বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টােবর) দক্ষিণ কোরিয়ার গিয়ংজু শহরে অনুষ্ঠেয় এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপেক) সম্মেলনের ফাঁকে দুই দেশের শীর্ষনেতার এ বৈঠক ঘিরে বিশ্বজুড়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে
বিশ্লেষকদের মতে, বৈঠকে কিছু ইতিবাচক অগ্রগতি হলেও, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের গভীর বাণিজ্যিক ও ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের সমাধান আপাতত দৃষ্টিগোচর নয়। বরং এ বৈঠক মূলত উত্তেজনা কমানোর জন্যই বেশি প্রাসঙ্গিক বলে মনে করছেন তারা। খবর আল জাজিরার।
ট্রাম্প ও শি-র সম্ভাব্য চুক্তির মূল বিষয়গুলো হলো—চীনের বিরল খনিজ রপ্তানির ওপর পরিকল্পিত নিষেধাজ্ঞা স্থগিত রাখা, যুক্তরাষ্ট্রের ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি প্রত্যাহার, চীনের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন ক্রয় বৃদ্ধি, মাদক তৈরিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক রপ্তানি রোধে যৌথ উদ্যোগ এবং টিকটক চুক্তিতে সম্মতি।
তবে এসব পদক্ষেপে সাময়িক স্বস্তি এলেও বিদ্যমান শুল্ক, নিষেধাজ্ঞা ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বহাল থাকায় দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্কের মৌলিক পরিবর্তন ঘটবে না। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পণ্যের ওপর গড়ে ৫৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ রয়েছে, আর চীনে মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক ৩২ শতাংশের কাছাকাছি।
ওয়াশিংটন ইতোমধ্যে শত শত চীনা প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে, যেগুলোকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। চীনও পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে মার্কিন কোম্পানিগুলোকে ‘অবিশ্বস্ত’ তালিকায় যুক্ত করেছে এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধাতু ও খনিজ রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে।
এদিকে সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রপ্তানি ২৭ শতাংশ কমেছে, যা টানা ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে বড় পতন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনে আমদানি কমেছে ১৬ শতাংশ।
বেইজিংয়ের রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওয়াং ওয়েন মনে করেন, ‘চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মৌলিক দ্বন্দ্ব এখনো অমীমাংসিত। ভবিষ্যতে সম্পর্ক আরও খারাপ হতে পারে। তবে চীনের শক্তি ক্রমেই বাড়ছে এবং একসময় তা যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাবে।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প ও শি-র বৈঠকে আপাতত কোনো বড় চুক্তি না হলেও, উভয় পক্ষের সাময়িক সমঝোতা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে কিছুটা স্থিতি আনতে পারে। তবে দুই দেশের সম্পর্কের মূল টানাপোড়েন – প্রযুক্তি, বাণিজ্য ও ভূরাজনীতির প্রতিযোগিতা – অদূর ভবিষ্যতে কমার সম্ভাবনা খুবই কম।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেনিস ওয়াইল্ডার বলেন, ‘বৈঠক থেকে কিছু ইতিবাচক বার্তা পাওয়া যেতে পারে, তবে এটি বাণিজ্যযুদ্ধের সমাপ্তি নয়। ট্রাম্পের সম্ভাব্য চীন সফর পর্যন্ত আলোচনা চলবে।’
ওয়াইল্ডার আরও বলেন, ‘চীন চায় পারস্পরিক শ্রদ্ধা, আর যুক্তরাষ্ট্র চায় আধিপত্য। এই বৈপরীত্য দূর না হলে সম্পর্কের প্রকৃত উন্নতি সম্ভব নয়।’


