বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ২৫, ২০২৫
বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ২৫, ২০২৫
15 C
Dhaka
Homeঅর্থনীতি ও বাণিজ্যকৃষকের ফসল আসছে এবার বীমার আওতায় 

কৃষকের ফসল আসছে এবার বীমার আওতায় 

প্রকাশ: ডিসেম্বর ২৩, ২০২৫ ১২:১৮

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের নেতিবাচক প্রভাবে বাংলাদেশে নানাবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রা বাড়তে থাকায় জলবায়ু সহনশীল অর্থায়ন বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি ও জাতীয় নীতি প্রণয়নে জলবায়ু ঝুঁকি বীমা (সিআরআই) এবং শক্তিশালী গণমাধ্যম সম্পৃক্ততার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন নীতিনির্ধারক, বিশেষজ্ঞ ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় বাংলাদেশে অক্সফাম, ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) ও বিশ্ব খাদ্যকর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) যৌথভাবে আয়োজিত ‘এনহান্সিং মিডিয়া ক্যাপাসিটি অন ক্লাইমেট রিস্ক ইনস্যুরেন্স (সিআরআই)’ শীর্ষক কর্মশালায় ৮০ জনের বেশি জ্যেষ্ঠ অর্থনৈতিক ও পরিবেশবিষয়ক সাংবাদিক, সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতিনিধি, জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ ও সিআরআই বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন।

কর্মশালার লক্ষ্য ছিল জলবায়ু ঝুঁকি বীমা এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী সুরক্ষায় এর ভূমিকা সম্পর্কে গভীরতর ধারণা তৈরি করা।

বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হলেও এখানে বীমা কাভারেজ অত্যন্ত সীমিত। দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) মাত্র ০ দশমিক ৪৮ শতাংশ নন-লাইফ বীমার আওতায় রয়েছে, ফলে বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও খরার মতো দুর্যোগে কোটি মানুষের জীবিকা ও সম্পদ মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ছে।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)-এর চেয়ারম্যান ড. এম আসলাম আলম বলেন, প্রতি বছর জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ও জীবিকা হারাচ্ছে। তাই শক্তিশালী সামাজিক সুরক্ষা ও টেকসই বীমা ব্যবস্থা গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি।

তিনি বলেন, প্রচলিত বীমা ব্যবস্থা অতীত ক্ষতির ওপর নির্ভরশীল, কিন্তু জলবায়ু ঝুঁকি ভবিষ্যৎমুখী। সে কারণে প্যারামেট্রিক বা আবহাওয়াভিত্তিক বীমার প্রয়োজন রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, নাগরিকদের প্রকৃত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হলে আইন সংস্কার, শক্তিশালী ডেটাবেস, প্রযুক্তি ব্যবহার এবং দৃঢ় নিয়ন্ত্রক সহায়তার মাধ্যমে একটি টেকসই জলবায়ু ঝুঁকি বীমা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

২০২৪ সালে কুড়িগ্রামে পরিচালিত সাম্প্রতিক পরীক্ষামূলক প্রকল্পে সিআরআই-এর সম্ভাবনা প্রমাণিত হয়েছে। ডব্লিউএফপি, অক্সফাম ও গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে সূচকভিত্তিক বন্যা বীমা প্রকল্পের আওতায় ২০ হাজারের বেশি বন্যাকবলিত কৃষক মোবাইলের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। ৪০ বছরের বেশি সময়ের বন্যা তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি এ বীমা পণ্যে ব্যক্তিগত ক্ষয়ক্ষতি যাচাই ছাড়াই কয়েক দিনের মধ্যে সহায়তা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা বলেন, জলবায়ু ঝুঁকি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও অভিযোজিত হতে হবে। জলবায়ু বীমা দুর্যোগের ধাক্কা সামলাতে এবং দরিদ্র পরিবারগুলোকে ঋণের ফাঁদে পড়া থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করতে পারে।

তিনি বলেন, নারীরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সংকটকালে যদি আমরা তাদের সময়মতো সহায়তা দিতে পারি, তবে অসংখ্য জীবিকা রক্ষা করা সম্ভব হবে এবং দেশের বিপুল সম্ভাবনা উন্মোচিত হবে।

অক্সফাম ইন বাংলাদেশের ইনফ্লুয়েন্সিং, কমিউনিকেশনস, অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের প্রধান মো. সারিফুল ইসলামের সঞ্চালনায় কর্মশালায় সাংবাদিকদের সিআরআই মডেল, তথ্যসূত্র ও নীতিগত প্রবণতা সম্পর্কে কারিগরি ধারণা দেওয়া হয়।

অংশগ্রহণকারীদের দুর্যোগ-পরবর্তী ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি প্রতিরোধমূলক সমাধান, আর্থিক সুরক্ষা এবং ন্যায়ভিত্তিক বর্ণনায় গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

ডব্লিউএফপি বাংলাদেশ-এর প্রোগ্রাম পলিসি অফিসার নুরুল আমিন বলেন, জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারগুলোর সহায়তার জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষা করা বা অনিশ্চিত মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভর করা উচিত নয়। সিআরআই-এর মাধ্যমে আমরা দুর্যোগ মোকাবিলায় পূর্বানুমেয়তা যুক্ত করছি এবং এ বিষয়ে গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কর্মশালায় প্রযুক্তিগত বিষয়গুলো সাধারণ মানুষের কাছে বোধগম্য করে উপস্থাপনের গুরুত্বও তুলে ধরা হয়।

অক্সফাম ইন বাংলাদেশের ক্লাইমেট জাস্টিস ও ন্যাচারাল রিসোর্স রাইটস বিভাগের প্রধান ড. মোহাম্মদ এমরান হাসান বলেন, জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে বসবাসকারী বাংলাদেশিরা এই সংকট সৃষ্টি করেনি, অথচ তারাই সবচেয়ে বেশি মূল্য দিচ্ছে। এই সুরক্ষা যেন দরিদ্রতম মানুষের কাছে পৌঁছায়, তা নিশ্চিত করতে হবে এবং গণমাধ্যম সেই রূপান্তর ঘটাতে পারে।

এ ছাড়া অক্সফাম ইন বাংলাদেশের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার নাফিসা তাসনিম খান এবং ক্লাইমেট পলিসি স্পেশালিস্ট এস এম সাইফি ইকবাল জলবায়ু পরিবর্তন ও সিআরআই বিষয়ে বিস্তারিত উপস্থাপনা দেন। প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি ফখরুল ইসলাম হারুন বীমা ও সিআরআই নিয়ে প্রতিবেদন তৈরির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে ইআরএফ সভাপতি দৌলত আক্তার মালা বক্তব্য রাখেন এবং সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সূচনা বক্তব্য প্রদান করেন।

বক্তারা বলেন, জলবায়ু ঝুঁকি বাড়তে থাকায় জাতীয় নীতি ও জনসচেতনতার সঙ্গে সিআরআই সংযুক্ত করা এখন আর কেবল বিকল্প নয়, বরং এটি অপরিহার্য।

জীবন ও জীবিকা সুরক্ষায় কার্যকর সমাধান প্রচারে সাংবাদিক, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও উন্নয়ন অংশীদারদের সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়। অক্সফাম, ডব্লিউএফপি ও ইআরএফ সকল অংশীজনকে সিআরআই বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধি ও নীতি সংস্কারে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছে, যাতে বাংলাদেশ মানুষকেন্দ্রিক জলবায়ু অর্থায়নে একটি আঞ্চলিক নেতৃত্বের উদাহরণ হয়ে উঠতে পারে।

 

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় খবর