শনিবার, নভেম্বর ১৬, ২০২৪
শনিবার, নভেম্বর ১৬, ২০২৪
29 C
Dhaka
Homeমতামতব্যাংকিং খাতে শিল্প বিপ্লবের সুফল কাজে লাগাতে হবে

ব্যাংকিং খাতে শিল্প বিপ্লবের সুফল কাজে লাগাতে হবে

প্রকাশ: ডিসেম্বর ৯, ২০২৩ ৭:১৯

এই উপমহাদেশে গত ১০০ বছরে কত সীমানা বদলেছে, দেশ স্বাধীন হয়েছে। পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্ত হয়েছে জাতি। বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে। আবার স্বৈরাচারী সামরিক শাসনের কঠিন বেড়াজালে বন্দি হয়েছে। আবার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন জোরদার হয়েছে। স্বৈরাচার সামরিক শাসন বিদায় নিয়েছে। জনতার আন্দোলনের মুখে টিকতে পারেনি। এই সময়ে পৃথিবীটাও বদলেছে অনেক। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলে গেছে। কিন্তু আমরা এখনও বেশ কিছু জায়গায় অনেক আগের মতো রয়ে গেছি। এই সময়ের চ্যালেঞ্জটাকে আমলে না নিয়ে নির্বিকার বসে থাকার সুযোগ নেইÑ এটা উপলব্ধি করতে হবে সব পক্ষকেই। এখন ডিজিটাল বেনো জলে ভেসে যাচ্ছে গোটা দুনিয়া। অন্তর্জালের এই সময়ে ডিজিটাল নো ম্যানস ল্যান্ডে মানুষের বসত। তাবৎ দুনিয়ার সিনেমা, টিভি সিরিজ পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়ায় আজকের তরুণ-তরুণী। দেশি-বিদেশি নানা কনটেন্ট এখন ইচ্ছমতো তার মোবাইল ফোন সেট, টিভি, ল্যাপটপে দেখতে পারছে অবাধে। দুনিয়াজুড়ে এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। আর এর সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাচ্ছে জীবনযাপন, শিক্ষা, অর্থনীতি, প্রশাসন, ব্যবসা-বাণিজ্যের ধরন। আমাদের বাংলাদেশেও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ঢেউ লাগতে শুরু করেছে। তবে প্রশ্ন জাগছে, নতুন প্রেক্ষাপটে সামনে এসে দাঁড়ানো চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় বাংলাদেশের ব্যাংক খাত কতটা প্রস্তুত? ব্যাংকগুলো যদি এখন থেকে সেভাবে নিজেদের যোগ্য এবং প্রস্তুত করে তুলতে না পারে তাহলে আগামি দিনগুলোতে গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী সেবা দিতে ব্যর্থ হবে তারা।  বর্তমানে ব্যাংকিং ও আর্থিক সেবা খাতে প্রচলিত লেনদেন ব্যবস্থায় প্রযুক্তির হাত ধরে পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছে। করোনাকালীন সময়ে সাবধানতা অবলম্বন করতে মানুষ ডিজিটাল লেনদেনে অধিক হারে আকৃষ্ট হয়েছে।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব হচ্ছে আধুনিক স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করে চলমান উৎপাদন ও শিল্পব্যবস্থার স্বয়ংক্রিয় সমসাময়িক সংস্করণ। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী আলোচিত নানা বিষয়ের মধ্যে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বিষয়টি একটি অন্যতম অনুষজ্ঞ। এ বিপ্লব রোবটিক্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ন্যানো টেকনোলজি, কোয়ান্টাম, কম্পিউটিং, ব্যায়োটেকনোলজি, ইন্টারনেট অব থিংস, থ্রিডি প্রিন্টিং, সম্পূর্ণ স্বচালিত যানবাহন ও উদীয়মান প্রযুক্তির যুগান্তকারী যুগ হিসেবে চিহ্নিত। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এখন বিশ্বের দ্বারপ্রান্তে। এর ভিত্তি হিসেবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দ্রব্য ও সেবা উৎপাদন, বিপণন ও ভোগের ক্ষেত্রে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রভাব। