বিদ্যুৎ বিভাগের উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী, বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগটিতে এমন এক অন্ধকার চক্রে জড়িয়ে পড়েছে। যা সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ধ্বংস করে দিচ্ছে। এ দপ্তরটি এখন যেন “ঘুষ ও দুর্নীতির দুর্গ”
এমনটাই অভিযোগ অসংখ্য ভুক্তভোগী গ্রাহক ও স্থানীয়দের। গণমাধ্যমে বিদ্যুৎ বিভাগের সংবাদ প্রকাশে উপজেলাজুড়ে সমালোচনার ঝড় বইছে।
জানা যায়, ২০২২ সালে নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল মজিদ এখানে যোগদানের পর থেকেই তাঁর নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। ঘুষ বাণিজ্য ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে পুরো বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে জিম্মি করে রেখেছে।
ঘুষ না দিলে হয়রানির শিকার হতে হয়, দপ্তরে দপ্তরে ঘুরতে হয় মাসের পর মাস। অভিযোগ রয়েছে, মিটার রিডিং না দেখেই অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। অভিযোগের সুরাহা তো দূরের কথা, নিরপরাধ গ্রাহকদের নামে বকেয়া বিলের মামলা দেওয়া হচ্ছে, যাদের মধ্যে অনেকেই আসল গ্রাহকই নন।
একটি সূত্র জানিয়েছেন, লাইন মেরামত ও নতুন সংযোগ প্রকল্পের বিল ওঠানোর সুযোগে প্রকৌশলী মজিদ ও তাঁর ঘনিষ্ঠ ঠিকাদাররা সিন্ডিকিটের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে উপজেলার হাসনাবাদ-ইলামেরগাঁও এলাকায় নতুন বিদ্যুৎ লাইন স্থাপনের নামে ২ লাখ টাকার প্রকল্পে আগেই ১ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার একটি ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গেছে।
কাজের অনুমোদন থাকা সত্ত্বেও বাকি ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা না দেওয়ায় প্রকল্পটি ইচ্ছাকৃতভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে। এর আগে সম্প্রতি লাইন মেরামতের নামে ঘুষ বাণিজ্যে জড়িত দুজনকে হাতে-নাতে সেনাবাহিনী আটক করেছিল। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালীদের তদবিরে চার্জশিটে সাক্ষীদের নাম বদলে নিরপরাধিদের জড়ানো হয়, ফলে সিন্ডিকেট আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
সম্প্রতি পৌরসভা এলাকায় ট্রান্সমিটার পরিবর্তনের জন্য ৩ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সিন্ডিকেট সদস্যদের বিরুদ্ধে। এছাড়া কার্ড মিটার অনিয়ম, বকেয়া বিলের জালিয়াতি, লাইনের অদক্ষ মেরামতের কারণে মানুষ ও গবাদি পশুর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। যে কেউ সিন্ডিকেটের অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় মামলা।
অভিযোগ রয়েছে, অনিয়মের দায়ে সিন্ডিকেটের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ও সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল মালেককে পূর্বে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছিল বান্দরবনে। এখন সেই একই পথে হাঁটছেন তাঁর উত্তরসূরি আবদুল মজিদ। যিনি এই দপ্তরকে আবারও দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছেন।
ছাতক পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর মাসুক মিয়া বলেন, বিদ্যুৎ অফিসের দূর্ণীতি ও হয়রানী নতূন কোন বিষয় নয়। ওই দপ্তরের আলী হোসেন নামে এক কর্মচারীর অপসারন দাবী করে গেল ১৯ অক্টোবর এলাকাবাসীর ব্যানারে একটি মানববন্ধন করা হলেও নেয়া হয়নি কোন কার্যকরী ব্যবস্থা। এই সিন্ডিকেটের প্রধান হলো ওই দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল মজিদ। তিনি এদের শাস্তি চান।
ছাতক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম খাঁন বলেন, গণমাধ্যমকর্মীদের বিরুদ্ধে সোমবার ছাতক বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর স্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। তবে বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বিষয়টি আপোষ নিম্পত্তির জন্য আমাকে বলছেন। অনিয়ম-দূর্ণীতির বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আবদুল কাদির।


