বুধবার, ডিসেম্বর ১৭, ২০২৫
বুধবার, ডিসেম্বর ১৭, ২০২৫
27 C
Dhaka
Homeস্বাস্থ্যমাইক্রোগ্রিনস ‘সুপার ফুড’ নিজেই চাষ করবেন কীভাবে

মাইক্রোগ্রিনস ‘সুপার ফুড’ নিজেই চাষ করবেন কীভাবে

আপডেট: ডিসেম্বর ১০, ২০২৫ ৯:৩৭
প্রকাশ: ডিসেম্বর ১০, ২০২৫ ৯:১৯

পুষ্টিবিদরা জানিয়েছেন, পরিপূর্ণ সবজির তুলনায় মাইক্রোগ্রিনস কয়েক গুণ বেশি পুষ্টিগুণ-সম্পন্ন হওয়ায় একে ‘সুপার ফুড’ বলা হচ্ছে।

কৃষিবিদদের মতে, বাড়ির যে কোনো জায়গায়, স্বল্প পরিসরে এটি সহজে উৎপাদন করা যায় বলেবাংলাদেশে এর উপযোগিতা অনেক বেশি। খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিকের ব্যবহার যখন খাদ্যের পুষ্টিগুণ কমিয়ে দিচ্ছে, তখন ব্যক্তি পর্যায়ে এই সমস্যার সমাধান হিসেবে উঠে এসেছে মাইক্রোগ্রিনস। রাসায়নিকের ব্যবহার ছাড়াই ঘরোয়াভাবে উৎপাদনযোগ্য এই ভোজ্য উদ্ভিদ পরিপক্ব শাকসবজির চেয়ে প্রায় চার গুণ পর্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হতে পারে।

পুষ্টিবিদদের মতে, মাইক্রোগ্রিনস অতিরিক্ত ওজন (অবেসিটি), কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস্ট্রিকসহ নানা রোগের বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখে এবং মানুষের শরীরে আয়রন, পটাশিয়াম, ভিটামিন সি, ই, কে ও বিটা ক্যারোটিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের চাহিদা পূরণ করতে পারে, যা চুল পড়ার সমস্যা ও রক্ত স্বল্পতা নিরসনেও কার্যকর। খাদ্য চাহিদা মেটাতে বিশ্বজুড়ে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া দেশ, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো অধিক জনসংখ্যার দেশে, এই ঘরোয়া কৃষি উৎপাদন একটি নতুন সুযোগ তৈরি করেছে।

মাইক্রোগ্রিনসকে মাইক্রোভেজিটেবল, মাইক্রোলিফি, মাইক্রোগ্রাস বা মাইক্রোপ্ল্যান্ট নামেও ডাকা হয়। সহজভাবে বলতে গেলে, এগুলি হলো সাত থেকে দশ দিন বয়সের শাকসবজির চারা, যা বীজপত্র (বীজ থেকে প্রথম পাতা) সম্পূর্ণরূপে গঠিত হওয়ার ঠিক পরই সংগ্রহ করা হয়, অর্থাৎ স্প্রাউটসের পরের ধাপ।

লালশাক, মুলা, লেটুস, বাঁধাকপি বা ব্রকোলির মতো যেকোনো শাকসবজির বীজ একটি ট্রে বা বাটিতে তৈরি বিজতলায় ছিটিয়ে দিলে সাত থেকে দশ দিনের মাথায় যখন অঙ্কুরিত হয়, তখনই সেটিকে মাইক্রোগ্রিন বলা হয় এবং এই চারাগাছ এক বা দুই সপ্তাহ বয়সেই কাঁচা খেতে হয়।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, যারা সীমিত জায়গায় চাষ করতে চান, তাদের জন্য এটি একটি মূল্যবান ফসল এবং পুষ্টিমান কমে যাওয়া খাদ্যের প্রেক্ষাপটে এটি বেশ সহায়ক একটি উপায় হতে পারে। তবে এটির উৎপাদনে প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো কিছুটা ব্যয়সাপেক্ষ হওয়ায় বাংলাদেশে এর প্রচলন এখনো কম।

এই ‘সুপার ফুড’ উৎপাদন প্রক্রিয়া অত্যন্ত সহজ এবং কম সময় লাগে। বাড়ির বারান্দা বা ছাদে যেকোনো ফুড গ্রেড পাত্রে, এমনকি ভাঙা বোতলেও এটি চাষ করা সম্ভব।
উদ্যোক্তা রিফাত খান তুষার জানান, সফলভাবে উৎপাদনের জন্য শুরুতেই সঠিক উপকরণ এবং বীজ নির্বাচন করা জরুরি। দ্রুত বর্ধনশীল সূর্যমুখী, মূলা, মটরশুঁটি এবং সরিষার বীজ নতুনদের জন্য সবচেয়ে সহায়ক হতে পারে। এই বীজগুলোকে এক রাত ভিজিয়ে রাখলে অঙ্কুরিত হয় দ্রুত। মাইক্রোগ্রিনস উৎপাদনে রাসায়নিক সার বা কীটনাশকের কোনো প্রয়োজন নেই। একটি ট্রে বা পাত্রে দুই ইঞ্চির মতো মাটির স্তরের সঙ্গে নারকেলের আঁশ কম্পোস্ট করে তৈরি বিশেষ মিশ্রণ ব্যবহার করতে হয়।

এরপর ভালো করে ভিজিয়ে ঘনভাবে মাটির ওপর বীজগুলো ছিটিয়ে দিতে হয় এবং মাটির আরেকটি স্তর দিয়ে হালকাভাবে ঢেকে দিতে হয়। অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের জন্য ছিদ্রযুক্ত সমতল ট্রে ব্যবহার করা এবং সরাসরি পানি না দিয়ে ওয়াটার স্প্রে ব্যবহার করার পরামর্শ দেন তিনি, যাতে পানি জমে না থাকে।

তুষার আরও জানান, এটি সব আবহাওয়ায় জন্মায়, তবে তীব্র গরমে কিছুটা বেশি পানি স্প্রে করতে হয়।

কৃষি গবেষক ও পুষ্টিবিদরা বলছেন, মাইক্রোগ্রিনসে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, পলিফেনল এবং গ্লুকোসিনোলেটের মতো যৌগ রয়েছে, যা সাধারণ সবজির চেয়ে বেশি।

প্যান স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষক ডি জিওইয়ার মতে, মাইক্রোগ্রিনস কার্যকরী খাবারে পরিণত হয়েছে যা ভোক্তা নিজেই তার রান্নাঘরের যে কোনো সাধারণ পাত্র ব্যবহার করে সহজেই উৎপাদন করতে পারেন।

পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিফ ডায়েটিশিয়ান নিশাত শারমিন নিশি জানিয়েছেন, মাইক্রোগ্রিনসে থাকা ফাইবার, ভিটামিন ও মিনারেলস মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, লিভার ডিটক্সিফিকেশনে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য, রক্ত স্বল্পতা এবং চুল পড়ার সমস্যা নিরসনে ভূমিকা রাখতে পারে।

তবে, এটি হাই-প্রোটিন যুক্ত খাবার হওয়ায় শিশুদের এটি না খাওয়ানোই উচিত এবং পটাশিয়াম ও আয়রনের পরিমাণ বেশি থাকায় যাদের হার্টের সমস্যা বা অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই খাওয়া উচিত।

 

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় খবর