গত সোমবার (২৭ অক্টোবর) ভুক্তভোগীদের চলাচলের আর কোন রাস্তা না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে অবরুদ্ধ থাকার পর রাস্তা উদ্ধারের দাবিতে সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের আশুহস্তক্ষেপ কামনা করে ভুক্তভোগী পরিবার উপজেলা
নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগপত্র দিয়েছেন।
সম্প্রতি ওই এলাকার মুজাম্মেল বেপারী ও তার ভাই রাস্তাটি তাদের ব্যক্তিগত বলে দাবি করে টিন ও কাঠের বেড়া দিয়ে প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে চলাচলের মূল রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। অবরুদ্ধ হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে প্রায় ১০টি পরিবারের লোকজন।
সরেজমিনে উপজেলায় উত্তর হলদিয়া ২নং ওয়ার্ড বাসারকান্দী এলাকার মো. মিজান শেখ, মো. রাসেল শেখ, মো. রাব্বী শেখ, নুর মোহাম্মদ শেখ, নিহার বেগম, আনছার আলী ও খোকন শেখের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তাদের বাড়ির চলাচলের রাস্তা টিন কাঠের বেড়া দিয়ে চলাচলের পথ অবরুদ্ধ করে দিয়েছে প্রতিবেশীরা। এ রাস্তা দিয়ে অন্তত ১০টি পরিবারের লোকজন এবং শিক্ষার্থীরা চলাচল করে। রাস্তায় টিনের বেড়া দেওয়ার ফলে স্থানীয় লোকজনের পাশাপাশি স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় অনেক দূর ঘুরে বিকল্প রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বাসিন্দাদের।
ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর দাবি, প্রশাসনের দ্রুত উদ্যোগে জরুরি ভাবে চলাচলের উপযুক্ত একটি রাস্তা বা পথ নিশ্চিত করে দেওয়া হোক, যাতে স্কুল, কলেজ মসজিদ, হাসপাতালে যাতায়াত, মরদেহ বহনসহ জরুরি সেবা গ্রহণ ও দৈনন্দিন জীবনযাপন স্বাভাবিক হয়।
জমেলা বেগমসহ গণস্বাক্ষরিত অভিযোগপত্রে স্বাক্ষরকারী ভুক্তভোগীরা উল্লেখ করেন- তারা সবাই উত্তর হলদিয়া গ্রামের বাসিন্দা। অন্তত ৫০ বছর ধরে অত্র গ্রামের বাসিন্দারা মূল রাস্তায় চলাচলের জন্য পাশের অন্যান্য মালিকগণদের ব্যক্তিগত সম্পত্তির পায়ে হাটা পথ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। সম্প্রতি পাশের জমির মালিকগণ ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে জমির সীমানায় টিন কাঠের বেড়া দিয়ে সেই পথ অবরুদ্ধ করে ফেলায় লোকজন বাড়ি থেকে বের হওয়া ও প্রতিদিনকার স্বাভাবিক জীবনযাপনসহ সবকিছুই দুর্ভোগে পড়েছেন। একাধিক বার জমির মালিক পক্ষগণদেরকে অনুরোধ করলেও তারা তাদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। রাস্তা খোলা না থাকায় বাধ্য হয়ে অন্য সরু পথ ব্যবহার করছেন। এতে করে অত্র এলাকার জনগণ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।
মৃত নুরইসলাম শেখের ছেলে ভুক্তভোগী মো. মিজান শেখ বলেন, অনেক বছর ধরে আমরা এই রাস্তাটি ব্যবহার করে আসি। প্রতিবেশী মুজাম্মেল গং নিজেদের জমির সীমানায় বেড়া দিয়েছে, ফলে আমাদের চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বাড়ি থেকে বের হতে পারছি না। পাশের সরু পথ দিয়ে বাড়িতে ঢুকতে হয়, যা খুবই কষ্টসাধ্য।
অবরুদ্ধ নিহার বেগম (৬৭) প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়ে আর্তনাদ করে বলেন, আমাগো এহন লাশ বাইর করার মতো কোন রাস্তা নাই, মইরা গেলে কেমনে বাইর করবো?
মইরা গেলে যাতে লাশটা বাইর করতে পারে ততটুকু রাস্তা কইরা দেন। প্রতিবেশী আমাগো চলাচলের রাস্তা বন্ধ কইরা দিছে। তাগোরে জিগাইলে কয় এইডা আমাগো জমি, আমাগো জমি আমরা বেড়া দিছি, আপনেরা কেমনে বাইর হইবেন তা আপনেগো বিষয়। আমরা এহন অসহায়ভাবে জীবনযাপন করতাছি।
ভুক্তভোগী রাসেল শেখ, রাব্বী শেখ, নুর মোহাম্মদ শেখ, খোকন শেখ ও আনছার আলী বলেন, আমাদের বাড়ি থেকে বের হওয়ার কোনো বিকল্প রাস্তা নেই। আমরা মধ্যবিত্ত ও গরীব মানুষ আমাদের অন্য কোথাও জমিও নেই। প্রশাসনের কাছে আমাদের একটাই দাবি দয়া করে বাড়ি থেকে বের হওয়ার জন্য যাতায়াতের রাস্তা করে দিন।
রাস্তাটি বন্ধ করা প্রসঙ্গে অভিযুক্ত প্রতিবেশী মুজাম্মেল বেপারী ও মো. কামাল বলেন, কাগজপত্রে এখানে কোনো রাস্তা নেই। আগে খোলা ছিল বলে মানুষ যে যার মত রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করতো। এখন আমরা আমাদের জমির সীমানায় বেড়া দিয়েছি। যদি পাশের জমির মালিকরা রাস্তা দেয়, তাহলে আমরাও দিবো।তবে রাস্তার পরিবর্তে তাদের অন্যস্থানে জমি দিতে হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নেছার উদ্দিন বলেন, এই বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি৷ বিষয়টি দেখতে হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তার নিকট পাঠানো হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে ৷


