ভেজানো ছোলা, ভেজানো মুগ, ভেজানো বাদাম, মেথি, এমনকি কিশমিশ ভিজিয়ে তার পানিও খাওয়ার পরামর্শ শুনেছেন। কিন্তু কালো কিশমিশ কখনও ভিজিয়ে খেয়ে দেখেছেন কি? তারকা পুষ্টিবিদ লিউক কুটিনহো বলছেন, পানিতে ভেজানো কালো কিশমিশ যদি রোজ সকালে খালিপেটে খাওয়া যায়, তবে অনেক রোগকে দূরে রাখা যাবে। শুধু তা-ই নয়, নানা ধরনের স্ত্রীরোগের ক্ষেত্রেও এই ‘ওষুধ’ অত্যন্ত কার্যকরী।
কালো কিশমিশ কী?
সাধারণত কিশমিশ হালকা বাদামি রঙেরই বেশি দেখা যায়। এই কিশমিশ তৈরি হয় সবুজ রঙের আঙুরকে রোদে শুকিয়ে কিংবা কারখানায় প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে শুকিয়ে। কালো কিশমিশ তৈরি করা হয় কালো বা গাঢ় বেগনি রঙের আঙুর শুকিয়ে।
কালো কিশমিশ কেন উপকারী?
কালো কিশমিশের ওই গাঢ় রং আসে আঙুরের ঘন বেগনি রং থেকেই। তাই এতেও রয়েছে অ্যান্থোসায়ানিন এবং আরও নানা ধরনের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট। এ ছাড়া কালো কিশমিশে ভিটামিন এবং খনিজের উপস্থিতিও বাদামি কিশমিশের চেয়ে বেশি।
সকালে পানিতে ভিজিয়ে কালো কিশমিশ খেলে কী হবে?
তারকা পুষ্টিবিদ লিউক বলছেন, ‘‘প্রথমত ভিজিয়ে খেলে কিশমিশে থাকা সমস্ত ধুলো-ময়লা বা রাসায়নিক দূর হবে। তার সমস্ত পুষ্টিগুণ শরীরের জন্য সহজ গ্রহণযোগ্য হবে। পাশাপাশি কিশমিশ পানি শুষে ফুলে থাকায় শরীরও আর্দ্র রাখবে।’’ তবে এ ছাড়াও আরও নানা উপকার মিলবে।
১। হজমশক্তি: ভেজানো কালো কিশমিশে ফাইবার বেশি থাকায় তা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। সকালে খালিপেটে খেলে তার কার্যকারিতা আরও বাড়ে। সারা দিনের খাবার হজম করার ক্ষমতা ঠিক থাকে।
২। আয়রনের মাত্রা: কালো কিশমিশে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, যা শরীরে গেলে লোহিত রক্তকণিকা বৃদ্ধি করে। ফলে রক্তাল্পতার সমস্যা মেটে। সার্বিক কর্মশক্তি বাড়ে। খালি পেটে ভেজানো কিশমিশ খেলে তার থেকে আয়রন গ্রহণ করতে সুবিধা হয় শরীরের।
৩। ত্বকের স্বাস্থ্য: কালো কিশমিশে রয়েছে ভিটামিন সি এবং অ্যান্থোসায়ানিন নামের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, যা জোরালো প্রদাহনাশকও। এতে শরীরে ফ্রি র্যাডিক্যালসের আনাগোনা কমে। ত্বকে কোলাজেনের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। ফলে ত্বক থাকে উজ্জ্বল, টানটান।
৪। হার্ট: খালিপেটে ভেজানো কালো কিশমিশ খেলে শরীরে অ্যান্থোসায়ানিন যায় পূর্ণ মাত্রায়। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রেখে উদ্বেগ কমায়। হাইপারটেনশন দূরে থাকে। ফলে হার্টের স্বাস্থ্যও থাকে ভাল।
৫। দাঁত এবং মাড়ি: দাঁতের ক্ষয় রোধ করতে কালো কিশমিশ উপকারী বলে জানাচ্ছেন লিউক। তিনি বলছেন, কালো কিশমিশে রয়েছে ওলেয়ানোলিক অ্যাসিড। যা মুখে জন্মানো অনুজীব এবং ব্যাক্টেরিয়াকে মারতে সাহায্য করে। ফলে মুখে দুর্গন্ধের মতো সমস্যা দূরে থাকে।
৬। স্ত্রীরোগ: রক্ত পরিস্রুত করতে সাহায্য করে কালো কিশমিশ। কালো কিশমিশে থাকা নানা ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিড রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে। ফলে গর্ভাশয় এবং জরায়ুতে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। পিসিওএস, অনিয়মিত ঋতুস্রাবের সমস্যা, ঋতুস্রাবের সময় রক্ত জমাট বাঁধার মতো সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
৭। ক্যানসার: বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, অ্যান্থোসায়ানিনের মতো অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট ক্যানসার প্রতিরোধে কাজে লাগে। শরীরে ক্যানসারের বাসা বাঁধা, তার বৃদ্ধি রোধ করতে সাহায্য করতে পারে কালো কিশমিশে থাকে এই অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট।
কী ভাবে খাবেন?
পুষ্টিবিদ লিউক জানাচ্ছেন প্রতি দিন সকালে ৬-৭টি ভেজানো কালো কিশমিশ খালিপেটে খাওয়া যেতে পারে। কিশমিশ ভাল ভাবে ধুয়ে সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। কেউ কেউ কিশমিশ ভেজানো পানিও খান। তবে লিউকের মতে সেটি ফেলে দেওয়াই ভাল। কারণ তাতে ময়লা থাকতে পারে। ডায়াবেটিকদের ক্ষেত্রে লিউক খালিপেটে ভেজানো কিশমিশ খেতেও বারণ করছেন।