শুক্রবার, নভেম্বর ৭, ২০২৫
শুক্রবার, নভেম্বর ৭, ২০২৫
26 C
Dhaka
Homeআন্তর্জাতিকমামদানির জয়,ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নতুন দিকনির্দেশনা,ব্যতিক্রমী ঘটনা  নাকি ?

মামদানির জয়,ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নতুন দিকনির্দেশনা,ব্যতিক্রমী ঘটনা  নাকি ?

আপডেট: নভেম্বর ৫, ২০২৫ ৬:৪৭
প্রকাশ: নভেম্বর ৫, ২০২৫ ৬:৪৫

নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে জোহরান মামদানির জয় এখন পুরো যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। প্রশ্ন উঠেছে—এটা কি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা, নাকি কেবল এক ব্যতিক্রমী অধ্যায়?

মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমোকে পরাজিত করে মামদানির জয় শুধু নিউইয়র্ক নয়, জাতীয় পর্যায়েও বড় বার্তা দিয়েছে। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে আবারও শ্রমজীবী

মানুষের পাশে ফিরিয়ে আনার, তাও এমনভাবে—যাতে পূর্বে উপেক্ষিত মতামতও স্থান পায় মূলধারায়।

কুয়োমো এই নির্বাচনি লড়াইকে বলেছিলেন ‘দলের গৃহযুদ্ধ’— যেখানে তার মতো মধ্যপন্থীদের বিপরীতে দাঁড়িয়েছেন মামদানির মতো নতুন প্রজন্মের প্রগতিশীলরা।

ব্রুকলিনের ৬৮ বছর বয়সী ভোটার মাইকেল ব্ল্যাকম্যান বলেছিলেন, ‘মামদানি অন্তত আদর্শে বিশ্বাসী। তিনি পুরনো প্রতিষ্ঠানের বাইরে এসে নতুন চিন্তা এনেছেন।’ তার মতে, কুয়োমো ‘একই পুরনো’ রাজনীতির প্রতিনিধি, যার সঙ্গে ধনীদের যোগসূত্র এবং এমনকি ডোনাল্ড ট্রাম্পেরও প্রভাব রয়েছে।

প্রগতিশীল সংগঠন জাস্টিস ডেমোক্র্যাটস এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘জোহরানের জয় প্রতিটি প্রতিষ্ঠিত, করপোরেট ডেমোক্র্যাটের জন্য সতর্কবার্তা—আপনি যদি সাধারণ মানুষের স্বার্থে কাজ না করেন, আপনার সময় ফুরিয়ে আসছে।’

নতুন মডেল নাকি ব্যতিক্রম?

বিশ্লেষকরা বলছেন, মামদানির প্রচারণা এখন ডেমোক্র্যাটদের জন্য এক নতুন মডেল হতে পারে। তিনি যেমন ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্টস অব আমেরিকার সদস্য, তেমনি ফিলিস্তিনের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার জন্যও আলোচিত। এই অবস্থানেই অনেকে আশঙ্কা করছেন, আসন্ন ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে পার্টি কিছু ভোট হারাতে পারে।

সিনেটর চাক শুমারও পুরো নির্বাচনে নিরপেক্ষ ছিলেন। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ট্রিপ ইয়াং মনে করেন, মামদানির জয় আসলে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির অগ্রযাত্রার দিকটাই দেখিয়ে দিচ্ছে—যেখানে লেবেল নয়, কার্যকর নেতৃত্বই মুখ্য।

ইয়াং বলেন, ‘আপনি নিজেকে সমাজতন্ত্রী, মধ্যপন্থী বা রক্ষণশীল যেভাবেই পরিচয় দিন না কেন, ভোটাররা জানতে চান আপনি তাদের বাস্তব সমস্যার কথা বলছেন কি না।’

তার মতে, নিউইয়র্কে সেই বাস্তব সমস্যা হলো ‘অর্থনৈতিক সহনশীলতা’। মামদানি এটিকেই কেন্দ্র করে ইতিবাচক প্রচারণা চালিয়েছেন—এটাই তার শক্তি।

ইয়াং আরও বলেন, ‘অনেক ডেমোক্র্যাট শুধু নিরাপদ জায়গায় প্রচারণা চালান। মামদানি এর ব্যতিক্রম—তিনি সমালোচনামূলক মিডিয়ার মুখোমুখি হয়েছেন, জনগণের মাঝে থেকেছেন।’

‘সময়ের সংজ্ঞায়িত ইস্যু’

বার্ড কলেজের ইতিহাসবিদ ড্যানিয়েল ওরটেল-লন্ডনের মতে, ‘সহনশীলতা এখন আমাদের সময়ের সংজ্ঞায়িত ইস্যু।’

লন্ডন বলেন, ‘মামদানি দেখিয়েছেন, অর্থনৈতিক ন্যায্যতা ও সামাজিক ন্যায়বিচার একসাথে এগিয়ে নেওয়া যায়।’

এই অবস্থানই তাকে প্রগতিশীল শিবিরে জনপ্রিয় করেছে—বিশেষত গাজা গণহত্যার বিরুদ্ধে তার কণ্ঠের কারণে। যদিও কুয়োমো তাকে ‘সন্ত্রাসপন্থী সহানুভূতিশীল’ বলে আক্রমণ করেছেন, তবু মামদানি তার অবস্থান থেকে সরে আসেননি।

তার এক সমর্থক, শাবনাম সালেহজাদেহি বলেন, ‘মামদানি নীতিতে আপস করেন না। তিনি ফিলিস্তিনিদের মানবতা দেখেন, সেই কারণেই তিনি আলাদা।’

এখন মামদানির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ—নিজের উচ্চাকাঙ্ক্ষী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা। করপোরেট ট্যাক্স ও ধনীদের ওপর কর বাড়ানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তিনি গভর্নর ও আইনসভায় বড় বাধার মুখে পড়তে পারেন।

তবে ইতিহাসবিদ ওরটেল-লন্ডনের মতে, ‘শক্ত নেতৃত্ব ও দৃঢ়তা দেখাতে পারলে তিনিও সফল হতে পারেন—যেমন একসময় রিপাবলিকান মেয়র ব্লুমবার্গ ট্যাক্স বাড়াতে পেরেছিলেন।’

নিউইয়র্কের ৩৪ বছর বয়সী ভোটার সামাদ আহমেদ বলেন, ‘প্রথমবারের মতো মনে হয়েছে, এমন একজন প্রার্থী আছেন যিনি আমাদের প্রতিনিধিত্ব করেন। কিন্তু এখন তার ওপর দায়িত্ব—তিনি যেন আমাদের বিশ্বাস ঠিক প্রমাণ করেন।’

সামাদ আরও যোগ করেন, ‘নিউইয়র্কাররা সরাসরি কথা বলে—যদি তিনি ব্যর্থ হন, তাকে বিদায় জানাতে সময় লাগবে না।’

সব মিলিয়ে, মামদানির জয় শুধু নিউইয়র্কের নয়, ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনার এক বড় পরীক্ষার সূচনা।

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় খবর