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মানুষের চিন্তা জগতে পণ্য উৎপাদন ও সেবা প্রদানে পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। পৃথিবীর গতি প্রকৃতি ও মানুষের জীবন ধারাকে বদলে দিচ্ছে। বিশ্বের রাষ্ট্রনায়কদের সক্ষমতাকে বড় ধরনের পরীক্ষার সম্মুখীন করছে। আঠারো শতকের শেষার্ধে ইংল্যান্ডের যে শিল্প উৎপাদনের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা হয় সেটি হচ্ছে শিল্প বিপ্লব। শিল্প বিপ্লবের ফলে ইংল্যান্ড দেশটি বিশ্বের প্রথম শিল্পোন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হয়। তাই কখনো কখনো ইংল্যান্ডকে ‘পৃথিবীর কারখানা’ বলা হতো। ১৭ শতাব্দীতে বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কার এর মাধ্যমে হস্তচালিত শিল্প ব্যবস্থাকে মেশিন চালিত পদ্ধতিতে রূপান্তরের মাধ্যমে প্রথম শিল্প বিপ্লব শুরু হয়েছিল। ইউরোপ ও আমেরিকায় বস্ত্র শিল্প, লৌহ শিল্প ও কৃষি শিল্পে এর প্রভাব পড়েছিল। তৎকালীন ব্রিটিশ শিল্পে ও এর প্রভাব পড়তে শুরু করে। দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লব ও প্রযুক্তিগত বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল ১৮৭০ থেকে ১৯১৪ সালের মধ্যে। এ কালে জ্বালানির উৎসগুলোতে বিদ্যুৎ, তেল, গ্যাস প্রভৃতি উৎপাদিত হয়। রেলপথ ও টেলিগ্রাফ নেটওয়ার্ক ব্যাপক বিস্তার লাভ করে। মানুষ ও তার চিন্তাভাবনার দ্রুত স্থানান্তরের সুযোগ তৈরি হয়। ক্রমবর্ধমান বৈদ্যুতিকীকরণে কারখানাগুলোতে আধুনিক উৎপাদন লাইনের বিকাশের সুযোগ তৈরি হয়েছে। বিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে অর্থাৎ দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পরবর্তী সময় কম্পিউটার প্রযুক্তি, সেমি কন্ডাক্টর, মাইক্রোচিপস ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রপাতি ও আণবিক শক্তির উদ্ভাবন নিয়ে হয়েছিল তৃতীয় শিল্পবিপ্লব। এ সময়ে আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা, ওষুধ শিল্প ও ব্যায়োটেকনোলজির ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন হয়। ইন্টারনেট, মোবাইল যোগাযোগ এ শিল্পবিপ্লবের ফল। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব বা ইন্ডাস্ট্রি- ৪.০০ হচ্ছে আধুনিক স্মার্ট প্রযুক্তির ব্যবহার। দ্রব্য উৎপাদনের ও সেবা প্রদানে বিপণন ও ভোগের ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার। শুধু যান্ত্রিক কৌশল নয়; কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, উচ্চতর পর্যায়ের তথ্যপ্রযুক্তি, রোবটিক্স ও কম্পিউটারের উচ্চতর প্রযুক্তির ব্যবহার এ বিপ্লবের অন্যতম অনুষঙ্গ।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধির ঊর্ধ্বমুখী গতি লক্ষ করা গেলেও বিশ্ব প্রযুক্তির সাথে তাল মিলাতে ও বেকারত্ব হ্রাস, বৈষম্য ও দুর্নীতি দূর করতে এবং ব্যাংকিং সেক্টরে শৃঙ্খলা আনয়নে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। মানুষের দৈনন্দিন পথ চলায় ব্যাংক ও আর্থিক খাত গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সময়কালে এ খাতের প্রযুক্তিভিত্তিক উন্নয়নে গ্রাহকদের প্রযুক্তির সাথে সুপরিচিত করাও একটি চ্যালেঞ্জ। উন্নত ব্যাংকিং সেবা ও ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য শিক্ষিত ও জনশক্তি তৈরি করাও চ্যালেঞ্জ। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব প্রসার লাভ করলে শ্রমশক্তির চাহিদা যে হ্রাস পাবে শুধু তা নয় বরং অদক্ষ শ্রমিকদের জন্য বর্তমানে বিদ্যমান পেশাগুলোতে চাহিদা দ্রুত কমে আসবে। অন্য দিকে উচ্চ শিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন এমন পেশায় চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। তাই দ্রুত ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করতে কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন জনশক্তির চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে ব্যাংকিং খাতের ঋণ আদায়ের গতি ও খেলাপি গ্রাহকদের থেকে অর্থ আদায়ের জন্য