বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ২৫, ২০২৫
বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ২৫, ২০২৫
14 C
Dhaka
Homeজীবনযাপন১১ টি অভ্যাস মস্তিষ্ককে দীর্ঘকাল সচল রাখতে পারে

১১ টি অভ্যাস মস্তিষ্ককে দীর্ঘকাল সচল রাখতে পারে

প্রকাশ: ডিসেম্বর ২২, ২০২৫ ৭:৪৯

আমাদের অনেকেরই এখন দিন কাটে অন্ধকার ঘরে একা শুয়ে-বসে কিংবা কানে হেডফোন গুঁজে উচ্চশব্দে গান শুনে। আপাতদৃষ্টিতে এসব অভ্যাসকে সাধারণ মনে হলেও এগুলো নীরবে আপনার মস্তিষ্কের বারোটা বাজাচ্ছে।

হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজিক্যাল ডিজঅর্ডার্স অ্যান্ড স্ট্রোকের মতোবিশ্ববিখ্যাত গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য অনুযায়ী, আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের অন্তত ১১টি অভ্যাস মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে এবং আলঝেইমার্স বা ডিমেনশিয়ার মতো কঠিন রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

মস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে অপর্যাপ্ত ঘুমকে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন অন্তত ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুমের প্রয়োজন। ঘুমের সময় মস্তিষ্ক বিষাক্ত পদার্থ পরিষ্কার করে নতুন কোষ তৈরি করে। কিন্তু ঘুম কম হলে কোষ গঠন বাধাগ্রস্ত হয়, যার ফলে মনোযোগ কমে যায় ও মেজাজ খিটখিটে হয়ে ওঠে। ঘুমানোর সময় মাথা ঢেকে রাখা আরও একটি বিপজ্জনক অভ্যাস, কারণ এতে মস্তিষ্কে অক্সিজেনের ঘাটতি তৈরি হয়।

শুধু ঘুম নয়, সকালের নাস্তা এড়িয়ে যাওয়াও সমান ক্ষতিকর। সারারাত না খেয়ে থাকার পর সকালে পুষ্টি না পেলে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যায়, যা দীর্ঘমেয়াদে মস্তিষ্কের কোষের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়।

আমাদের মস্তিষ্কের ৭৫ শতাংশই পানি, তাই পর্যাপ্ত পানি পান না করলে মস্তিষ্কের টিস্যু সংকুচিত হয়ে যৌক্তিক চিন্তার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। পাশাপাশি অতিরিক্ত মানসিক চাপ এবং সারাদিন শুয়ে-বসে থাকার অভ্যাস মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল কর্টেক্সকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। কায়িক শ্রমের অভাব ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়, তাই নিয়মিত হাঁটাচলা ও ব্যায়াম করা অপরিহার্য। আধুনিক যুগে প্রযুক্তির ওপর অতি-নির্ভরশীলতাও মস্তিষ্কের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সবকিছু গুগল সার্চ করার প্রবণতা আমাদের নিজস্ব চিন্তাশক্তি ও স্মরণশক্তিকে দুর্বল করে দিচ্ছে। স্মৃতিশক্তি শাণিত রাখতে শব্দজট বা পাজল মেলানোর মতো বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা জরুরি।

উচ্চশব্দে গান শোনা বা দীর্ঘক্ষণ হেডফোন ব্যবহার শ্রবণশক্তির স্থায়ী ক্ষতির পাশাপাশি মস্তিষ্কের টিস্যুকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। এছাড়া সামাজিক মেলামেশা বন্ধ করে একা থাকা কিংবা সারাক্ষণ নেতিবাচক চিন্তা করা মস্তিষ্কে ক্ষতিকর প্রোটিন জমতে সাহায্য করে, যা পরবর্তীকালে স্মৃতিভ্রংশের কারণ হয়। পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের অভাব বা অন্ধকার ঘরে সময় কাটানোও মস্তিষ্কের ওপর বিরূপ চাপ সৃষ্টি করে; বিশেষ করে সূর্যের আলোর অভাব বিষণ্নতা তৈরি করতে পারে।

খাদ্যাভ্যাস এবং লাইফস্টাইলও মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড, চিনিযুক্ত পানীয় বা পরিমাণের চেয়ে বেশি খাবার খেলে মস্তিষ্কের ধমনীতে রক্তপ্রবাহ কমে যায়। একই সঙ্গে ধূমপান ও মদ্যপান মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস বা স্মৃতি জমানোর অংশটির বিকাশ রুখে দেয়।

সবশেষে, বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হলো অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম। মোবাইল বা কম্পিউটারের পর্দার সামনে দীর্ঘ সময় কাটানো, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে সেরিব্রাল কর্টেক্স পাতলা করে দেয় এবং ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশনের কারণে টিউমারের ঝুঁকি তৈরি করে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অভ্যাসগুলো পরিবর্তন করে স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গ্রহণ করলেই কেবল মস্তিষ্ককে দীর্ঘকাল সচল ও প্রাণবন্ত রাখা সম্ভব।

 

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় খবর