১১২টি দেশ এ প্রস্তাবটিতে কো-স্পনসর করেছে। জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মোহাম্মদ আবদুল মুহিত বাংলাদেশের পক্ষে প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন।
চলতি বছর আলোচ্য প্রস্তাবটি একটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। কেননা এ বছরে শান্তির সংস্কৃতির ঘোষণা ও এ–বিষয়ক কর্মসূচি ২৫তম বছরে পদার্পণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদে সরকার পরিচালনার সময় ১৯৯৯ সালে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে শান্তির সংস্কৃতির ঘোষণা এবং এ–বিষয়ক কর্মসূচি গৃহীত হয়।
এর পর থেকে প্রতিবছর বাংলাদেশ ‘শান্তির সংস্কৃতি’ রেজল্যুশনটি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে উপস্থাপন করে আসছে, যা শান্তি ও অহিংসার সংস্কৃতি উন্নীত করতে আটটি বিশেষ ক্ষেত্রকে চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী কার্যক্রম গ্রহণে সবাইকে আহ্বান জানিয়েছে।
এ ছাড়া সাধারণ পরিষদের সভাপতির নেতৃত্বে ২০১২ সাল থেকে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ বিষয়ে বাংলাদেশ জাতিসংঘে একটি উচ্চ পর্যায়ের ফোরামের আয়োজন করে আসছে।
প্রস্তাবটি উপস্থাপনের সময় রাষ্ট্রদূত মুহিত বিভিন্ন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের পরিপ্রেক্ষিতে শান্তির সংস্কৃতির অব্যাহত প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, আজ বিশ্ব ক্রমবর্ধমান দ্বন্দ্ব ও মানবিক মর্যাদা অবজ্ঞার মুখোমুখি। এই ক্রমবর্ধমান সংঘাত ও সহিংসতা থেকে উত্তরণে মানবমনে সম্প্রীতি ও সহমর্মিতার ভাব পুনরুজ্জীবিত করতে হবে, সমতা ও সব মানুষের সমমর্যাদার চেতনা সমুন্নত করতে হবে। সর্বোপরি যুদ্ধের চেয়ে শান্তিকে অনেক বেশি লাভজনক করে তুলতে হবে।
এবারের প্রস্তাবে শান্তির সংস্কৃতির ঘোষণা এবং এ–বিষয়ক কর্মসূচির ২৫তম বার্ষিকী যথাযথভাবে পালন ও উদ্যাপনের জন্য সাধারণ পরিষদের সভাপতিকে দিনব্যাপী একটি উচ্চপর্যায়ের ফোরাম আহ্বান করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এ ছাড়া প্রস্তাবে সাধারণ পরিষদের সদস্যরাষ্ট্র, জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থা, নাগরিক সমাজ, বেসরকারি খাত, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যমসহ অন্যান্য অংশীজনের শিক্ষা ও জনসচেতনতা সম্প্রসারণসহ অন্যান্য আয়োজনের মাধ্যমে যথাযথভাবে এই বার্ষিকী পালনের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
যুদ্ধ ও ধ্বংসযজ্ঞে বাংলাদেশের নিজস্ব অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত মুহিত বলেন, ‘জাতিসংঘে শান্তির সংস্কৃতির ধারণা প্রবর্তনে বাংলাদেশের উদ্যোগটি আমাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে অনুপ্রাণিত।’
মুহিত আরও বলেন, ‘বৈষম্য, বর্ণগত অসহিষ্ণুতা এবং পরাধীনতা আমাদের একটি ধ্বংসাত্মক যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করে। এ কারণেই আমরা শান্তির প্রসারকে আমাদের পররাষ্ট্রনীতির একটি মৌলিক নীতিতে পরিণত করেছি।’
প্রস্তাবটি বিবেচনার আগে শান্তির সংস্কৃতির ওপর সাধারণ পরিষদে একটি সাধারণ বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। এতে বহুসংখ্যক সদস্যরাষ্ট্রের প্রতিনিধি বক্তব্য দেন। এ সময় তাঁরা শান্তির সংস্কৃতির ঘোষণা এবং এ–বিষয়ক কর্মসূচি বাস্তবায়নে তাঁদের প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রতিনিধি দলগুলো জাতিসংঘে শান্তির সংস্কৃতির ধারণা সুপ্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক নেতৃত্বের কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানায়।
১১২টি দেশ এ বছর বাংলাদেশের এই প্রস্তাবকে কো-স্পনসর করেছে, যা ‘শান্তির সংস্কৃতি’ শীর্ষক প্রস্তাবের প্রতি জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্রগুলোর অব্যাহত সমর্থনের সাক্ষ্য বহন করে।
ইউএনবি