প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উন্নত দেশগুলোর সাথে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের প্রযুক্তি বৈষম্য দূর করতে হবে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, ভবিষ্যতে মানুষকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যন্ত্রের সাথে সহাবস্থান করতে হবে। ফলে মানুষের কর্মক্ষেত্র সঙ্কুচিত হবে, অক্ষসমতা বৃদ্ধি পাবে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বৈদেশিক বিনিয়োগ কমবে ও প্রযুক্তি জ্ঞানের ক্ষেত্রে বৈষম্য বাড়বে। এ জন্য আমাদের কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থাকে তথ্যপ্রযুক্তির আদলে তৈরি করতে হবে। অনলাইন লেনদেনের ক্ষেত্রে জটিলতা দূর ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে ব্যাংক ও আর্থিক সেবা খাতে প্রযুক্তির হাত ধরে বৈপ্লবিক পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। লেনদেন করতে এখন ব্যাংকে সশরীরে না গিয়ে ঘরে বসে স্মার্টফোনেই কাজ করা যায়। বর্তমানে চালু হচ্ছে ওপেন ব্যাংকিং অর্থাৎ অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (এপিআই)। ভোক্তারা একটি অ্যাকাউন্ট থেকেই ব্যাংকিং ও বিনিয়োগ সেবা গ্রহণের সুযোগ পাবেন। ডিজিটাল টেকনোলজির মাধ্যমে (ডিএলটি) ব্লক চেইন নেটওয়ার্ক ভোক্তাদের কাছে আস্থা ও স্বচ্ছতা তৈরি করেছে। তবে ব্যাংকিং পরিষেবায় উন্নতি করতেও ভোক্তাদের আরো দ্রুত সেবা দিতে এবং এ খাতের দুর্নীতির সুযোগ বন্ধ করতে, ঋণ আদায়ের গতি ফিরিয়ে আনতে তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। ব্যাংকিং খাতে সঠিক ডকুমেন্টেশন, ফেইক ডকুমেন্ট ডিটেক্ট এবং ডকুমেন্টস প্রিজারভেশনের ক্ষেত্রে প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে কিভাবে ঝুঁকি কমানো যায় তা নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদারকি বাড়ানো উচিত। আমাদের ভূমি ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজ করতে হবে। নামজারি, রেজিস্ট্রেশন, খাজনা প্রদান ইত্যাদির ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার জোরদার করা উচিত, যার ফলে ব্যাংক বিনিয়োগ ও মর্গেজকৃত সম্পত্তি সার্চিং ও যাচাই-বাছাইয়ে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে নতুন সম্ভাবনার বিপরীতে ব্যাংকিং খাতে টানা ঝুঁকি ও প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। পাসওয়ার্ড হ্যাকিং, এটিএম বুথ থেকে অর্থ চুরি রোধসহ দেশীয়- আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফান্ড হস্তান্তরের বিষয়গুলো গুরুত্বসহ দেখা উচিত। অর্থ কর্মকাণ্ডে ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল রূপান্তর হচ্ছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের বুনিয়াদ। ব্যাংকিং খাতে ডিজিটাল রূপান্তরের সাথে গ্রাহকদের অন্তর্ভুক্তি করানোসহ সমাজকে প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে অভ্যস্ত করা, অদক্ষ শ্রমিকদের চাকরিচ্যুতি ও কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন জনশক্তি প্রাপ্তি, শিল্প বিপ্লবের সুফল পাওয়ার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জব পলিসি, প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নিরাপত্তার জন্য নিয়মনীতির সংস্কার করতে হবে। