বঙ্গোপসাগর এলাকায় সৃষ্ট লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে ইতোমধ্যে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। আবহাওয়া অফিসের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, এই নিম্নচাপটি আগামী ২৭ অক্টোবর সকালে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।
নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে এর নাম হবে ‘মন্থা’। এটি থাইল্যান্ডের দেয়া নাম। স্থানীয় ভাষায় যার অর্থ ‘সুগন্ধি ফুল’ বা ‘সুন্দর ফুল’। আবহাওয়াবিদদের মতে, ঘূর্ণিঝড় মন্থা ‘সিভিয়ার সাইক্লোন’ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, নিম্নচাপটি শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, মন্থা শক্তিশালী হয়ে ‘সিভিয়ার সাইক্লোন’ অর্থাৎ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। বর্তমানে নিম্নচাপটি চট্টগ্রাম থেকে প্রায় ১ হাজার ৩৩০ কিলোমিটার, কক্সবাজার থেকে ১ হাজার ২৫৫ কিলোমিটার, মোংলা থেকে ১ হাজার ৩০৫ কিলোমিটার এবং পায়রা থেকে প্রায় ১ হাজার ২৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছে।
নিম্নচাপটি এখন পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এর কেন্দ্রে ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ৪০ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ায় ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বেগে পৌঁছাতে পারে।
পরিস্থিতি বিবেচনায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্কসংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বলেন, বর্তমান তথ্য অনুযায়ী ২৭ অক্টোবর সকালে নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে তখনই নিশ্চিতভাবে এর গতিপথ বলা সম্ভব হবে। বিভিন্ন গাণিতিক মডেল ইঙ্গিত দিচ্ছে, ২৮ বা ২৯ অক্টোবরের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের অন্ধ্র উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
তবে এর প্রভাবে বাংলাদেশের আবহাওয়ায়ও পরিবর্তন আসবে বলে জানান তিনি। নাজমুল হক বলেন, ২৮ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। খুলনা, বরিশাল ও ঢাকা বিভাগে তুলনামূলক কম বৃষ্টি হতে পারে। চট্টগ্রাম ও সিলেটেও বৃষ্টির পরিমাণ কম থাকবে। তবে রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগে মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক গণমাধ্যমকে জানান, বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি শনিবার মধ্যরাত নাগাদ গভীর নিম্নচাপ ও রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুরের দিকে ঘূর্ণিঝড় মন্থায় রূপ নিতে পারে। তবে নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলেও বাংলাদেশে এর তেমন প্রভাব পড়বে না।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সাল থেকে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের প্রথা চালু করে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও)। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো নিয়ে গঠিত ডব্লিউএমও/এসকাপ প্যানেল অন ট্রপিক্যাল সাইক্লোনস নামের এই আঞ্চলিক কমিটি ঘূর্ণিঝড়ের নামের তালিকা তৈরি ও অনুমোদন করে।
ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, ইরান, কাতার, সৌদি আরব, ইয়েমেন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত নিয়ে গঠিত হয়েছে এই প্যানেলে।


