রবিবার, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৫
রবিবার, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৫
27 C
Dhaka
Homeজেলার খবরকেজিতে বেড়েছে ৪০০ টাকা, ভরা মৌসুমেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ

কেজিতে বেড়েছে ৪০০ টাকা, ভরা মৌসুমেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ

প্রকাশ: আগস্ট ২৯, ২০২৫ ৮:১৩

ইলিশের ভরা মৌসুম চলছে। কিন্তু সাগরে জাল ফেলেও কাঙ্ক্ষিত সেই রূপালি ইলিশ মিলছে না জেলেদের জালে। দেশে ইলিশের জন্য বিখ্যাত উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালী। এখানে ভরা মৌসুমে (বৈশাখ থেকে আশ্বিন) সাগর থেকে নদী অবধি প্রতিটি স্থানে ইলিশ পাওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। এদিকে ঢাকার বাজারে আরও চড়েছে ইলিশের দাম। সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিতে দাম বেড়েছে ৪০০ টাকা পর্যন্ত।

কলাপাড়ার ফিশিং বোটের মাঝি খলিল বলেন, ভেবেছিলাম নিষেধাজ্ঞা শেষ হলে ভালো মাছ পাব। কিন্তু এখন জাল ফেলে অনেক সময় খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। খরচ উঠছে না। দাদনের টাকা কিভাবে পরিশোধ করবো, সেটাই বুঝতে পারছি না।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ভারত ও মিয়ানমারের পতাকাবাহী শত শত জাহাজ আমাদের জলসীমায় ঢুকে লাশা জাল ফেলছে। এতে ছোট-বড় সব মাছ ধরা পড়ে যাচ্ছে। আমাদের কিছুই আর জালে আসছে না।

এদিকে ফরিদপুরেও নদীতে জাল ফেলেও শূন্য হাতে ফিরতে হচ্ছে তাদের। ফলে অনেক জেলে পেশা পরিবর্তনে বাধ্য হচ্ছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হঠাৎ করে পদ্মায় পানি বেড়ে যাওয়ায় মাছ পাওয়া কমে গেছে। পাশাপাশি মেঘনা নদী ও সমুদ্র উপকূলে অতিরিক্ত ইলিশ শিকারের কারণে পদ্মায় আর তেমন ইলিশ প্রবেশ করছে না। যে অল্প কিছু পাওয়া যায়, সেগুলো আকারে ছোট; বড় ইলিশ খুবই কম, ফলে এর দাম সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে।

নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে খালি হাতে ফেরা জেলে মো. মোকলেছুর রহমান বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি উপেক্ষা করে নদীতে গিয়েছি, কিন্তু প্রায় খালি হাতেই ফিরেছি। ছয়-সাতজন মিলে যে কয়টা ইলিশ পেয়েছি, তা বিক্রি করে ইঞ্চিনচালিত নৌকার তেলের টাকাই উঠছে না।

আরেক জেলে আবুল ফরাজি বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাচ্ছি না। মাঝে মাঝে দু-একটা মেলে, তা-ও ছোট আকারের। আমাদের বাপ-দাদার পেশা ইলিশ ধরা, কিন্তু যদি মাছই না পাই, তবে পরিবার নিয়ে বাঁচব কীভাবে? পেশা পরিবর্তন করাও সহজ নয়।

ঢেউখালী ইউনিয়নের পিয়াজখালী বাজারের ইলিশ ব্যবসায়ী মো. জয়নাল মোল্যা বলেন, ভাদ্র মাসের পর কিছুটা ভালো ইলিশ পাওয়া যেতে পারে। তবে ১০-২০ বছর আগের অবস্থা আর নেই। আগে ইলিশ বেশি পাওয়া যেত, দামও ছিল কম। এখন ইলিশ পাওয়া কমে গেছে, আর দাম আকাশছোঁয়া। বর্তমানে পদ্মার ১ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে তিন থেকে চার হাজার টাকায়, ছোট সাইজের ইলিশও এক থেকে দুই হাজার টাকার নিচে নয়।