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে মানুষের কর্মক্ষমতা বাড়ানো যায় তার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। বর্তমানে বাংলাদেশে তরুণের সংখ্যা পাঁচ কোটি, যা মোট জনশক্তির ৩০ শতাংশের বেশি। আগামী ৩০ বছরে এ তরুণেরা উৎপাদনশীল খাতে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুফল ভোগের বড় হাতিয়ার। ব্যাংকিং বা আর্থিক খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার (ফিনটেক) ভবিষ্যতে প্রথাগত ব্যাংকিং পরিষেবাকে অনেকটা সঙ্কুচিত করে দেবে। ছোট আকারের ফিনটেক প্রতিষ্ঠান অনেক কম খরচে বেশি দক্ষতার সাথে আর্থিক সেবা দিতে সমর্থ হবে। ডিজিটাল যুগে কার্যকর প্রযুক্তি পণ্য ও সেবার চাহিদা ও যোগানের মধ্যে সূক্ষ্ম সমন্বয় করতে সক্ষম হবে। প্রযুক্তির আবিষ্কারের সাথে ব্যাংক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে। পণ্য ও সেবা উৎপাদন বণ্টনে ব্যয় অভাবনীয়ভাবে হ্রাস পাবে। কারণ মানুষকে সহায়তা করবে মেশিন। স্বল্প সময়ে অধিক উৎপাদন করা সহজ হবে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে। যেসব ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রযুক্তিকে যত দ্রুত কাজে লাগাতে পারবে তারা তত দ্রুত এর সুফল ভোগ করবে।

২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্য নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে এ নিয়ে কাজ শুরু করেছে সরকার। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, জীবনযাপন সব কিছুতেই যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুফলগুলো ভালোভাবে আত্তীকরণের মাধ্যমে নতুন সময়, নতুন প্রেক্ষাপটের আলোকে সর্বোত্তম গ্রাহকসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে নানা রকম চ্যালেঞ্জ থাকবে। আমাদের প্রত্যাশা, ব্যাংকগুলো সেই চ্যালেঞ্জগুলো সুন্দরভাবে মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে। বিদ্যমান সুযোগ ও সম্ভাবনাগুলোকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য সমযোপযোগী পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তার বাস্তবায়নে মেধা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, সততা, নিষ্ঠা এবং উদ্ভাবনী ক্ষমতার সর্বোত্তম প্রয়োগের মাধ্যমে ব্যাংকগুলো আরো বহুদূর পর্যন্ত এগিয়ে যাবে, আমার দৃঢ় বিশ্বাস। অর্জিত সাফল্যের ভিত্তিতে আগামী দিনের সকল ধরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দেশ ও জাতির কল্যাণে আধুনিক যুগোপযোগী ব্যাংকিং সেবার প্রসার ঘটাবে এবং দিনে দিনে সাফল্য ও সমৃদ্ধির নতুন নতুন দৃষ্ঠান্ত স্থাপন করবে  ব্যাংকিং খাত- তেমন দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে  সবাইকে একযোগে সর্বোচ্চ উদ্যোগী হয়ে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সততা ও নিষ্ঠার সাথে অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ মানেই আধুনিক কারিগরী প্রযুক্তির সর্বাত্মক ব্যবহার নয়। একজন মানুষ সে নারী কিংবা পুরুষ হোক না কেন তার সাজসজ্জা পোশাক-আশাক, চলন-বলন কথাবার্তা যতই আধুনিক, ধোপদুরস্ত স্মার্ট হলেই তাকে পরিপূর্ণ স্মার্ট হিসেবে বিবেচনা করা যায় না। যদি তার চিন্তাভাবনা, মন-মানসিকতা, রুচিবোধ, জীবনদর্শন, সৃজনশীলতা ইত্যাদি স্মার্ট না হয়, তাহলে তাকে কোনোভাবেই স্মার্ট মানুষ বলা যাবে না। এখানে স্মার্টনেস বলতে আমরা বুঝবো পুরনো গতানুগতিক চিন্তাভাবনা, জীবনবোধ, মনমানসিকতা ঝেড়ে ফেলে কুসংস্কার, গোড়ামিমুক্ত মানবিক জীবনদর্শন অনুসরণ। ব্যক্তিজীবনে, পরিবারে, সমাজে এবং রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় এখনও অনেক পুরনো চিন্তাভাবনা, দর্শন, সংস্কার, ধ্যান-ধারণা জেঁকে বসে আছে। বাইরে থেকে দেখে যতই আধুনিক যুগোপযোগী মনে হোক না কেন ভেতরে ভেতরে সেখানে দীর্ঘদিন ধরে লালিত চেতনা ও নীতিকে বহন করা হচ্ছে। যে কারণে এখনও সমাজে উপনিবেশিক প্রশাসনিক, বিধিবিধান, বিচারিক আইন-কানুন, বাল্যবিবাহ, প্রাচীন রীতিনীতি ও সংস্কার অনুসরণ প্রতিনিয়ত চরম সংকট ও অস্বস্তির কারণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার ও কলামিস্ট

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় খবর