোনো ক্র্যাশ ডায়েট বা জিম ছাড়াই ১০ থেকে ২০ কেজি ওজন কমানো সম্ভব। স্থূলতা কেবল শরীরের বাহ্যিক সৌন্দর্য নষ্ট করে না, বরং এটি মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে; যার ফলে হতাশা ও আত্মবিশ্বাসের অভাবের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তাই সময় থাকতেই সচেতন হওয়া জরুরি। ওজন কমানোর প্রক্রিয়াকে জটিল না ভেবে নিজের ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে ঘরোয়া উপায়েই সুস্থ থাকা যায়।
প্রতিদিনের কর্মব্যস্ততায় যারা ব্যায়ামের সময় পান না, তাদের জন্য খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনাই ওজন কমানোর প্রধান হাতিয়ার হতে পারে। তবে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন মানেই কেবল সেদ্ধ সবজি খাওয়া নয়, বরং প্রতিদিনের স্বাভাবিক খাবারের মাধ্যমেই ক্যালোরির হিসাব বুঝে রোগা হওয়া সম্ভব।
এই যাত্রায় প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বুঝতে হবে ক্যালোরি, প্রোটিন, ফাইবার ও ফ্যাটের সমীকরণ। নিজের শরীর অনুযায়ী কোন উপাদানটি ওজন বাড়াচ্ছে আর কোনটি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করছে, সেটি শনাক্ত করতে হবে।
এক্ষেত্রে জাঙ্ক ফুড, অতিরিক্ত চিনি, লবণ এবং প্রসেসড খাবার একেবারেই বাদ দেওয়া বাধ্যতামূলক।
সাধারণ সাদা চালের ভাত বা ময়দার পরিবর্তে ব্রাউন রাইস, কিনোয়া কিংবা মাল্টিগ্রেন আটার মতো বিকল্পগুলো খাদ্যতালিকায় যোগ করলে শরীর যেমন কার্বোহাইড্রেট কম পাবে, তেমনি দীর্ঘক্ষণ পেটও ভরা থাকবে। দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার হলো সকালের নাস্তা বা জলখাবার, যা কোনোভাবেই এড়িয়ে যাওয়া চলবে না।
প্যাকেটজাত স্ন্যাকসের বদলে ঘরে ভাজা মাখানা, ছোলা, বাদাম বা ওটস খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে এবং পাউরুটি এড়িয়ে চলাই শ্রেয়। বর্তমান সময়ে ওজন কমানোর অত্যন্ত জনপ্রিয় ও কার্যকরী পদ্ধতি হলো ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং।
তবে এটি শুরু করতে হবে ধীরে ধীরে এবং শরীরের সামর্থ্য বুঝে। ৬ ঘণ্টা থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে তা ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যেতে পারে, যদিও ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া একান্ত জরুরি।
ওজন কমানোর মূল মন্ত্রটি হলো ‘ক্যালোরি ডেফিসিট’ অর্থাৎ সারাদিনে যতটা ক্যালোরি খরচ হচ্ছে, তার তুলনায় ক্যালোরি গ্রহণ যেন কম থাকে। খাবারে পর্যাপ্ত ফাইবার ও প্রোটিন থাকলে বারবার খাওয়ার প্রবণতা বা ক্রেভিংস কমে যায়। তাড়াহুড়ো না করে এই সাধারণ নিয়মগুলো টানা এক থেকে দেড় মাস মেনে চললেই ওজনে দৃশ্যমান পরিবর্তন আনা সম্ভব।