আকোটেরচর ইউনিয়নের কালিখোলা বাজারে ইলিশ কিনতে আসা ক্রেতা শহিদুল মুন্সী বলেন, বাড়িতে মেহমান আসায় সদর থেকে এসেছি তাজা ইলিশ কিনতে। এখানে ইলিশ আছে বটে, তবে দাম খুব বেশি, সাইজও ছোট। এক ডালা ছোট ইলিশ কিনেছি, কিন্তু অনেক টাকা দিয়ে। বাজারে ইলিশ বেশি থাকলে দামও হয়তো কম হতো।

সদরপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান বলেন, পানি প্রবাহের সঙ্গে ইলিশের আসা-যাওয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। পদ্মায় পানি বেড়ে যাওয়ায় ইলিশ কম ধরা পড়ছে। তবে গত দুই সপ্তাহ ধরে মেঘনায় ভালো ইলিশ ধরা পড়ছে। আশা করছি, পানি কমলে পদ্মাতেও ইলিশের জাল ভরবে।

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল হক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব তো আছেই। পাশাপাশি সাগরে অতিরিক্ত লবণাক্ততা, অসংখ্য ডুবোচর, নদীর নাব্যতা হ্রাস, অবৈধ জাল ব্যবহারের কারণে ইলিশের প্রজনন ও মাইগ্রেশন রীতিমতো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় মৎস্য বন্দর হিসেবে পরিচিত মহিপুর ও আলীপুর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৪০০ গ্রাম সাইজের প্রতিমণ ইলিশের দাম ৬৮ থেকে ৭০ হাজার টাকা, ৮০০-৯০০ গ্রাম সাইজের প্রতিমণ ইলিশ এক লাখ টাকা, এক কেজির বেশি সাইজের প্রতিমণ ইলিশ এক লাখ আট হাজার থেকে এক লাখ ১২ হাজার টাকায় বিক্রি কচ্ছে। বড় আকারের ইলিশের দাম মণ প্রতি ১ লাখ ১২ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

মহিপুর বাজারের এক জেলে বলেন, সাগরে জাল ফেলে কোনো মাছ না পেয়ে অনেক জেলে এখন মাছ ধরা বন্ধ করে ঘরে বসে আছে।

মৎস্য দপ্তরের তথ্যমতে, গত কয়েক বছর ইলিশ আহরণের পরিমাণ ছিল- ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৫১ হাজার ৮৩৯ দশমিক ৫৬৪ টন, ২০২০-২১ অর্থ বছরে ৭০ হাজার ২ টন, ২০২১-২২ অর্থ বছরে ৫৭ হাজার ৯৬৬ দশমিক ৫৫ টন, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ৭২ হাজার ৬৩ টন, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ৫৭ হাজার ৬৭১ দশমিক ২ টন ও ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ৫৪ হাজার ৭০৩ দশমিক১০ টন ইলিশ অহরিত করা সম্ভব হয়েছে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি অর্থ বছরেও ৭২ থেকে ৮০ হাজার টন ইলিশ আহরনের লক্ষ্যমাত্রা আর্জন করা সম্ভব হবে।

কলাপাড়ার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, আধুনিক সরঞ্জামের অভাব, ডুবোচর, নাব্যতা সংকট সব মিলিয়ে ইলিশের মাইগ্রেশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ জন্য স্টক ও মাইগ্রেশন রুট নিয়ে গভীর গবেষণা দরকার।

এদিকে, ইলিশ না থাকায় সপ্তাহ ব্যবধানে ঢাকায় কেজিতে বেড়েছে ৩০০-৪০০ টাকা পর্যন্ত। বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৫০০-২৬০০ টাকায়। এ ছাড়া ১ কেজি ২০০-৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৩০০০-৩২০০ টাকা ও দেড় কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০০ টাকায়। আর ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২০০০-২২৫০ টাকায় এবং ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৮০০ টাকায়।

ঢাকার কাওরান বাজারে এক ক্রেতা বলেন, ইলিশের দাম ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। ইলিশ কেনার সামর্থ্য অনেকেরই নেই, ধরাছোঁয়ার বাইরে। অন্যান্য মাছের দামও বেশ চড়া।

রাজধানীর কাওরান বাজারের ইলিশ ব্যবসায়ী মো. শুকুর আলী বলেন, বাজারে ইলিশের সরবরাহ তেমন একটা নেই। ইলিশ কম আসছে। এতে দাম কমছে না।

 

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় খবর