কুড়িগ্রামে বর্ষার শেষ সময়ের বন্যায় চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন চরাঞ্চলের কৃষকরা। উজানের ঢলে এখনও তলিয়ে আছে নদ-নদী অববাহিকার শতশত হেক্টর জমির আমন, বাদাম, মাসকালাইসহ বিভিন্ন ফসল। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে তৃতীয় দফা বন্যায় কৃষিতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৭ কোটি টাকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বৃষ্টি আর উজানের পানিতে তলিয়ে আছে আমন, বাদাম, মাসকালাইসহ চরাঞ্চলের বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত। দ্বিতীয় দফা বন্যার পর এসব ফসল লাগিয়েছিলেন চরাঞ্চলের কৃষকরা।চরাঞ্চলের ফসলহানির এমন দৃশ্য কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র নদের মুসার চরের। ১০ দিন আগের বৃষ্টি ও উজানের ঢলে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে কৃষকদের রোপণ করা বেশির ভাগ ফসল। শুধু উলিপুরের মুসার চর নয়, জেলার চিলমারী, সদর, নাগেশ্বরী, রৌমারী, রাজিবপুরসহ ৭ উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমারের অববাহিকার দৃশ্য একই রকম।
কৃষকরা জানান, অসময়ের এ বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার সামর্থ্য নেই তাদের। প্রতি বছর বর্ষার শেষ সময়ে চরাঞ্চলের জমিতে এসব ফসল চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করেন নদী পাড়ের কৃষকরা। কিন্তু এবার উজানের পানিতে দীর্ঘ সময় তলিয়ে থাকায় নষ্ট হয়ে গেছে ফসল। এ অবস্থায় সরকারি সহায়তা কামনা তাদের।
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার মুসার চরের বাসিন্দা মতিয়ার রহমান জানান, বর্ষার শেষ সময়ে এভাবে পানি এসে দীর্ঘস্থায়ী হয় না। কিন্তু এ বছর ভারত থেকে বেশি পরিমাণ পানি এসে সব শেষ করে দিয়েছে। আমার ৩ একর জমির আমন ও বাদাম ক্ষেতের মধ্যে ২ একরের বেশি পানির নিচে দীর্ঘ সময় থাকায় নষ্ট হয়ে গেছে।পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন সদরের যাত্রাপুরের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর জানান, আমার ইউনিয়নের সকল চর গ্রামেরই ফসল তলিয়ে আছে। প্রায় ১০ দিন ধরে পানির নিচে থাকায় বেশির ভাগ নষ্ট হয়ে গেছে। পরবর্তীতে সরকারি সহযোগিতা ছাড়া কৃষকরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান জানান, তৃতীয় দফা বন্যায় নিমজ্জিত হয়ে পড়ে জেলার ২ হাজার ৩৬১ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল। আর এরমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে ১ হাজার ১০৭ হেক্টর জমির ফসল। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর কথা জানায় কৃষি বিভাগ।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে শেষ সময়ের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে জেলার ৯ উপজেলার মধ্যে ৭ উপজেলার ১৩ হাজার ১৩৭ জন কৃষক। বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৭ কোটি টাকা।