শীতকালে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার করা অত্যন্ত জরুরি। এজন্য অনেকেই খাদ্যতালিকায় গুড়কে গুরুত্ব
দেন। শীত মৌসুমে গুড়ের চাহিদা এমনিতেই বেশি থাকে। পিঠা-পুলি থেকে শুরু করে নানা ধরনের মিষ্টান্নে গুড়ের ব্যবহার চোখে পড়ে। তবে গুড়ের উপকারিতা সম্পর্কে সবার স্পষ্ট ধারণা নেই। সম্প্রতি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি গুড়ের স্বাস্থ্যগুণ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখান থেকে গুড়ের এর উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক-
- শরীর উষ্ণ রাখতে সহায়ক
শীতে শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখা বেশ চ্যালেঞ্জিং। গরম পোশাকের পাশাপাশি খাদ্য থেকেও উষ্ণতা পাওয়া সম্ভব। গুড়ে প্রাকৃতিকভাবে উষ্ণতা বৃদ্ধির গুণ রয়েছে, যা শীতকালে শরীরকে উষ্ণ রাখতে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গেছে, গুড় শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে এবং ঠান্ডা আবহাওয়ায় আরাম অনুভব করতে সাহায্য করে। এছাড়া ক্লিনিক্যাল প্রমাণ রয়েছে, সকালে গুড়ের শরবত পান করলে বা খাবারের পর অল্প পরিমাণ গুড় খেলে হজম ভালো হয় এবং শরীর উষ্ণ থাকে।
- হজমে কার্যকর
খাবার খাওয়ার পর সামান্য গুড় খাওয়ার অভ্যাস বহুদিন ধরে প্রচলিত। এটি হজম প্রক্রিয়া দ্রুত করে এবং পেট ফাঁপা কমাতে সাহায্য করে। শীতে হজমশক্তি কিছুটা কমে যাওয়ায় অনেকেই অলসতা কাটাতে গুড় খান। এতে শুধু মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছাই পূরণ হয় না, বরং গুড়ে থাকা প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ উপাদান শরীরকে বাড়তি পুষ্টিও জোগায়।
- রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
গুড়ে থাকা খনিজ পদার্থ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে। এতে জিঙ্ক ও সেলেনিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষুদ্র খনিজ রয়েছে, যা মৌসুমি সর্দি-কাশি ও সংক্রমণের বিরুদ্ধে শরীরকে সুরক্ষা দেয়। নিয়মিত গুড় খেলে শীতকালে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ ও মাথাব্যথার ঝুঁকিও কমতে পারে।
- শ্বাসনালী পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে
শীতে অনেকেরই কাশি, বুকব্যথা ও শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে গুড় কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত গুড় খেলে সুস্থ ব্যক্তিদের শ্বাসযন্ত্রের উপসর্গ হ্রাস পায় এবং ফুসফুসের কার্যকারিতা উন্নত হয়। ফলে শীতজনিত শ্বাসনালীর সমস্যা কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
- আয়রনের প্রাকৃতিক উৎস
গুড় আয়রনের একটি ভালো প্রাকৃতিক উৎস। গবেষণায় দেখে গেছে, ২ মিলিগ্রাম আয়রনযুক্ত গুড় শরীরে শোষিত হয়ে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- ধীরে শক্তি জোগায়
বাজারে পরিশোধিত চিনির তুলনায় গুড়কে স্বাস্থ্যসম্মত বলে মনে করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, গুড়ে থাকা পুষ্টি উপাদান ধীরে ধীরে হজম হয়, ফলে শরীরে ধাপে ধাপে শক্তি সরবরাহ করে। বিপরীতে সাদা চিনিতে ক্যালোরি বেশি থাকলেও ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ থাকে না।
- প্রতিদিন কী পরিমাণ গুড় খাওয়া উচিত
গুড় ও চিনি—দুটিই মিষ্টিজাতীয় খাবার। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে গুড় খাওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি। সুস্থ ব্যক্তিরা পরিমিত পরিমাণে এবং সুষম খাদ্যের অংশ হিসেবে গুড় খেতে পারেন। গুড়ের বিশুদ্ধতা ও ব্যক্তির শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে এর পরিমাণ ভিন্ন হতে পারে, তাই প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই ভালো।
- গুড় খাওয়ার সহজ উপায়
শীতকালে নানাভাবে গুড় খাওয়া যায়। তিলের লাড্ডুতে গুড় ব্যবহার করতে পারেন। বাদাম ভেজে তার সঙ্গে এবং ডালিয়ার সঙ্গে মিশিয়ে বা মাঝে মধ্যে চায়ের সঙ্গেও গুড় খেতে পারেন। এ ছাড়া বিভিন্ন খাবার ও নাশতায় গুড় যোগ করেও এর উপকারিতা পাওয়া সম্ভব।


